পারুল খামারিয়া, রানাঘাট,নদিয়া: দিকে দিকে যেখানে ‘মেরি ক্রিসমাস বা বড়দিন’ পালনের হিড়িক পড়েছে, সেখানে নিজের সংস্কৃতি ও ধর্ম রক্ষার জন্য তুলসী গাছের পুজোর আয়োজন করল ‘দেশের মাটি কল্যাণ মন্দির’। বুধবার সংগঠনের পক্ষ থেকে ‘তুলসী পূজন দিবস’ পালন করা হয় নদিয়া জেলার বীরনগরের জয়পুর গ্রামে। এদিন সকাল থেকেই গ্রামে ছিল উৎসবের বাতাবরণ। গত তিন বছর ধরে দেশের মাটি কল্যাণ মন্দির-এর পক্ষ থেকে তুলসী পুজো করা হচ্ছে। নতুন তুলসীগাছ লাগিয়ে তাতে দুধ মিশ্রিত জল ঢালা হয়। নৈবেদ্য সাজিয়ে পুজো করা হয়। পাশাপাশি চলে ভগবান কৃষ্ণ-এর নাম গান। দেবী তুলসী হলেন ‘কৃষ্ণ প্রেয়সী’।
পৌরানিক কাহিনি অনুসারে জলন্ধর পত্নী বৃন্দা দেহত্যাগ করলে তার চুল থেকে জন্ম নেয় একটি গাছ – তুলসী। এই তুলসী গাছ ঔষধি গুণে ভরপুর। বাতাসকে বিশুদ্ধ করতে এর জুড়ি মেলা ভার। পাশাপাশি নিজের সংস্কৃতিকে বিশুদ্ধ করার কাজেও তুলসীগাছের গুরুত্ব অপরিসীম। বিধর্মীরা যেখানে কোটি কোটি গাছ কেটে, তাতে টুনি লাইট জ্বালিয়ে উৎসব পালন করছেন বিশ্ব জুড়ে, সনাতনীরা সেখানে গাছের পুজো করে, গাছকে রক্ষা ক’রে ‘ধর্ম’ পালন করছেন। বিধর্মী সংস্কৃতির গ্রাসে ধীরে ধীরে আক্রান্ত হচ্ছে বাঙালি হিন্দুরাও। সান্টা আজ ঢুকে গেছে বাঙালির ঘরে ঘরে। লাল পোশাকী সান্টা শুধুই উপহার দেয় না, করে ধর্ম ও সংস্কৃতির বিনাশ। এই আগ্রাসী বিধর্মী সংস্কৃতির গ্রাস থেকে নিজের ধর্ম ও সংস্কৃতিকে রক্ষা করার জন্য তাই তুলসী পুজোর আয়োজন করেছে ‘দেশের মাটি কল্যাণ মন্দির’।
আজকের এই তুলসী পূজন সম্পর্কে ‘দেশের মাটি কল্যাণ মন্দির’-এর প্রতিষ্ঠাতা সদস্য মিলন খামারিয়া বলেন, বিধর্মীদের ধর্ম ও সংস্কৃতির গ্রাসে আজ আমাদের ধর্ম ও সংস্কৃতি আক্রান্ত। অন্যের সংস্কৃতি পালন করার মধ্যে ‘পরানুকরণ’ আছে কিন্তু নিজের সংস্কৃতি পালন করার মধ্যে আছে গৌরব। বিভিন্ন ষষ্ঠী পুজো, গারসি, ইতুপুজো ভুলে বাঙালি আজ ‘সান্টা’য় আক্রান্ত হচ্ছে। ধর্ম পরিবর্তন করার প্রাথমিক কৌশল হল সংস্কৃতির উপর আঘাত করা। বিধর্মীরা সেটাই করছে। আমরা তাকে আটকাতে চাই। গাছ কেটে নয়, গাছ রক্ষা করে হাজার হাজার বছর ধরে সনাতনীরা নিজের ধর্ম পালন করে আসছে। তাই প্রতিটি বাড়িতে তুলসী গাছ থাকে। তুলসী গাছ শুধু অক্সিজেন দিয়ে বাতাস বিশুদ্ধ করে না, আজকাল সংস্কৃতি বিশুদ্ধ করার কাজও করছে তুলসী গাছ। পাড়ায় পাড়ায় বড়ো করে হোক তুলসী পুজো। তাতে বাতাসের পাশাপাশি সংস্কৃতিও বিশুদ্ধ হবে।
এদিনের এই অনুষ্ঠানে পৌরহিত্য করেন মোহন্ত শর্মা। অনুষ্ঠানের সহযোগিতায় ছিলেন নিভা খামারিয়া, রেখা শর্মা, প্রিয়া মোদক, মিন্টু শর্মা, নিতাই বিশ্বাস, বলাই মোদক ও আরও অনেকে। এবং অনুষ্ঠানের সার্বিক পরিকল্পনায় ছিলেন ড. কল্যাণ চক্রবর্তী। এদিন তুলসী গাছ প্রদক্ষিণ করে গাছে জলদান, প্রণাম ও হরিনাম সংকীর্তন করা হয়। পুজো শেষে সবাইকে প্রসাদ দেওয়া হয়।