ফোকাস বেঙ্গল ডেস্ক,বর্ধমান: টাকা দ্বিগুণ থেকে তিনগুণ করে দেওয়ার নাম করে দিনের পর দিন বহু মানুষের লক্ষাধিক টাকা প্রতারণা করার পর শনিবার বর্ধমান থানার পুলিশের জালে ধরা পড়লো প্রতারণা চক্রের দুই পান্ডা। ধৃতদের মধ্যে একজনের নাম গোপাল সিং, তার বাড়ি বর্ধমান শহরের কালনা রোডের খালাশিপাড়া এলাকায়। অন্য জনের নাম সীতারাম পোরেল, বাড়ি রায়না থানার মুক্তার পাড়া এলাকায় বলে পুলিশ সূত্রে জানা গেছে। শনিবার গোপন সূত্রে খবরের ভিত্তিতে পুলিশ অভিযান চালিয়ে বর্ধমান শহরের অনিতা সিনেমা গলির ভিতরে একটি হোটেলের তিনতলার একটি ঘর থেকে প্রতারণা চক্রের এই দুই পান্ডা কে আটক করে। পরে গ্রেপ্তার করা হয়।
পুলিশ জানিয়েছে, হোটেলের ঘরে প্রতারকদের কাছ থেকে বেশ কয়েকটি আয়োডিন ও হাইপো কেমিকেলের শিশি, পাঁচশো টাকার নোটের সাইজের কালো কাগজের বান্ডিল, প্রচুর সাদা কাগজ, ইনজেকশনের সিরিঞ্জ, সুতলি দড়ি, রুমের বিছানার চাদর সহ আরো বেশি কিছু সামগ্রী বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ধৃতরা তাদের দোষ স্বীকার করে নিয়েছে বলে পুলিশ সূত্রে জানা গেছে। পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ধৃত গোপাল সিং বছর খানেক আগেও শহরের খাগড়াগড়, মাঠপাড়া এলাকা থেকে টাকা জাল করার অপরাধে গ্রেপ্তার হয়েছিল। সেইসময় তার কাছ থেকে বিদেশী মুদ্রা নকল করার কিছু সামগ্রীও বাজেয়াপ্ত করেছিল পুলিশ।
শনিবার গোপন সূত্রে পুলিশের কাছে খবর আসে, বর্ধমান শহরের অনিতা সিনেমা গলিতে একটি হোটেলের তিনতলার ঘরে টাকা দ্বিগুণ করে দেওয়ার নামে একটি প্রতারণা চক্রের লোকজন জড়ো হয়েছে। এরপরই পুলিশ খদ্দের সেজে সেখানে হাজির হয়। সিগন্যাল পেতেই পুলিশ হোটেলের ঘরে ঢুকে ঘিরে ফেলে প্রতারকদের। কিভাবে চলছিল প্রতারণা? পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, প্রথমে প্রতারকরা খদ্দেরদের বোঝাতো যে তাদের কাছে যে কোনো পরিমাণ টাকা নিয়ে আসলেই তারা তার দ্বিগুণ করে ফেরত দিতে পারে। এরপর প্রাথমিকভাবে একটি বিশেষ কৌশল ফেঁদে ওই খদ্দেরের সামনেই দু ধরনের তরল কেমিকেল ( আয়োডিন ও হাইপো ) ব্যবহার করে একটি পাঁচশো টাকার নোট কে দুটো করে দেখিয়ে দিতো।
এরজন্য প্রতারকরা পাঁচশ টাকার নোটের সাইজের প্রচুর সাদা কাগজ কেটে রেখেছিল। সেই কাগজের টুকরো কেমিকেলের তরলে ( আয়োডিন ) ডুবিয়ে আসল পাঁচশো টাকার একটি নোট কে একসাথে মিশিয়ে অন্য একটি বড় সাদা কাগজে মুড়িয়ে সুতো দিয়ে বেঁধে দিতো। পড়ে একটি কাগজে আগুন জ্বালিয়ে সেই মোড়ানো কাগজের টুকরো কে তাতে সেঁকে নিয়ে হাইপো কেমিকেল দিয়ে ধুয়ে নিতো। আর এই কায়দায় খদ্দেরের চোখে ধুলো দিয়ে একটা নোট কে দুটো নোট দেখিয়ে খদ্দের কে বোকা বানাচ্ছিল প্রতারকরা। পড়ে এই কায়দায় লক্ষ লক্ষ টাকা দ্বিগুণ বা তিনগুণ করে নেওয়ার মোহে পরে সর্বশান্ত হচ্ছিলো মানুষ। শনিবার বর্ধমান থানার পুলিশের তৎপরতায় প্রতারকদের পর্দা ফাঁস হয়ে গেলো।