ফোকাস বেঙ্গল ডেস্ক,বর্ধমান: মহা ষষ্ঠীর রাত সবে পেরিয়েছে, দর্শনার্থীদের আনাগোনা কিছুটা কমলেও তখনও পুজো মণ্ডপে স্থানীয় অনেক মানুষ ঘোরাফেরা করছেন। চারদিকে আলো। মহা সপ্তমীর বোধনের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন পুজো কমিটির লোকজন। রাত প্রায় তিনটে। আচমকাই কুকুরের চিৎকারে হতচকিত হয়ে পড়েন পুজো কমিটির কয়েকজন।
কি ব্যাপার, কেন চিৎকার করছে কুকুর? মণ্ডপের পিছনে নজর দিতেই পিলে চমকে যাওয়ার উপক্রম তাদের। ততক্ষণে সবাই সবাইকে সতর্ক করতে চিৎকার চেঁচামেচি শুরু করে দিয়েছেন। এ তো সাক্ষাৎ যমদূত দাঁড়িয়ে দুয়ারে। রীতিমত সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে ফণা তুলে গর্জন করছে মূর্তিমান বিসোধরটি। কিভাবে মোকাবিলা করা যায় পরিকল্পনা করার মাঝেই কিন্তু ঘটে গেল মর্মান্তিক পরিণতি। প্রায় সাড়ে চার ফুট লম্বা ভয়ানক বিষধর গোখরোর এক ছোবলেই মারা গেল নিরীহ একটা কুকুর।
হাড় হিম করা ঘটনাটি ঘটেছে বর্ধমানের বাজেপ্রতাপপুর মালিরবাগান সোমনাথ স্মৃতি সংঘ ক্লাবের দুর্গাপুজোর মণ্ডপের পিছনে। সঙ্গে সঙ্গে খবর দেওয়া হয় বনদপ্তরে। বন দপ্তর থেকে উদ্ধারকারী দলের কর্মীরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে বেশ কিছুক্ষণের চেষ্টায় উদ্ধার করেন গোখরো সাপ টিকে। উদ্ধারকারী দলের সদস্য বাপন বৈরাগ্য বলেন,’ খুবই দুঃখজনক ঘটনা। সাপটি কে দেখে এলাকার কয়েকটা কুকুর নিজেদের স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিতে চিৎকার করতে শুরু করে। সাপটিকে না মেরে এলাকার যুবকরা খুবই বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে ব্যবস্থা নিয়েছেন। ওপর থেকে একটা ঝুড়িতে দড়ি লাগিয়ে সাপটির ওপর চাপা দিয়ে দেয় তারা।
কিন্তু তার আগেই একটা কুকুর সাপটির খুব কাছাকাছি চলে যাওয়ায় ভয়ানক পরিণতি ঘটে গেল। মনে হয় সাপটিও নিজের প্রাণ বাঁচানোর চেষ্টা করছিল। ছোবল মারার আধ ঘন্টার মধ্যেই মারা যায় কুকুরটি। তবে আরো বড় দুর্ঘটনার হাত থেকে স্থানীয়দের উপস্থিত বুদ্ধির জন্যই রেহাই পেয়েছেন অনেকে। সাপটিকে পড়ে ফের প্রকৃতিতে ছেড়ে দেওয়া হবে। যদিও এই ঘটনায় পুজোর আবহেই এলাকায় আতংকের পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে কিছুটা।
ক্লাব সম্পাদক শ্যামসুন্দর কুন্ডু জানিয়েছেন,’ আমরা কয়েকজন রাতে মণ্ডপেই ছিলাম। হটাৎ ভোর তিনটে নাগাদ পাড়ার কুকুরগুলো ত্রাহি চিৎকার করতে শুরু করে। প্রথমে এদিক ওদিক কিছু নজরে না আসায় মণ্ডপের পিছনে যেতেই চমকে উঠি সবাই। একটা বিশাল গোখরো সাপ সোজা হয়ে ফণা তুলে একটা বাড়ির দেওয়ালের গায়ে দাঁড়িয়ে আছে। কুকুরগুলো সেই দেখেই চিৎকার করছে। পাড়ার অনেকেই ঘুম থেকে উঠে ততক্ষণে জড়ো হয়ে যায়। একটা কুকুর সাপটার খুব কাছে চলে যাওয়ায় তাকে ছোবল মারে দেয় সাপটা। এরপর একটা ঝুড়িতে লম্বা দড়ি বেঁধে ঘরের চালের ওপর থেকে ধীরে ধীরে নামিয়ে সাপটির ওপর চাপা দিয়ে দেওয়া হয়। বর্ধমান থানায় খবর দিলে সেখান থেকে বন দপ্তর কে জানায়। উদ্ধারকারী দলের কর্মীরা এসে সাপটিকে নিয়ে যায়।’