রাজনীতি

গলসির গোহগ্রামে বিজেপির হাত ধরে তৃণমূলের পঞ্চায়েত, সাঁকো শাসকের হাতছাড়া

ফোকাস বেঙ্গল ডেস্ক,গলসি: রাজনীতিতে ক্ষমতা দখলে রাখতে কোন আদর্শই চিরস্থায়ী নয়। চরম বিরোধী পক্ষের সাথেও যেমন প্রয়োজনে হাত মিলিয়ে শাসক দল রফা করে নেয় ক্ষমতার দখল রাখতে, তেমনই জোটের আদর্শ কে জলাঞ্জলি দিয়ে প্রয়োজনে রাম-বাম-কং এক হয়ে যায়। আর রাজনীতির এই নীতিআদর্শ বিচ্যুত সমীকরণের সাক্ষী থাকল পূর্ব বর্ধমানের গলসি ২ব্লকের তিনটি পঞ্চায়েতের বোর্ড গঠন প্রক্রিয়া। পঞ্চায়েত নির্বাচনে এই ব্লকের গোহগ্রাম, সাঁকো ও গলসি তিনটি পঞ্চায়েতের ফল ত্রিশঙ্কু হয়েছিল। ফলে শাসকদল তৃণমূল আদৌ এই তিনটি পঞ্চায়েতের দখল নিজেদের অনুকূলে রাখতে পারে কিনা তা নিয়ে বিস্তর কৌতুহল তৈরি হয়েছিল রাজনৈতিক মহলে।

বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই উন্মাদনা তৈরি হয় এই তিনটি পঞ্চায়েতের বোর্ড গঠন কে ঘিরে। অবশেষে রাজনৈতিক নীতি আদর্শের জলাঞ্জলি দিয়ে গোহগ্রাম গ্রাম পঞ্চায়েতের বোর্ড গঠন করল তৃণমূল। সেখানে প্রধান হলেন তৃণমূলের জবা দলুই। আর উপ প্রধান হয়েছেন বিজেপি প্রার্থী কানন মাঝি। এই পঞ্চায়েতের পাঁচটি আসনে নির্দল জয়ী হয়েছিল। জানা গেছে, গোহগ্রাম পঞ্চায়েতে মোট আসন ষোলটি। তার মধ্যে শাসক দলের জয়ী প্রার্থী ৭টি, বিরোধী বোর্ডে বিজেপি ৩টি, সিপিআইএম ১টি ও নির্দল ৫টি। দুপক্ষ সমান হলে টসের মাধ্যমে ফলাফল নির্ধারণ করার কথা ওঠে। তবে সেখান থেকে থেকে সরে দাড়িয়ে তৃণমূলকে প্রধান ও বিজেপিকে উপপ্রধান পদ দেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয় তৃণমূলের পক্ষ থেকে। বিজেপির জয়ী প্রার্থী কানন মাঝি তৃণমূল কে এই সময় সমর্থন করে দেয়। আর এতেই বিজেপির প্রার্থীকে উপপ্রধান করতে সমর্থন করে তৃণমূলের প্রার্থীরা। ৯-৭ ফলাফলে বোর্ড দখল করে তৃণমূল।

এরপরই রাজনৈতিক মহলে জোর চর্চা শুরু হয়েছে। যেখানে রাজ্য জুড়ে কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের বিরুদ্ধে শাসক দলের লাগাতার আন্দোলন, বিরোধিতা জারি রয়েছে, সেখানে বিজেপি প্রার্থীর সমর্থনে তৃণমূল বোর্ড গঠন করছে। স্বাভাবিকভাবেই কংগ্রেস, সিপিএম এই ঘটনার তীব্র কটাক্ষ করেছে। পূর্ব বর্ধমান জেলা যুব কংগ্রেস সভাপতি গৌরব সমাদ্দার এই প্রসঙ্গে জানিয়েছেন, ‘ আমরা বারবার বলেছি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায় কিভাবে সমঝোতার ভিত্তিতে সরকার চালাচ্ছে। এবারের পঞ্চায়েত নির্বাচন তার জ্বলন্ত উদাহরণ। কারণ কেন্দ্রীয় বাহিনীকে কিভাবে নিষ্ক্রিয় করে রেখে রাজ্য পুলিশ পঞ্চায়েত ভোটে তৃণমূল কে ভোট লুটে সহযোগিতা করে গেছে। তাই এটা স্বাভাবিক ঘটনা বিজেপির সঙ্গে হাত মিলিয়ে তৃণমূল বোর্ড গঠন করছে। এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই। যদি এটা না করে তাহলে অনেক পঞ্চায়েতই তৃণমূলের হাতছাড়া হয়ে যাবে।’ তৃণমূলের পক্ষ থেকে অবশ্য জানানো হয়েছে, বিজেপি প্রার্থী কানন মাঝি তৃণমলে যোগ দিয়েছেন। অন্যদিকে খোদ কানন মাঝি সাফ জানিয়ে দিয়েছেন তিনি বিজেপিতেই আছেন।

অন্যদিকে গলসি ২ ব্লকের আরো একটি ত্রিশঙ্কু পঞ্চায়েত ছিল সাঁকো।  পঞ্চায়েতে বোর্ড গঠন করবে কোন দল এই নিয়ে উঠছিল নানান প্রশ্ন।গলসি দু’নম্বর ব্লকের সাঁকো পঞ্চায়েতে মোট আসন ১৩ টি। যার মধ্যে তৃণমূল কংগ্রেস পেয়েছে ৬ টি। সিপিআইএম ১ টি, বিজেপির ৪ টি, কংগ্রেস ১টি ও ফরোয়ার্ড ব্লক ১ টি। বোর্ড গঠন করতে লাগবে ৭ টি আসন। বিজেপি, সিপিএম, ফরওয়ার্ড ব্লক ও কংগ্রেস ৪ টি দলের জয়ী প্রার্থীরা ও কর্মী সমর্থকেরা এদিন একত্রে ফ্ল্যাগ নিয়ে মিছিল করে আসেন বোর্ড গঠন করতে। তারা দাবি করে বিজেপি, সিপিএম, ফরওয়ার্ড ব্লক ও কংগ্রেস একত্রিত হয়ে তাদের মোট সিট সংখ্যা হচ্ছে ৭ টি এবং সাঁকো পঞ্চায়েতে তারাই বোর্ড গঠন করবেন। এদিন সকালে ৭ জন প্রার্থী একসঙ্গে মিছিল করে প্রবেশ করেন পঞ্চায়েত অফিসে।

অপরদিকে তৃণমূলের ৬ জন জয়ী প্রার্থী ও সংখ্যালঘু সেলের সভাপতি আসেন পঞ্চায়েত অফিসে। তারা পঞ্চায়েত অফিসের দিকে যাওয়ার সময় বিরোধীদলের সমর্থকেরা স্লোগান-সাউটিং করে এগিয়ে আসতে থাকেন। উত্তেজনার তৈরির সম্ভাবনা দেখে ডিএসপি হেডকোয়ার্টার এর নেতৃত্বে বিশাল পুলিশ বাহিনী গিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেয়। বিজেপি সহ বিরোধীদলের সমর্থকদের ওই এলাকা থেকে সরিয়ে দেয় পুলিশ। তৃণমূলের দাবি, আমরা কোন জোরজবরদস্তি করিনি, যে ভোটে জিতবে সেই প্রধান হবে। অন্যদিকে বিজেপির পক্ষ থেকে দাবি করা হয় ফরওয়ার্ড ব্লকের প্রার্থী হবেন প্রধান। উপ প্রধান হবেন বিজেপির প্রার্থী।

কৃষক সভার ব্লক সম্পাদক সাইফুল হক বলেন “ এলাকার মানুষ চেয়েছিল লুঠেরাদের বিরুদ্ধে তৃণমুলের বিরুদ্ধে যেতে হবে এবং মানুষের দাবী ছিল তৃণমুলকে পঞ্চায়েত বোর্ড গঠন করতে দেওয়া যাবে না তাই বিজেপির সাথে গিয়ে পঞ্চায়েত বোর্ড গঠন করা হয়েছে।” কৃষক সভার এই নেতা অবশ্য বলছেন, মানুষের চাহিদাকেই সম্মান দেওয়া হয়েছে, সিপিএম-ই একমাত্র বিজেপি বিরোধী দল।” এদিকে তৃণমুল নেতা নবকুমার হাজরা বলেন “ তৃণমুল বারবার বলে এসেছে রাম – বাম এক হাঁড়ির ভাত, সিপিএম ও অন্যান্য বামপন্থী দলগুলি প্রকাশ্যে বিজেপির সাথে এসেছে তাতে মানুষ বুঝতে পারছে কারা বিজেপিকে বাংলায় আনছে।” অন্যদিকে গলসি পঞ্চায়েত এক নির্দল প্রার্থীর সমর্থনে বোর্ড গঠন করেছে তৃণমূল। 

Recent Posts