কাটোয়ায় রেকর্ড দাখিলে ভুয়ো দলিল, হাইকোর্টে শুনানি ১০ এপ্রিল

Souris  Dey

Souris Dey

ফোকাস বেঙ্গল ডেস্ক,কলকাতা: চলতি সপ্তাহে কলকাতা হাইকোর্টে ভুয়ো দলিল দিয়ে রেকর্ড করার ঘটনায় প্রশাসনিক নিস্ক্রিয়তার জন্য রিট পিটিশন মামলা দাখিল হয়েছে। আগামী ১০ এপ্রিল কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি মৌসুমি ভট্টাচার্যের সিঙ্গেল বেঞ্চে এই মামলার শুনানি রয়েছে বলে জানা গেছে। মামলাকারী আইনজীবী হিসাবে রয়েছেন বৈদূর্য ঘোষাল। ঘটনাটি পূর্ব বর্ধমান জেলার শ্রীখন্ড মৌজার। সংশ্লিষ্ট বিএলএলআরও, এসডিএলআরও, ডিএলআরও দের ই-মেইল করে এবং দপ্তরে অভিযোগপত্র জমা দিয়ে রিসিভ করা হয়েছে। এর পাশাপাশি আরটিআই এবং লিগ্যাল নোটিশ পাঠিয়েও কোন প্রশাসনিক সক্রিয়তা দেখা যায় নি। তাই এই রিট পিটিশন বলে জানিয়েছেন মামলাকারীর আইনজীবী বৈদূর্য ঘোষাল।

বিজ্ঞাপন

ইতিমধ্যেই পূর্ব বর্ধমান জেলার কাটোয়া মহকুমা এলাকায় বেশ কয়েকটি মৌজার  জমির মিউটেশনে ভুয়ো দলিল দেওয়ায় ভূমি দপ্তরের তরফে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে এফআইআর দাখিল করার নজির রয়েছে। ঠিক এমতাবস্থায় কাটোয়ার ১ নং ব্লকে শ্রীখন্ড মৌজার ( জে.এল নাম্বার ৭) ২০২৩ খতিয়ানে এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে ভুয়ো দলিল দেওয়ার অভিযোগ জমা পড়েছে  ভুমি দপ্তরে। গত জানুয়ারি  মাসের ১১ তারিখে পূর্ব বর্ধমান জেলার ডিএলএলআরও অফিসে এবং ১৩ তারিখে কাটোয়া মহকুমার এসডিএলআরও এবং কাটোয়া ১ নং বিএলএলআরও অফিসে অভিযোগ জমা দিয়েছেন উক্ত খতিয়ান মূলে অন্যতম ওয়ারিশ মোল্লা জসিমউদ্দিন। ইমেল মারফতও বিষয়টি জানানো হয়েছে। মিউটেশনে জেনেশুনে ভুয়ো দলিল দাখিল করার জন্য অভিযুক্ত ব্যক্তির বিরুদ্ধে এফআইআর রুজু করার আবেদন রেখেছেন অভিযোগকারী।

তিনি ওয়ারিশ মূলে এবং দলিল মূলে ওই সম্পত্তির একাংশ মালিক হচ্ছেন। জানা গেছে, মঙ্গলকোটের পদিমপুর গ্রামের স্থায়ী বাসিন্দা মোল্লা জসিমউদ্দিন অভিযোগে জানিয়েছেন, ‘ কাটোয়া ১ নং ব্লকের অধীনে শ্রীখন্ড মৌজার ( ০৭ নং) খতিয়ান ২০২৩ এর মোল্লা খব্বিরউদ্দিনের ওয়ারিশ মূলে এবং দলিল মূলে উক্ত সম্পত্তির  মালিক হচ্ছেন। উক্ত সম্পত্তির কিছু অংশ ২০১৪ সালে কাটোয়ার পঞ্চাননতলা সংলগ্ন গোপালপুর গ্রাম নিবাসী খাইরুল মোল্লা ( পিতা – প্রয়াত বলু মোল্লা)  অসৎ উপায়ে একতরফা বিনা শুনানিতে বিনা দলিলে করিয়া নেন। যার মিউটেশন কেস নাম্বার হলো – ( এমএন/২০১৪/০২২৪/৪৭৯৯)।সেইসময় মোল্লা খব্বিরউদ্দিনের পুত্র মোল্লা নুরুল হোদা (বিচারক) জীবিত ছিলেন। তিনি ওই মিউটেশনের নোটিশ পাননি। অভিযুক্ত খাইরুল মোল্লা খতিয়ান ২০২৩ এর সম্পত্তির একাংশ এলআর রেকর্ড করে নেন। উক্ত মিউটেশন এর অর্ডারশিট তুলে দেখা যায়, সেখানে কোন দলিলের উল্লেখ নেই। পরবর্তীতে তিনি (মোল্লা নুরুল হোদা)  বিষয়টি সংশ্লিষ্ট বিএলএলআরও ( কাটোয়া ১ নং), এসডিএলএলআরও ( কাটোয়া মহকুমা),  ডিএলএলআরও ( পূর্ব বর্ধমান) সহ বিভিন্ন জায়গায় অভিযোগ এবং পরবর্তীতে আগেকার অভিযোগ অনুযায়ী তদন্তের অগ্রগতি বিষয়ে দরখাস্ত জমা করেন। এরপর মোল্লা নুরুল হোদার মৃত্যু হলে মোল্লা জসিমউদ্দিন বিষয়টি এলআর আইনের ৫৪ নং ধারা মতে ডিএলএলআরও অফিসে আপিল পিটিশন ( কেস নাম্বার – ১৭২/১৬)  দাখিল করে।

প্রায় এক বছর সময়কালে চারবার শুনানিতে অভিযুক্ত ব্যক্তি গড়হাজির ছিলেন। তবে শেষে এক প্রেরিত ব্যক্তির মাধ্যমে বেশ কিছু দলিল পাঠিয়ে ছিলেন। কিন্তু উক্ত কোন দলিলই ওই আপিল শুনানিতে রেকর্ডেড হয়নি। এরপর তৎকালীন ডিএলএলআরও এই আপিল কেসটি পুনরায় সংশ্লিষ্ট বিএলএলআরও ( কাটোয়া ১ নং ব্লক) কে ‘ফ্রেস হিয়ারিং’ ( ১১/এক্স আইআইআই/২০১৬ )এর জন্য পাঠিয়ে দেন। কাটোয়া ১ নং ভূমি ও ভূমি সংস্কার দপ্তরে ওই শুনানি পরবর্তী মিউটেশন অর্ডারশিটে দেখা যায় যে, যে দলিলগুলি দিয়ে মিউটেশন নথিভুক্ত হয়েছে, সেই দলিলগুলির মধ্যে দাতা – গ্রহিতা, জমির দাগ নং এমনকি মৌজা নাম্বার সম্পর্কিত নয়’।

অভিযোগকারীর  দৃঢ় বিশ্বাস অভিযুক্ত খাইরুল মোল্লা জাল দলিল নথিভুক্ত করে অসাধু উপায়ে ওই সম্পত্তি এলআর রেকর্ড করেছেন। সেজন্য উক্ত  মিউটেশন রেকর্ড পুনরুদ্ধার করে জেনে-বুঝে ভুয়ো দলিল দেওয়া খাইরুল মোল্লার বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী এফআইআর করার আর্জি রেখেছেন তিনি। ওই দলিল নাম্বার খতিয়ে দেখতে ব্লক থেকে জেলাস্তরের রেজেস্ট্রি অফিসে খতিয়ে দেখেছেন অভিযোগকারী। অপরদিকে অভিযুক্তের পক্ষে সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করা হয়েছে।

অভিযোগকারী মোল্লা জসিমউদ্দিন জানিয়েছেন,’ পরবর্তীতে অভিযোগপত্র অনুযায়ী কি ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, তা জানতে চাওয়া হয় সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলির কাছে। কোন সুরাহা না পাওয়ায় কলকাতা হাইকোর্টে রিট পিটিশন দাখিল করলাম’। এও জানা গেছে যে, অভিযুক্ত ব্যক্তি পিওন পদের অপব্যবহার করে প্রথম মিউটেশনের নোটিশ গায়েব করেছিলেন। অভিযোগকারী মোল্লা জসিমউদ্দিন বিষয়টি পূর্ব বর্ধমান জেলার সুপারিন্টেন্ডেন্ট অফ পোস্টাল থেকে কলকাতার জিপিওর পোস্টমাস্টার জেনারেল কে দফায় দফায় লিখিত অভিযোগ জানিয়েছেন। তাতেও কোন সুরাহা মিলেনি।কাটোয়ার সাব রেজিস্ট্রার অফিস, বিএলএলআরও অফিসের একাংশের সহযোগিতায় ভুয়ো দলিল করা থেকে রেকর্ড জালিয়াতির নানান উদাহরণ রয়েছে। কাটোয়া এবং কেতুগ্রাম থানায় এইধরনের কয়েকটি মামলা বর্তমানে চলছে।

আরো পড়ুন