ফোকাস বেঙ্গল ডেস্ক,বর্ধমান: ১০টাকায় আপনার ব্লাড প্রেসার মাপুন – শুক্রবার দুপুরে বর্ধমানের কোর্ট কম্পাউন্ড এলাকায় হঠাৎই প্রায় ৭০বছর বয়সী এক বৃদ্ধ কে হাতে প্রেসার মাপার যন্ত্র, গলায় ঝোলানো স্টেথোস্কোপ নিয়ে এইভাবেই বলতে বলতে ঘুড়তে দেখা গেল। কোর্ট চত্বরে প্রতিদিন অনেককেই নানান সামগ্রী নিয়ে বিক্রি করতে দেখতে অভ্যস্ত স্থানীয় ব্যবসায়ী থেকে মানুষজন। কিন্তু এমন ভ্রাম্যমাণ চিকিৎসক কে কেউ কোনোদিন ব্লাড প্রেসার মাপার আবেদন নিয়ে আসতে বা ঘুরতে দেখেননি। স্বাভাবিকভাবেই ব্যাপারটা কি তাই নিয়েই সকলের মধ্যে তৈরি হয় ব্যাপক কৌতুহল। এরই মধ্যে কেউ এগিয়ে আসেন মাত্র ১০ টাকায় নিজের ব্লাড প্রেসার টা একবার দেখে নিতে, আবার অনেকেই উৎসুক হয়ে ওঠেন জানতে – কে এই ব্যক্তি।
সদা চুল, পাকা দাড়ি, চোখে চশমা, কাঁধে ঝুলছে ব্যাগ, হাতে প্রেসার মাপার যন্ত্র। আপাতদৃষ্টিতে একজন ধোপদুরস্ত ভদ্রলোক কেন এমন অভিনব প্রস্তাব নিয়ে ঘুরছে তা নিয়ে কথা বলার পর জানা গেল ওনার নাম মলয় বোস। বাড়ি ব্যারাকপুর। মলয়বাবু নৌবাহিনীর প্রাক্তন স্বাস্থ্য কর্মী। এটা তাঁর পুরনো পেশা। তবে অবসর নেওয়ার পর এখন এটাই তাঁর নেশা, পাশপাশি জনসেবার মাধ্যমে কিছু আয়ের সুযোগ তৈরি করার প্রচেষ্টা। ঘুরে বেড়ানোও তাঁর অন্য একটি নেশা।
মলয় বোস বলেন,’ রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে নামমাত্র মূল্যে মানুষের ব্লাড প্রেসার মেপে দি। অনেক মানুষ আছেন যারা ইচ্ছে থাকেলেও বা সময়ের অভাবে সবসময় চিকিৎসকের কাছে গিয়ে নিজের রক্তচাপ মেপে দেখার সময় পাননা। দশ বছর আগে একটি বিশেষ ঘটনার পর এইভাবেই রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে মানুষের প্রেসার মাপার কাজ করছি। এটাই এখন আমার নেশা থেকে পেশাতে পরিণত হয়ে গিয়েছে। বাড়িতে স্ত্রী, ছেলে আছে। দশ টাকার বিনিময়ে সারাদিনে জনা পঞ্চাশ মানুষের প্রেসার চেক করে থাকি। যেটুকু রোজগার হয় তাতে অবসরকালীন পেনশন পাবার পর সংসার চালাতে এই টাকায় কিছুটা সুবিধা হয়। রোজ সাত থেকে আট ঘন্টা ঘুরে বেড়াই এভাবেই।
মলয় বোস বলেন, ‘আমি বিজ্ঞান সচেতনতার বিভিন্ন কাজে অর্থ সাহায্য করি। পশ্চিমবঙ্গ বিজ্ঞান মঞ্চের সদস্য। সোশ্যাল মিডিয়ায় নিজের নাম ব্যবহার করি নাস্তিক বোস হিসেবে। আমি মাসে পনেরো দিন এভাবে ঘুরে বেড়াই। অনেকেই দেখবেন তার শরীরের রক্তচাপ কত জানেনই না। হঠাৎই অসুস্থ হয়ে পড়ার পরে চিকিৎসকের কাছে গেলে জানতে পারেন। অনেকে এমনও হয়েছে উচ্চ রক্তচাপ অথচ জানেন না। আচমকাই হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে অনেকেই মারা গিয়েছেন। আমার এক নিকট জনের এভাবে চলে যাবার পরে এই কাজটা করার মনস্থির করেছিলাম। প্রথমে একটু আড়ষ্টতা লাগলেও এখন ভালোই লাগে।’
বর্ধমানে অফিসের কাজে এসেছিলেন মেমারি ১ বিডিও অফিসের কর্মী শুভেন্দু সাঁই। মলয় বোসের কাছ থেকে নিজের রক্তচাপ পরীক্ষা করার পরে তিনি বলেন, ‘এটা বেশ অভিনব। ইচ্ছা থাকলেও কাজের চাপে আমাদের তো সময়ে ডাক্তারদের কাছে যাওয়াই হয়না। এভাবে রাস্তার মধ্যেই কিছুটা সময়ের মধ্যেই নিজের রক্তচাপের অবস্থা জানতে পারলাম। চা-বিস্কুট খেলেও দশ টাকা খরচ হয়ে যেতো। খুব ভাল লাগলো।’ তবে এদিন এই ভ্রাম্যমাণ চিকিৎসক মলয় বোস কে সামনে পেয়ে বর্ধমানের কোর্ট চত্বর এলাকার বহু মানুষ নিজের শরীরের রক্তচাপের অবস্থা একবার পরীক্ষা করে নিয়ে যান। মলয় বাবুও জানিয়ে যান ‘কয়েক মাস পর ফের তিনি বর্ধমানে আসবেন, আবার সবার সঙ্গে দেখা হবে। সকলে যেন সুস্থ থাকবেন। আর অবশ্যই নিজেকে ভালোবেসে সময়মতো চিকিৎসকের কাছে গিয়ে রুটিন প্রেসার চেক করবেন।’