ক্রাইম

মাওবাদী হুমকি চিঠি পেলেন ভাতার গ্রামীণ হাসপাতালের চিকিৎসক, সঙ্গে তাজা কার্তুজ, চাঞ্চল্য

ফোকাস বেঙ্গল ডেস্ক, ভাতার: পূর্ব বর্ধমানের ভাতার গ্রামীণ হাসপাতালের দন্ত চিকিৎসক অপর্ণা মুখার্জির উদ্দেশ্যে মাওবাদী চিঠি ও সঙ্গে তাজা কার্তুজ পাঠানোর ঘটনায় তীব্র চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। ইতিমধ্যেই এব্যাপারে রাজ্য স্বাস্থ্য দপ্তর থেকে জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক কে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছে। সেই অনুযায়ী একজন চিকিৎসক কে মাওবাদী হুমকি চিঠি পাঠানোর ঘটনার তদন্তের জন্য জেলা পুলিশ সুপার এবং জেলাশাসক কে আবেদন জানিয়েছেন মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক। পাশাপাশি ভাতার থানায় এই ঘটনার অভিযোগ দায়ের করেছেন খোদ চিকিৎসক অপর্ণা মুখার্জি।

মঙ্গলবার এই চিঠি কাণ্ডের পরই বুধবার সকালে ভাতার হাসপাতালে সরজমিনে তদন্তে আসেন জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক জয়রাম হেব্ররম ও সহকারী সুবর্ণ গোস্বামী সহ একটি টিম। সেখানে তারা ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক সংঘমিত্রা ভৌমিক নিয়ে বৈঠক করেন। হাসপাতালে উপস্থিত হন ভাতারের বিধায়ক মানগোবিন্দ অধিকারীও। জয়রাম হেমব্রম বলেন,’ চিঠিটি দরজার নীচ দিয়ে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে প্রাথমিক ভাবে মনে করা হচ্ছে। ইতিমধ্যেই গোটা বিষয়টি জানানে হয়েছে ভাতার থানায়। পুলিশ জানিয়েছে চিঠির সঙ্গে থাকা কার্তুজটি সক্রিয়। গোটা ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই এই ঘটনায় ব্যাপক আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে হাসপাতালের অন্যান্য চিকিৎসক ও কর্মীদের মধ্যে।

জানা গেছে, সক্রিয় একটি কার্তুজ সহ লাল কালিতে লেখা একটি চিঠি মঙ্গলবার হসপিটালের বহির্বিভাগে চেম্বার করার জন্য এসে দরজা খুলেই দেখতে পান দন্ত চিকিৎসক অপর্ণা মুখার্জি। চিঠির প্রথমে চিকিৎসকের পরিবারের সুস্থতা কামনা করে লেখা হয়েছে, ‘ বুধবার অর্থাৎ ৪তারিখের মধ্যে ভাতার মাওবাদী কমিটির সাংগঠনিক শক্তি বৃদ্ধির জন্য আপনাকে পাঁচ লক্ষ টাকা দিতে হবে। যদিও এই টাকা আপনার কাছে নগণ্য, তাও যদি টাকা দিতে সংকোচবোধ করেন বা প্রশাসনের কাছে জানান তাহলে আপনি ও আপনার পরিবার ভয়ংকর পরিণতির জন্য তৈরি থাকবেন। পরের বুলেট টি তৈরি রাখা আছে আপনাদের জন্য। আশা করি বুঝতে পারছেন কি বলতে চাইছি। টাকা পেলে কথা দিচ্ছি আপনার কোনো ক্ষতি করবো না। ৪ তারিখ বুধবার টাকা নিয়ে হসপিটালে আসবেন, আমাদের লোক টাকা আনতে আপনার কাছ যাবে।’ চিঠির নিচে প্রেরক হিসেবে তপন মাহাতো নামে এক ব্যক্তির নাম লেখা রয়েছে।

চিকিৎসক অর্পণা মুখার্জি এই হুমকি চিঠি পাওয়ার পরই ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিককে বিষয়টি জানান। পরে লিখিতভাবে ভাতার থানায় অভিযোগ দায়ের করেন । পুলিশ তদন্ত শুরু করেছে। তবে পুলিশের প্রাথমিক অনুমান ভয় দেখানোর জন্যই এই রকম মাওবাদী নাম দিয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে। যদিও চিঠি কাণ্ডের ২৪ ঘন্টার মধ্যেই সরাসরি হাসপাতালে হাজির হলেন জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক সহ স্বাস্থ্য দপ্তরের একটি দল। স্বাভাবিকভাবেই মঙ্গলবারের ঘটনাটি যে হালকা ভাবে নিচ্ছে না প্রশাসন তা একপ্রকার পরিষ্কার।

পাশাপাশি মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক জানান, ‘ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিককে বলা হয়েছে এক সপ্তাহের মধ্যে হাসপাতালে সিসি ক্যামেরা লাগানোর জন্য।পাশাপাশি হাসপাতালের নিরাপত্তার উপরেও জোর দেওয়া হচ্ছে। এমনিতেই হাসপাতালে সব সময়ে সিভিক ভলেন্টিয়ার থাকেন। এখন একজন পুলিশ অফিসারও থাকবেন। চিকিৎসক ও কর্মীদের নিরাপত্তার বিষয়টি মাথায় রেখে ভিজিটিং কার্ড চালুর বিষয়টি নিয়েও আলোচনা করা হয়েছে এদিন।’ যদিও বিধায়ক মানগোবিন্দ অধিকারী বলেন, ‘এসব ফালতু চিঠি। এখানে মাওবাদীদের কোন সংগঠন নাই।’ অন্যদিকে এই বিষয়ে দন্ত চিকিৎসক অপর্ণা মুখার্জি কিছু বলতে অস্বীকার করেছেন।

Recent Posts