সঙ্গীতা চৌধুরী (চ্যাটার্জী): এই জগৎ সংসারে সবই মায়া। এমনি কথা প্রচলিত। আর এই সমস্ত মায়ার যিনি রূপকার, দেবী – তিনিই মহামায়া। মহালয়ার মধ্যে দিয়ে পিতৃ পক্ষের অবসান ও দেবী পক্ষের শুরু হয়। আশ্বিন মাসের শুক্লপক্ষ তিথিকে বলা হয় ‘দেবীপক্ষ’। হিন্দুশাস্ত্র অনুযায়ী, এদিন কৈলাসের শ্বশুরালয় ছেড়ে সন্তানদের নিয়ে পৃথিবীতে আগমন করেন দেবী দুর্গা। এদিন অমাবস্যার শুরু। পরবর্তী পূর্ণিমায় কোজাগরী লক্ষ্মীপূজার মধ্য দিয়ে শেষ হয় দেবীপক্ষ। মহালয়ার পাঁচ দিন পর মহাষষ্ঠীতে শুরু হয় মূল দুর্গোৎসব। চলে ন’দিন। যাকে বলে নবরাত্রি। মহামায়া এই ন’দিনে ন’টি রূপে পূজিত হন। আমরা মহামায়া কেই দুর্গা রূপে পূজা করি।
কিন্তু মা দুর্গার মুখ কখনো ভালো করে লক্ষ্য করে ক’জন দেখেছেন? যদি লক্ষ্য করে থাকেন তাহলে দেখবেন মায়ের কপালের নীচে নাকের কাছে একটা চিহ্ন আছে। কী সেই চিহ্ন? আর কী বা তার অর্থ? জানলে অবাক হয়ে যাবেন। আজকের এই প্রতিবেদনে সেই কথাই আলোচনা করবো।
মা দুর্গার কপাল ও নাকের মাঝামাঝি থাকা চিহ্নটি আসলে একটি উর্ণনাভ অর্থাৎ মাকড়সার চিহ্ন। ডাকের সাজের প্রতিমায় এই চিহ্ন সবচেয়ে বেশি প্রকট থাকে, চোখে পড়ে। এই চিহ্ন আসলে কীসের চিহ্ন? কেনই বা এই চিহ্ন মায়ের মুখে থাকে? আসলে এই উর্ণনাভ মহামায়ার একটি প্রতীক। হ্যাঁ শুনে বেশ অবাক হচ্ছেন, তাই তো? কিন্তু এটাই সত্য। হয়ত আপনারা দেখে থাকবেন যে দুর্গা পুজোর সময় বাড়িতে মাকড়সা দেখতে পেলে অনেক সময়ই ঠাকুমা দিদিমারা মাকড়সা তাড়াতে মানা করেন। কারণ বলা হয় মাকড়সার রূপে দেবীর আগমন হয়েছে গৃহে। কেন মাকড়সার রূপকে দেবীর রূপ বলে ধরা হয়? কেনই বা মায়ের মুখে চিত্রিত আছে মাকড়সা। সকল প্রশ্নের সমাধান দেবো আজকে।
উর্ণনাভ বা মাকড়সাকে দেবীর রূপ হিসেবে কল্পনা করার পেছনে আছে এক বিশাল তত্ত্ব যা হয়তো অনেকেই জানেন না। আজকের প্রতিবেদনের সে কথাই বলবো। আসলে মায়ের রূপের মধ্যে এই উর্ণনাভের চিহ্ন আসলে মায়া কে চিত্রিত করে। মাকড়সার জাল বোনা থেকে শিকার, এই সবই একটা ছল। মায়ার জাল বিছিয়ে মাকড়সা তার শিকার করে। দেবীর মুখে মাকড়সার চিহ্ন আসলে বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ডের সমস্ত মায়ার জালের যিনি সৃষ্টি করেছেন অর্থাৎ তিনিই যে মহামায়া, তাই বোঝানো হয়েছে। তাই মাকড়সা আসলে গভীর প্রতীকবহ একটি চিহ্ন যা মায়াকেই চিত্রিত করে।
এই মাকড়সা যেমনভাবে নিজে জাল বিস্তার করে কিন্তু নিজে সেই জালের মধ্যে আবদ্ধ হয় না, ঠিক সেইরকম ভাবে মহামায়াও মায়ার সৃষ্টি করে চলেছেন। কিন্তু মায়া সর্বদাই মহামায়ার অধীন। মহামায়া কখনোই মায়ার মধ্যে আবদ্ধ নন।মহামায়া হলেন স্বয়ং ব্রহ্ম। তিনি মায়া বিস্তার করেছেন। তিনি মায়ার মধ্যেই আছেন কিন্তু সব মায়ার ঊর্ধ্বে তিনি। অর্থাৎ মায়া কোনো প্রভাব ফেলতে পারেনা মহামায়ার ওপর। মায়ের মুখে উর্ণনাভ চিহ্ন সৃষ্টির মধ্য দিয়ে আসলে এই মায়ার গভীর তত্ত্বকেই তুলে ধরা হয়।
এখন থিম পুজো এবং আধুনিকতার চক্করে ডাকের সাজের মূর্তি খুব কম চোখে পড়ে। কিন্তু তবু যদি কোন মণ্ডপে গিয়ে আপনি ডাকের সাজের মূর্তি দেখেন তাহলে দেবীর মুখের দিকে একটু ভালো করে লক্ষ্য করবেন। মায়ের মুখ ভালো করে দেখলেই উর্ণনাভের অবস্থান লক্ষ্য করতে পারবেন। মা যে মহামায়া রূপে আমাদের সকলকে মায়ার বন্ধনে আবদ্ধ করেছেন তা অনুভব করেই মাকে প্রণাম করবেন। তাহলে মায়ের কৃপা লাভ সহজ হবে।
তথ্য সংগৃহীত: ইন্টারনেট