ফোকাস বেঙ্গল ডেস্ক: দুর্গাপূজা মিটতে না মিটতেই কালীপুজো আসতে চলেছে। গৌরী এবার শ্যামবর্ণা হয়ে আসবেন, মর্ত্যে আসবেন কালী রূপে। দুর্গা পুজোর দশমীতে মায়ের বিদায় মুহূর্তের কষ্ট, আনন্দ এবং হাসির রেশ কাটতে না কাটতেই এবার শ্যামাঙ্গীর আগমন মুহূর্ত। কিন্তু কেন হিমালয় কন্যা গৌরী কালী হলেন? এই প্রসঙ্গে বহু মত প্রচলিত। একটি মত অনুসারে বলা হয় কালকে ধারণ করে আছেন বলেই দেবী কালী, উৎপত্তি, স্থিতি ও মহাপ্রলয়ের পেছনে কাজ করে এই কাল শক্তি, এই কাল সমস্ত কিছুকে গ্রাস করে আর এই কালকেই গ্রাস করেন বলেই দেবী কালী। মহা প্রলয়ের কাল শক্তি মহাকালীর ভেতরেই অন্তর্হিত হয়ে যায়।
আরেকটি মত অনুসারে বলা হয় যে, দেবী আসলে শ্যামবর্ণা নন তিনি অত্যন্ত উজ্জ্বলবর্ণা, কিন্তু তার সেই ঔজ্জ্বল্য এতটাই প্রখর যে আমাদের চর্ম চোখে তা দেখা যায় না, তাই সেই উজ্জ্বলতাকে আমরা এই ক্ষুদ্র চোখে দেখতেই পায় না, যেমনভাবে ভগবান শ্রীকৃষ্ণের প্রখর উজ্জ্বল তেজ অর্জুন দিব্য দৃষ্টি দিয়েও দেখতে পাচ্ছিলেন না, ঠিক তেমনি কালী ও উজ্জ্বল কিন্তু আমরা তাকে শ্যামবর্ণা দেখি।
মা কালীর আবির্ভাব মুহূর্ত সম্পর্কে বলা হয় যে, মা দুর্গার ভ্রু যুগলের মাঝখান থেকেই দেবী কালিকা আবির্ভূতা হোন। স্বর্গ যখন অসুর শক্তি দখল করে নিয়েছে তখন দেবতারা প্রাণভয়ে ভীত হয়ে মহামায়ার আশ্রয় নিলেন, দেবী মহামায়া দুর্গা তখন অবতীর্ণ হলেন যুদ্ধে। অসুরদের প্রধান রক্তবীজকে বধ করবার সময় দেবী দুর্গা দেখেন যে তার বধ করা সম্ভব হচ্ছে না কারণ সে ব্রহ্মার বরপ্রাপ্ত হওয়ায় তার শরীরের এক ফোঁটা রক্ত মাটিতে পড়লেও তা থেকে একাধিক অসুরের জন্ম হচ্ছে। এই দৃশ্য দেখে দেবী দুর্গা অত্যন্ত রেগে যান তখন তার ভ্রুযুগলের মাঝখান থেকে আবির্ভূত হন দেবী কালী। তিনি রুদ্র মূর্তি ধারণ করে অসুর বধ করতে থাকেন।
রক্তবীজকে বধ করবার সময় তিনি এক হাতে বধ করছিলেন এবং জিভ দিয়ে তার শরীরের রক্ত পান করছিলেন। এইভাবেই রক্ত বীজের বিনাশ সাধন সম্ভব হয়, এরপর দেবী সকল অসুরদের বধ করতে করতে বিজয় উল্লাসে প্রবল তাণ্ডব নৃত্য করতে শুরু করেন। এই সময় দেবী অসুরদের ধড়হীন মুন্ড দিয়ে বানাচ্ছিলেন নিজের কোমর বন্ধ আর গলার মালা। তার হুংকার ও তাণ্ডবে ত্রিভুবন কেঁপে উঠছিল। দেবীকে না থামালে প্রলয় আসন্ন বুঝতে পেরে স্বয়ং দেবাদিদেব মহাদেব দেবীর যাত্রাপথের মাঝখানে শুয়ে পড়েন। সেইসময় দেবী কালী মৃতদেহ ভেবে স্বামীর বুকেই পা রাখেন। কিন্তু এরপর তিনি যখন দেখেন যে আসলে তিনি তার স্বামীর বুকে পা রেখেছেন তখন তিনি লজ্জায় নিজের জিভ বার করে ফেলেন ও নিজের জিভ কেটে ফেলেন। আর দেবী এইরূপেই ত্রিভূবনে পূজিতা হয়ে আসছেন।