ফোকাস বেঙ্গল ডেস্ক,মঙ্গলকোট: পূর্ব বর্ধমান জেলার মঙ্গলকোটে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির যে নজির গড়ে গেছেন একদা মুঘল সম্রাট শাহজাহান বাদশার শিক্ষা ও দীক্ষাগুরু আব্দুল হামিদ দানেশখান্দ ( হামিদ বাঙালি), সেই সম্প্রীতির মেলবন্ধন এখনও অক্ষত মঙ্গলকোটের বুকে। এখানে কালিপুজোর সূচনা হয় পীরের মাজারে চাদর চাপিয়ে। শুক্রবার মঙ্গলকোটের পুরাতন থানায় পীর বাবার মাজারে চাদর চাপিয়ে মঙ্গলকোট থানার কালীপুজোর শুভ সূচনা করলেন পূর্ব বর্ধমান জেলা পুলিশ সুপার আমনদীপ।
উপস্থিত ছিলেন জেলা পরিষদের সভাধিপতি শ্যামাপ্রসন্ন লোহার, স্থানীয় বিধায়ক অপূর্ব চৌধুরী, অতিরিক্ত জেলা পুলিশ সুপার ধ্রুব দাস, মহকুমা পুলিশ অফিসার কৌশিক বসাক, আইসি পিন্টু মুখার্জি প্রমুখ। অবিভক্ত বর্ধমান জেলার মঙ্গলকোট থানার পীর পাঞ্জাতন বাবার মাজারে চাদর চাপিয়ে কালীপুজোর শুভ সূচনার রীতি শতাধিক বছরের পুরনো। আজও সেই রীতি অব্যাহত রয়েছে সমানভাবে। এ যেন সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এক অনন্য নজির। আগামী বুধবার পীর বাবার জলসা অনুষ্ঠিত হবে। ওই দিন এলাকার সকল সম্প্রদায়ের মানুষ একসাথে বসে খিচুড়ি ভোগ খাওয়ানো হবে বলে জানান মঙ্গলকোট থানার আইসি পিন্টু মুখার্জি।
এদিন কালীপুজোর শুভ সূচনা করে এলাকার ২০০০ দুস্থ মানুষকে কম্বল বিতরণ করা হয় মঙ্গলকোট থানার পক্ষ থেকে। প্রসঙ্গত, আঠারো অলি খ্যাত মঙ্গলকোটে সূদুর পারস্য থেকে পায়ে হেঁটে এই মঙ্গলকোটে এসেছিলেন সুফি আব্দুল হামিদ দানেশখন্দ। পরবর্তীতে আফগান – মুঘল যুদ্ধের সময় বর্ধমান মহারাজার মহলে এসেছিলেন শাহজাদা খুরহম, যিনি পরবর্তীতে মুঘল সম্রাট শাহজাহান বাদশা হিসাবে পরিচিত পান। সেসময় শাহজাদা খুরহম মঙ্গলকোটে সুফি আব্দুল হামিদ দানেশখন্দের সান্নিধ্যে আসেন।দীক্ষাও নেন সেইসময়। পরবর্তীতে গুরুর প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনে সুদূর দিল্লি থেকে মুঘল সম্রাট শাহজাহান বাদশা পায়ে হেঁটে আসেন এই মঙ্গলকোটেই। গুরুর প্রতি এহেন শ্রদ্ধা ইতিহাসে বিরল।
আব্দুল হামিদ দানেশখন্দ নিজে একজন পারস্যের বাসিন্দা, মুঘল আমলের শিক্ষা ও দীক্ষাগুরু হলেও বাংলা – বাঙালি কে ভালোবেসে নিজের পরিচয় দিতেন ‘বাঙালি’ হিসাবে । তাই তো এই সুফি কে আপামর বাঙালি চেনেন ‘হামিদ বাঙালি’ হিসাবে। এহেন মঙ্গলকোটে থানার কালিপুজো সূচনা ঘটে পীরের মাজারে চাদর চাপিয়ে। আইসি পিন্টু মুখার্জি জানান,” ঐতিহ্যপূর্ণ এই কালীপুজোর সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির মেলবন্ধন অতুটবথাকুক অনন্তকাল ।”