ফোকাস বেঙ্গল ডেস্ক,বর্ধমান: দুটি মালবাহী গাড়ির নম্বর এক! একটি গাড়ি দীর্ঘদিন ধরে বেআইনিভাবে অন্য একটি বৈধ গাড়ির নম্বর তার গাড়ির নম্বর প্লেটে লাগিয়ে দিব্যি নিজের কারবার চালিয়ে যাচ্ছিল। অভিযোগ, একাধিকবার বিভিন্ন জেলায় ট্রাফিক পুলিশের হাতে ধরাও পড়ে গাড়িটি। জরিমানাও হয়। কিন্তু গাড়ির আসল মালিকের কাছেই সেই সমস্ত জরিমানার নোটিশ আসছিল। স্বাভাবিকভাবেই ফাঁপরে পড়ে গিয়েছিলেন বর্ধমান শহরের বিবেকানন্দ কলেজ রোডের বাসিন্দা পিকআপ ভ্যানের মালিক আশুতোষ দে।
কিভাবে এই সমস্যা থেকে তিনি মুক্তি পাবেন তার কূলকিনারা করতে পারছিলেন না। আশুতোষ বাবু জানিয়েছেন, তাঁর গাড়িটি কেবলমাত্র বর্ধমান শহরের মধ্যেই চলাচল করে। আর যে গাড়িটি তার গাড়ির নম্বর জাল করে রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় ঘুরে বেড়াচ্ছে সেটির হদিস তিনি জানেন না। ফলে এই বিষয়ে বর্ধমান থানায় জানিয়েও কোন সুরাহা তিনি পাননি। কিন্তু সোমবার সেই চোর কার্যত নিজে এসেই ধরা দিলো আশুতোষ বাবুর দরজায়। পুলিশ ডেকে ধরিয়ে দেওয়া হল ভুয়ো গাড়ি ও গাড়ির চালক কে। বর্ধমান থানার পুলিশ পিক আপ ভ্যানটিকে বাজেয়াপ্ত করার পাশাপাশি চালক কেও গ্রেপ্তার করেছে। একই সাথে গোটা ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ। কোনও বড় চক্র সক্রিয় বলে প্রাথমিকভাবে অনুমান করছেন অভিযোগকারী থেকে তদন্তকারীরা।
এদিকে নকল নম্বর প্লেট লাগানো গাড়ির মালিক যিনি নিজেকে সানি সিং বলে পরিচয় দিয়ে ফোনে বিষয়টি মিটমাট করতে টাকা দেওয়ার প্রস্তাব দেয় বলে দাবি করেছেন আশুতোষবাবু। তবে তিনি সেই প্রস্তাবে তিনি সায় দেননি। তিনি বলেন, “ওই গাড়ির মালিকের বাড়ি রাজ কলেজ মোড়, লক্ষ্মীপুর মাঠ এলাকায় বলে জানিয়েছে গাড়ির চালক। কোনও বড় চক্র সক্রিয় আছে। কোনও অপরাধমূলক কাজে যুক্ত থাকতে পারে। না হলে এইভাবে নকল নম্বর প্লেট ব্যবহার করবে কেন। আগে কোনও অপরাধ করে থাকলেও সেই দায় তাঁর উপর পড়তে পারে। তাই তিনি চান পুলিশ তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করুক।” পুলিশ নকল নম্বর প্লেট লাগানো গাড়ির চালককে জিজ্ঞাসাবাদ করে মালিকের হদিশ পেতে চাইছে। কেন তারা এইভাবে কারবার চালাচ্ছিল জানতে চাইছে পুলিশ। সূত্র মারফৎ জানা গেছে এই ভুয়ো নম্বর প্লেট লাগানো গাড়ির মালিক সানি সিং একজন প্রাক্তন পুলিশ কর্মীর ছেলে। এর আগেও তার বিরুদ্ধে একাধিক প্রতারণার অভিযোগ সামনে এসেছে। পুলিশ সবদিক খতিয়ে দেখছে।
আশুতোষবাবুর দীর্ঘদিন ধরে পিকআপ ভ্যান রয়েছে। যা মূলত বর্ধমান শহর ও সংলগ্ন এলাকার মধ্যে পণ্য পরিবহন করে। সাধারণত দূরে কোথাও যায় না তাঁর গাড়ি। অথচ সম্প্রতি বিভিন্ন জায়গায় তাঁর গাড়ি ট্রাফিক নিয়ম ভঙ্গ করছে এবং পরিবহণ দফতর জরিমানা করে মেসেজ পাঠাচ্ছে তাঁকে। ব্যবসা চালু রাখতে জরিমানা দিতে বাধ্য হয়েছেন তিনি। আশুতোষবাবু বলেন, “রানাঘাট, সিঙ্গুর, বাঁকুড়া সহ বিভিন্ন জায়গায় গাড়িটির জরিমানা করেছে। প্রায় ৪০ হাজার টাকা মতো জরিমানা দিতে হয়েছে আমাকে। পুলিশ, পরিবহণ দফতরে অভিযোগ জানাই। কিন্তু কিছু হয়নি। আমার গাড়ি শহরে রয়েছে অথচ বাইরে কোথাও কীভাবে জরিমানা হতে পারে। আমার গাড়ির নম্বর প্লেট ব্যবহার করা হচ্ছে বুঝতে পারি। কিন্তু সেই গাড়িটির হদিশ কিছুতেই পাচ্ছিলাম না।”
এদিন আশুতোষবাবুর গাড়ির নকল নম্বর প্লেট লাগানো একটি পিকআপ ভ্যান জলের ট্যাঙ্ক বোঝাই করে হাজির হয় বিবেকানন্দ কলেজের সামনে। আচমকা সেই গাড়ির নম্বর দেখে অবাক আশুতোষবাবু। লোকজন ডেকে গাড়িটিকে চালক সহ আটকে রেখে পুলিশে খবর দেন। পুলিশ এসে গাড়ি ও চালককে আটক করে। বর্ধমানের ডিএসপি ট্রাফিক-২ রাকেশকুমার চৌধুরি বলেন, “ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে। সব দিক খতিয়ে দেখা হচ্ছে।”