শিক্ষা

ইতিহাস নিয়ে পিএইচডি করার ইচ্ছা জেলবন্দী মাওবাদী নেতার, মৌখিক পরীক্ষা দিয়ে গেলেন বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ে

ফোকাস বেঙ্গল ডেস্ক,বর্ধমান: হুগলির সংশোধনাগারে বসেই প্রাক্তন মাওবাদী শীর্ষ নেতা অর্ণব দাম ওরফে বিক্রম এবার ইতিহাসে পিএইচডি করার প্রস্তুতি নিতে শুরু করলো। বুধবার সকালে হুগলি সংশোধনাগার কর্তৃপক্ষের নজরদারিতে বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে অর্ণব ইন্টারভিউ দিয়ে গেলেন। তার আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের যাবতীয় নিয়ম মেনে আবেদন করার কাজ সম্পূর্ন করেছিলেন জেলবন্দী এই প্রাক্তন মাওবাদী নেতা। বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, প্রায় ২২০জন প্রার্থী ইতিহাস নিয়ে পিএইচডি করার আবেদন জানিয়েছেন এবছর। তার মধ্যে হুগলি সংশোধনাগারে বন্দী অর্ণব দাম এর নাম রয়েছে। সংশোধনাগার কর্তৃপক্ষই বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয় কে চিঠি দিয়ে এব্যাপারে জানিয়েছিল কয়েকমাস আগে।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, এদিন সকালে বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে এসে অর্ণব দাম ইন্টারভিউ দিয়ে গেছেন। জুলাই মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে মধ্যে উত্তীর্ণ সফল প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করা হবে। এর আগে কোনও জেলবন্দী আসামি  বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি করার আবেদন জানিয়েছেন কিনা সে ব্যাপারে কোন তথ্য নেই বলেই বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে। স্বাভাবিকভাবেই বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে এটি একটি নজিরবিহীন ঘটনা বলেই মনে করা হচ্ছে। পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে আরো জানা গেছে, মাওবাদী এই পিএইচডি প্রার্থী সফল হলে পরবর্তীতে আর পাঁচজনের মতোই বিশ্ববিদ্যালয়ের যাবতীয় নিয়ম মেনেই অধ্যায়ন এর কাজ চালিয়ে যেতে হবে। নূন্যতম উপস্থিতিও নজর রাখা হবে।

প্রসঙ্গত, জেল থেকে পরীক্ষা দিয়েই এর আগে স্টেট এলিজিবিলিটি টেস্ট(সেট)-এ সফলভাবে উত্তীর্ণ হন এক সময় রাজ্যের শীর্ষ এই মাওবাদী নেতা অর্ণব দাম ওরফে বিক্রম। রাজ্য কারা দফতর সূত্রে খবর, এর আগে কেউ জেলবন্দি অবস্থায় এ ধরনের কোনও পরীক্ষায় সফল হননি। ২০১০ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি শিলদা ক্যাম্পে মাওবাদী হামলায় ২৪ জন ইএফআর-কর্মী মারা যান। সেই মামলায় ২৩ জন অভিযুক্তের মধ্যে অর্ণব দাম ওরফে বিক্রম ছিলেন অন্যতম।

কলকাতার গড়িয়ার বাসিন্দা অবসরপ্রাপ্ত বিচারক এসকে দামের ছেলে অর্ণব ছোট থেকেই মেধাবী বলেই পরিচিত। তিনি মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে খড়্গপুর আইআইটি-থেকে পড়াশোনা করেছেন। কিন্তু তিনটি সেমেস্টারের পরেই হঠাৎই খড়্গপুর আইআইটির ক্যাম্পাস ছেড়ে নিরুদ্দেশ হয়ে যান অর্ণব। সিপিআই (মাওবাদী)-এর রাজনৈতিক মতবাদে আকৃষ্ট হয়ে তিনি ১৯৯৮ সালে যোগ দিয়েছিলেন ওই সংগঠনে। এ কথা যদিও পরে জানা যায়।

আইআইটির ক্যাম্পাস থেকে পুরুলিয়া-ঝাড়খণ্ডের পাহাড়ে-জঙ্গলে হাতে একে-৪৭ নিয়ে ডেরা বাঁধেন অর্ণব। পুলিশ সূত্রে খবর, নিহত মাওবাদী পলিটব্যুরো নেতা কিষেনজির অত্যন্ত স্নেহের পাত্র ছিলেন অর্ণব। লালগড় আন্দোলনের সময় অযোধ্যা-বাঘমুন্ডির পাহাড়-জঙ্গলে তাঁর গেরিলা বাহিনী নাজেহাল করে দিয়েছিল যৌথ বাহিনী থেকে শুরু করে গোয়েন্দাদের। শিলদা ইএফআর ক্যাম্পে হামলা থেকে শুরু করে একাধিক মাওবাদী হামলায় অভিযুক্ত অর্ণব ২০১২ সালে হঠাৎই ধরা পড়েন আসানসোল থেকে। জেলবন্দি হওয়ার পর থেকেই ওই গেরিলা নেতা অসম্পূর্ণ থাকা উচ্চশিক্ষায় মন দেন। জেল থেকেই পরীক্ষা দিয়ে স্নাতক হন। প্রায় ৭০ শতাংশ নম্বর নিয়ে সম্পূর্ন করেন স্নাতকোত্তর পাঠ।
তিনি জেল কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছিলেন, অধ্যাপনা করতে চান। তাই ন্যাশনাল এলিজিবিলিটি টেস্ট(নেট)-এ বসার আবেদন জানিয়েছিলেন। কিন্তু প্রশাসনিক জটিলতায় শেষ পর্যন্ত তিনি সেই পরীক্ষা দিতে পারেননি। সেইসময় প্রায় ৪০ বছর বয়সী প্রাক্তন ওই মাওবাদী নেতা এর পর সেট পরীক্ষা দেওয়ার আবেদন জানান। জেল কর্তৃপক্ষের অনুমতি পেয়ে অবশেষে সেই পরীক্ষা দেন অর্ণব। হুগলির জেলে বসেই অর্ণব তাঁর পাশ করার খবর পান। মার্কশিটও পেয়ে যান হাতে। সেই মার্কশিট তিনি বাড়িতে স্পিড পোস্টে পাঠিয়েও দেন। এরপর মানবাধিকার সংগঠন এপিডিআরের সদস্য রঞ্জিৎ শূর সরকারের কাছে আবেদন জানান, “অর্ণব গবেষণা করতে চায়। ওর মতো রাজনৈতিক বন্দিদের অবিলম্বে মুক্তি দেওয়া হোক। আর ততদিন সরকার নিশ্চিত করুক, যাতে অর্ণব গবেষণা-সহ ভবিষ্যতের পড়াশোনোর সমস্ত সুযোগ পান।”