চাষবাস

১০ লাখ টাকার জমির জন্য ২ লাখ! গ্যাস কোম্পানী থেকে জমির ন্যায্য মূল্য না পাওয়ার অভিযোগ মেমারির চাষীদের

ফোকাস বেঙ্গল ডেস্ক,মেমারি: রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে পাইপ লাইন বসানোর জন্য জমি অধিগ্রহণ করছে গেইল ইণ্ডিয়া লিমিটেড। পূর্ব বর্ধমান জেলার বিভিন্ন জায়গা দিয়ে এই পাইপ লাইনের কাজ ইতিমধ্যেই শুরু হয়েছে। মেমারিতেও একদিকে যেমন পাইপলাইনের কাজ শুরু হয়েছে, অন্যদিকে চলছে জমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া। কিছু চাষী জমির মূল্য নিয়ে খুশি হলেও মেমারি শহর লাগোয়া তালপাতা গ্রামের কিস্ককিন্দা মৌজা ও মেমারি মৌজার চাষীরা গ্যাস কোম্পানী থেকে ন্যায্য মূল্য পাচ্ছে না বলে অভিযোগ করছেন। তাদের দাবী ১০ লাখ টাকার জমির জন্য ২ লাখ টাকারও কম পাচ্ছেন তারা। এছাড়াও পাইপ লাইন বসলে ভবিষ্যতে এই এলাকার জমিগুলো চাষযোগ্য থাকবে না বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন এলাকার জমিদাতা চাষীরা।

সোমবার পূর্ব বর্ধমান জেলার মেমারি শহরের শেষ প্রান্তে দুর্গডাঙ্গার মোড়ে প্রায় শতাধিক চাষী একটি বিক্ষোভ সভার আয়োজন করেন। সভায় চাষীদের স্বার্থে উপস্থিত ছিলেন মেমারি পৌরসভার উপ-পৌরপ্রধান সুপ্রিয় সামন্ত। তিনি বিক্ষোভরত চাষীদের আশ্বাস দিয়ে বলেন, ‘গ্যাস কোম্পানী কর্তৃপক্ষের সাথে প্রশাসনের আলোচনার সময় এই সমস্যার বিষয় নিয়ে আলোচনা করবেন’। বিক্ষোভ সভার পর সম্ভাব্য ক্ষতিগ্রস্থ চাষীরা তাদের ছোট ছেলে মেয়েদের সঙ্গে নিয়ে বিভিন্ন দাবি দাওয়া লিখে পোষ্টার ও জাতীয় পতাকা নিয়ে একটি মিছিল করে হাসপাতাল মোড়, বামুনপাড়া মোড় হয়ে মেমারি বিডিও অফিস প্রাঙ্গনে পৌঁছায়। মেমারি ১ ব্লক সমষ্টি উন্নয়ণ আধিকারি ড. আলি মহম্মদ ওয়ালিউল্লাহের কাছে জমির সঠিক ও ন্যায্য মূল্য পাওয়ার জন্য চাষীদের প্রতিনিধিরা ডেপুটেশন দেয়।

মেমারি ১ ব্লক সমষ্টি উন্নয়ণ আধিকারিক ড. আলি মহম্মদ ওয়ালিউল্লাহ এই প্রসঙ্গে বলেন, ‘ জমি অধিগ্রহণ সংক্রান্ত সরকারী আইন অনুসারে জমির যে মূল্য হয় চাষীরা অবশ্যই সেই মূল্য পাবেন। কিন্তু চাষীরা যদি অতিরিক্ত মূল্য দাবি করেন তাহলে ২০১৬ থেকে ২০২৯ সাল পর্যন্ত তাদের সর্বোচ্চ ডীড জমা দিলে প্রশাসন সেই ব্যপারটি ভেবে দেখবে।’

চাষীদের প্রতিনিধি এরশাদ আলি মল্লিক জানান, কিসকিন্দা ও মেমারি মৌজাতে যে সব চাষীদের কমবেশি জমি আছে সেই জমিতে চাষ করেই তারা জীবিকা নির্বাহ করে। গেইল কোম্পানী তাদের পাইপ লাইন নিয়ে যাওয়ার জন্য এই কিসকিন্দা ও মেমারি মৌজার কিছু জমি পূর্ণ ও আংশিক চিহ্নিত করেছে। আর এই ব্যাপারে তাদের সাথে কোন আলোচনা না করেই। এছাড়াও কোম্পানি যে ক্ষতিপূরণ বাবদ জমির মূল্য দিচ্ছে তা বাজারমূল্য থেকে অনেক কম। এই মৌজার জমিগুলি শহর সংলগ্ন হওয়ায় আশেপাশের জমিগুলি ভিটেতে পরিণত হচ্ছে। ফলে এই এলাকার জমির দাম ভবিষ্যতে যেমন একদিকে অনেক বাড়বে, ঠিক তেমনই জমিগুলোতে আর চাষ করা যাবে না।

এক চাষী সেখ আসরাফুল বলেন, ‘গেইল কোম্পানী গ্যাসের পাইপ লাইনের জন্য জমির ক্ষতি করছে ১০০ শতাংশ আর ক্ষতিপূরণ দিচ্ছে ২২ শতাংশ। তারা যে মূল্য ধার্য করছে সেটা পাঁচ বছর আগের বাজারমূল্য। কোম্পানীর শর্তানুসারে এই সব জমিগুলিতে ভবিষ্যতে কোন কনস্ট্রাকশন করা যাবে না। এরফলে জমির ভ্যালুয়েশন কমে যাবে। স্বাভাবিকভাবেই চাষীরা এই সমস্ত দিক নিয়ে ভেবে সকলেই মানসিক ও অর্থনৈতিক ভাবে বিপর্যস্ত। যে কোন রাজ্যের উন্নয়ণের ভিত্তি চাষ আবাদ। আর সেই চাষের সঙ্গে জড়িত চাষীরাই যদি আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় তার দায়ভার কে নেবে, এই প্রশ্নই রাজ্য ও কেন্দ্র সরকারের কাছে এদিন রেখেছে চাষীদের পাশপাশি তাদের ভবিষ্যত প্রজন্ম।

Recent Posts