ফোকাস বেঙ্গল ডেস্ক,পূর্ব বর্ধমান: মেডিক্যালে ভর্তি করিয়ে দেবার নাম করে আন্তঃজেলা প্রতারণা চক্রের চার পান্ডা কে গ্রেপ্তার করল বর্ধমান থানার পুলিশ। অভিযুক্তদের ১৪দিনের পুলিশি হেফাজত চেয়ে শনিবার বর্ধমান আদালতে পেশ করা হলে বিচারক ১০দিনের পুলিশ হেফাজত মঞ্জুর করেছেন ধৃতদের। এই ঘটনায় আলোড়ন ছড়িয়েছে। পুলিশ সূত্রে জানতে পারা গেছে, গ্রেফতার হওয়া অভিযুক্ত ব্যক্তিরা হল বিক্রম ঠাকুর (৩৮), বাড়ি শক্তিগড় থানার সিনেমাতলা এলাকায়। শেখ রহমান ওরফে রাজু (৩০), বাড়ি উত্তর ২৪ পরগনার দত্ত পুকুর থানার বামনগাছি, মালিয়াকুর এলাকায়। শেখ সন্তু (৩৮), বাড়ি কলকাতার কসবা থানার প্রসূন্য নস্কর লেনে এবং পিযুষ কান্তি ঘোড়ই (৫১), বাড়ি কলকাতার নরেন্দ্রপুর থানার তেঁতুলবেড়িয়া, নাতুনপাড়া এলাকায়।
পুলিশ সূত্রে জানাতে পারা গেছে, গত ২৮জানুয়ারি কসবা থানার রাজডাঙ্গা, মেইন রোড এলাকার বাসিন্দা শুভাশীষ ব্যানার্জি বর্ধমান থানায় একটি লিখিত অভিযোগ জমা করেন। সেখানে তিনি উল্লেখ করেন, ৭জানুয়ারি একটি অপরিচিত ফোন নম্বর থেকে তাকে ফোন করে তার মেয়েকে মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি করে দেওয়ার কথা জানায়। ফোনকারী ব্যক্তি তাকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল যে তার মেয়েকে সরকারী প্রতিষ্ঠানে ভর্তি করিয়ে দেবেন। এরপর বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজে নমিনী কোটায় ভর্তির কথা জানিয়ে টাকা দাবি করেন। অভিযোগকারী শুভাশীষ ব্যানার্জী ১২হাজার ৫০০ টাকার একটি ব্যাংক ড্রাফট তৈরি করেন। প্রতারক চক্রের কোন এক ব্যক্তি এরপর ১৭জানুয়ারি মেয়েকে নিয়ে বর্ধমান মেডিক্যালে আসার জন্য জানায়। সেইমত শুভাশীষ ব্যানার্জী তার মেয়েকে নিয়ে দুপুর দেড় টা নাগাদ বর্ধমান রেল স্টেশনে এসে উপস্থিত হন। সেখানে সচিন নামে অজ্ঞাত পরিচয় এক ব্যক্তি তাদের সঙ্গে দেখা করে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজে নিয়ে যায়।
শুভাশীষ বাবু অভিযোগে জানিয়েছেন, মেডিকেল কলেজে নিয়ে গিয়ে অন্য একজনের মাধ্যমে সহকারী অধ্যাপক ড. টি.কে. মন্ডলের ঘরে নিয়ে আসেন তাদের দুজনকে। যেখানে অবিকল ডাক্তারের পোশাক পরা একজন ব্যক্তি তার মেয়ের সমস্ত আসল নথি এবং জেরক্স কপি নিয়ে নেয়। এবং কিছু ফর্মে সই করিয়ে বাইরে অপেক্ষা করতে বলে। আনুমানিক দুপুর আড়াইটা নাগাদ সেই ব্যক্তি মেডিকেল কলেজের বাইরে এসে শুভাশীষ বাবুর হাতে বর্ধমান মেডিক্যালের অধ্যক্ষের স্বাক্ষরিত ভর্তির নথি হস্তান্তর করেন। এবং উল্লেখ করে দেয়, ২৪ জানুয়ারি থেকে ২৯জানুয়ারির মধ্যে রিপোর্ট করতে। যদিও জমা নেওয়া আসল নথির কোনোটাই ফেরত করেনি ওই অপরিচিত ব্যক্তি।
এরপরই অভিযোগকারী শুভাশীষ ব্যানার্জী দেখতে পান বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজে তার মেয়ের ভর্তির কাগজপত্র সম্পূর্ন জাল। সঙ্গে সঙ্গে তিনি অভিযোগ দায়ের করেন বর্ধমান থানায়। আর এরপরই সাম্প্রতিক চাকরি নিয়ে রাজ্য জুড়ে একাধিক মামলা, বিতর্কের মাঝেই মেডিক্যালে ভর্তির এই বড়সড় চক্রের হদিস মেলায় তীব্র আলোড়ন ছড়িয়েছে। এমনকি খোদ বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজের নিরাপত্তা ব্যবস্থা সহ মেডিক্যালের কেউ এই প্রতারণা চক্রের সঙ্গে জড়িত আছে কিনা সেই বিষয়টিও ইতিমধ্যে তদন্তকারী পুলিশ আধিকারিকরা খতিয়ে দেখছেন বলে পুলিশ সূত্রে জানা গেছে।
ডি এস পি ট্রাফিক ২ রাকেশ কুমার চৌধুরী বলেন,’ মেডিক্যালে ভর্তি করানোর নামে প্রতারনা করা হয়েছে বলে একটি অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত চালিয়ে এই ঘটনায় যুক্ত চার জন ব্যক্তিকে বারাসত ও দত্তপকুর থানা এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ধৃতদের কাছ থেকে বেশ কিছু জাল কাগজপত্র ও একটি গাড়ি বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। সবকিছুই পরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে। প্রাথমিকভাবে অভিযুক্তরা তাদের দোষ স্বীকার করেছে। আমরা জানতে পেরেছি, ধৃত ব্যক্তিদের সঙ্গে আরো অনেকে এই কাজে লিপ্ত আছে। আদালত অভিযুক্তদের ১০দিনের পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছে। তদন্তের স্বার্থে অভিযুক্তদের আরো জিজ্ঞাসাবাদ চালানো হবে। প্রতারণা চক্রের সঙ্গে জড়িত বাকিদেরও গ্রেপ্তার করা হবে।’
অন্যদিকে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ কৌস্তুভ নায়েক বলেন,’ আমরা ইতিমধ্যেই আমাদের ওয়েবসাইটে বিজ্ঞপ্তি জারি করে দিয়েছি। যাতে সকলে জানতে পারেন মেডিক্যালে ভর্তি হওয়ার সঠিক পদ্ধতি কি। আর তাছাড়া পুলিশ প্রশাসনকেও জানিয়ে দেওয়া হয়েছে এই ঘটনার যথাযথ তদন্ত করে দোষীদের গ্রেফতার করার জন্য।’