বর্ধমান মেডিক্যালের মর্গে ডোমেদের বিরুদ্ধে জুলুমবাজি, তোলাবাজির অভিযোগ, অভিযোগ গেল মুখ্যমন্ত্রীর কাছে

Souris  Dey

Souris Dey

ফোকাস বেঙ্গল ডেস্ক,বর্ধমান: বর্ধমান মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের মর্গে ময়না তদন্তের জন্য নিয়ে আসা মৃতদেহ কাঁটাছেঁড়া করে পরীক্ষার পর দেহ সেলাই করে মৃতের পরিজনদের হাতে তুলে দিতে কর্তব্যরত ডোমেরা অবৈধভাবে হাজার হাজার টাকা দাবি করছে বলে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে অভিযোগ জানালেন সম্প্রতি দুর্ঘটনায় মৃত এক ব্যক্তির ছেলে। আর এই ঘটনায় রীতিমত আলোড়ন ছড়িয়েছে জেলা প্রশাসনিক মহল থেকে জেলা জুড়ে। এই একই অভিযোগের কপি জেলাশাসক, জেলার পুলিশ সুপার, জেলাপরিষদের সভাধিপতি সহ মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকের কাছেও পাঠিয়েছেন মেমারি থানার পাল্লা রোডের বাসিন্দা মৃণালকান্তি কোলে।

বিজ্ঞাপন

অভিযোগ, মর্গের ডোমেদের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ নতুন নয়। দীর্ঘদিন ধরেই ডোমেরা মৃত ব্যক্তিদের পরিজনদের কাছে অনৈতিক ভাবে টাকা দাবি করে আসছে দেহ হস্তান্তর করার জন্য। এমনকি জুলুমবাজি চালানোরও অভিযোগ রয়েছে এই ডোমেদের বিরুদ্ধে। বর্ধমান মেডিকেল সূত্রে জানা গেছে, গড়ে প্রতিদিন ১০ থেকে ১৫টি দেহের ময়নাতদন্ত হয় এই মর্গে। দুর্ঘটনাজনিত কারনে কোন ব্যক্তির মৃত্যু হলে তার ময়নাতদন্ত করানো বাধ্যতামূলক।

ময়নাতদন্তের দায়িত্বে থাকা চিকিৎসক প্রয়োজনীয় কাজ করে যাবার পরে ময়নাতদন্তের দায়িত্বে থাকা ডোমেরা এরপরে মৃতদেহের মাথা অংশ বা কোন সময়ে পেটের অংশ সেলাই করে মৃতদেহ কাপড়ে মুড়িয়ে মৃত ব্যক্তির পরিজন বা নিকট আত্মীয়র হাতে তুলে দেয়। আর তখনই এই জুলুম বাজি, তোলাবাজির খপ্পরে পড়ে মৃত ব্যক্তির দেহ নিতে আস লোকজন। অভিযোগ, এতদিন সেই টাকার পরিমান দুশো পাঁচশোর মধ্যে থাকলেও ইদানিং তার পরিমাণ হাজার ছড়িয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই সমস্যায় পড়ছেন পরিবারের লোকেরা।

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বিষয়টি যে জানেন না বা শোনেন নি এমনটাও নয়। এর আগেও ময়নাতদন্তের সঙ্গে জড়িত থাকা ডোমেদের সতর্ক করেছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। কিন্তু কিছুদিন বন্ধ থাকার পরে আবারও সেই একই অবস্থার পুনরাবৃত্তি হয়েছে। আর এবার কার্যত আগুনে ঘি ঢেলে দিয়েছেন মেমারি থানার পাল্লা রোডের বাসিন্দা মৃণালকান্তি কোলে। শুক্রবার মুখ্যমন্ত্রীর কাছে তিনি সরাসরি একটি অভিযোগ পাঠিয়েছেন। যেখানে তিনি উল্লেখ করেছেন, গত ১ তারিখে তাঁর বাবা কৃষ্ণচন্দ্র কোলে পাল্লা মোড় এলাকায় পথ দুর্ঘটনায় মারা যান। পুলিশ তার বাবার মৃতদেহ ময়নাতদন্ত করানোর জন্য বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসে।

অভিযোগে তিনি উল্লেখ করেছেন, সেখানে সব কাজের শেষে যখন দেহ নিয়ে ফেরার জন্য প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে তখন কর্তব্যরত ডোম তার কাছ থেকে পাঁচ হাজার টাকা দাবি করে। আমি দিতে অস্বীকার করায় আমাদের দেওয়া পলেথিন ও কাপড়ে মুড়ে বাবার দেহ ফেরত দিতে দু হাজার টাকা চায়। আমরা সেটাও দিতে অস্বীকার করলে ডোমেরা দেহ ফেলে রেখে দেয়। পরে সাড়ে তিন হাজার টাকা দিয়ে বাবার মৃতদেহ সেলাই করানোর পরে আমরা ফেরত পাই। একটা সরকারি হাসপাতালে কেন এটা হবে? আমাদের হুমকি দিয়ে ওই ডোমেরা জানিয়ে দেয়, ‘এখানে টাকা না দিলে কোন কিছুই হবে না।’

বিষয়টি জানাজানি হবার পরেই জেলাশাসক প্রিয়াঙ্কা সিংলা বিষয়টি নিয়ে মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষ কে জানিয়ে রিপোর্ট তলব করেন। বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সুপার তাপস ঘোষ বলেন, ‘এ অভিযোগ এর আগেও এসেছে। আমরা ওই ডোমেদের ডেকে সতর্ক করেছি। কিছুদিন বন্ধ ছিল আবারও শুরু করেছে। বিষয়টি নিয়ে ডেপুটি সুপার কে খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেবার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’

বর্ধমান থানার এক পুলিশ আধিকারিক বলেন, ‘যে মৃতদেহ গুলি পুলিশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্ত করায়, পরিবারের লোকেরা থাকেনা, তখন এরা পুলিশের কাছ থেকেও টাকা নেয়, না দিলে এক ঘন্টার কাজ পাঁচ ঘন্টাতেও করেনা। আমরাও উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানিয়েছি।’ জেলা স্বাস্থ্য আধিকারিক প্রনব রায় বলেন, ‘বিষয়টি মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষের গুরুত্ব দিয়েই দেখা উচিত।’ বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ ডাঃ কৌস্তভ নায়েক বলেন, ‘ অভিযোগের বিষয়ে শুনেছি, খোঁজ খবর নিয়ে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ কর হবে।’

আরো পড়ুন