রাজনীতি

বর্ধমানে শুভেন্দু অধিকারীর কার্টুন ছবি সহ হোর্ডিং, আলোড়ন, রাজনৈতিক তরজা

ফোকাস বেঙ্গল ডেস্ক,বর্ধমান: নাম উল্লেখ না করে বর্ধমান শহরের বিভিন্ন জায়গায় রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর চেহারার আদলে কার্টুন চিত্র দেওয়া ‘নিরুদ্দেশ সংবাদ’ শীর্ষক একাধিক হোর্ডিং দেওয়া কে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক ভাবে তীব্র আলোড়ন ছড়াল বুধবার। অনেক সময়ই এই ধরনের হোর্ডিং কে বা কারা লাগিয়ে দেয় সেটা পরিষ্কার থাকে না। তবে এক্ষেত্রে এই হোর্ডিং এর নিচে পরিষ্কার লেখা রয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস সোশ্যাল মিডিয়া ও আইটি সেল। আর এরপরই এই হোর্ডিংয়ের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে সরব হয়েছে বিজেপির বর্ধমান সাংগঠনিক জেলার নেতৃবৃন্দ। বুধবার এই হোর্ডিংয়ের সামনে দাঁড়িয়ে সামাজিক মাধ্যমে ‘লাইভ’ করে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিয়ে কুরুচিকর মন্তব্য করে বিতর্ক বাড়িয়েছেন বিজেপির বর্ধমান সাংগঠনিক জেলার সহ সভাপতি শ্যামল রায়।

তৃণমূল কংগ্রেস সোশ্যাল মিডিয়া ও আইটি সেল-এর এই হোর্ডিং-এ রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর যেমন নাম উল্লেখ করা হয়নি, তেমনই কোনও ছবিও ব্যবহার করা হয়নি। যদিও বিরোধী দলনেতার চেহারার আদলে কার্টুন চিত্র রয়েছে। সেই ছবির তলাতেই লেখা রয়েছে, ‘এমন কোন ব্যক্তিকে খুঁজে পেলে দ্রুত সন্ধান দিন’। হোর্ডিং এর মাঝখানে নিখোঁজ ব্যক্তির সন্ধান চেয়ে যেভাবে পোস্টার দেওয়া হয় তেমনই বর্ণনা দেওয়া হয়েছে। লেখা হয়েছে, ‘রূপ: দেখতে গোলগাল, নাদুসনাদুস। মেরুদণ্ড নেই। গলায় গেরুয়া উত্তরীয়। ঠিকানা: বাড়ি কাঁথিতে।’ অসুখেরও উল্লেখ রয়েছে সেখানে। লেখা হয়েছে, ‘অসুখ: ভোট এলেই লাইট বন্ধ করে দেন। নিয়মিত দুশো দুশো চিৎকার করে মধ্যরাতে ঘুম থেকে উঠে পড়েন। অকারণ ভাট বকতে ভালবাসেন। ডিসেম্বরে সরকার ফেলে দেওয়ার হুমকি দেন, তারপর লজ্জাবতী হয়ে মুখ লুকান। ক্যামেরায় ঠোঙা মুড়িয়ে ঘুষ নিতে দেখা যায়।’

এখানেই শেষ নয়। হোর্ডিংয়ে আরও লেখা হয়েছে, ‘বিশেষ চিহ্ন: অভিষেক শব্দটি শুনলেই দাঁত খিঁচিয়ে কামড়াতে আসেন। বেগম বেগম করে হেঁচকি তোলেন। লক্ষ্মীর ভাণ্ডার দেওয়া হলে বিরোধিতা করেন, কিন্তু গ্যাসের দাম বাড়লে চুপ থাকেন।’ বুধবার দুপুরের পর বর্ধমান শহরের পারবিরহাটা, কার্জন গেট চত্বর সহ আরো তিনটি জায়গায় এই হোর্ডিং নজরে আসতেই আলোড়ন ছড়িয়ে পড়ে। ঘটনার বিষয় জানাজানি হতেই  বিজেপির জেলার সহ সভাপতি শ্যামল রায়, যুব মোর্চার জেলা সভাপতি পিন্টু সাম সহ অন্যান্য তৃণমূল নেতারা পারবীরহাটা এলাকায় জড়ো হয়ে যান। বিক্ষোভ দেখাত  শুরু করেন তারা। সেখান থেকেই মোবাইল ফোনের মাধ্যমে সোশ্যাল মিডিয়ায় লাইভ করতে শুরু করেন বিজেপি নেতা শ্যামল রায়।

শ্যামল রায় বলেন, “শুভেন্দু অধিকারী যতদিন ওদের দলে ছিল তখন ভাল ছিল। এখন বিরোধী দলনেতা হয়ে তৃণমূলের ঘুম ছুটিয়ে দিয়েছেন। আর তাই এখন এমন কুৎসা করছে।” এরপরই তিনি পাল্টা মমতা বন্দোপাধ্যায় ও অভিষেক বন্দোপাধ্যায়ের নামে হোর্ডিং টাঙানোর হুঁশিয়ারি দেন। তিনি বলেন, “অবিলম্বে এই হোর্ডিং খোলা না হলে বৃহস্পতিবার আমরা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিয়ে পোস্টার দেবো। তখন সামলাতে পারবে তো তৃণমূল।” শ্যামল রায় তার সোশ্যাল মিডিয়া লাইভে মুখ্যমন্ত্রীকে নিয়েও নানান কুরুচিকর মন্তব্য করেছেন এদিন।

হোর্ডিং বিতর্কে বিজেপি নেতাদের পাল্টা জবাব দিতে তৃণমূলের পূর্ব বর্ধমান জেলার মুখপাত্র প্রসেনজিৎ দাস বলেন, হোর্ডিং এ কোথাও শুভেন্দু অধিকারীর নাম বা ছবিও নেই, কিছু কথা লেখা আছে। ওরাই তো চিৎকার করে বুঝিয়ে দিল এটা শুভেন্দু কে নিয়ে লেখা। তৃণমূলের আই টি সেল শুধু সন্ধান চেয়ে হোর্ডিং দিয়েছিল। ওরাই জনগণকে জানিয়ে দিয়েছে এই হোর্ডিং কাকে উদ্দেশ্য করে দেওয়া হয়েছে।’ তৃণমূল মুখপাত্র বরং ক্ষোভ উগরে দিয়ে বলেন, “ওরা মুখ্যমন্ত্রী, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিয়ে কুৎসা করতে বাকিটা কী রেখেছে। শুভেন্দু অধিকারী অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছোট্ট শিশুর জন্মদিন নিয়েও কুৎসা করতে ছাড়েনি। এখন ঠাকুর ঘরে কে রে, আমি তো কলা খায়নি অবস্থা ওদের।”

বিজেপির হোর্ডিং নিয়ে হইচইকে এইভাবেই ব্যাখ্যা করছে তৃণমূল। দলের পূর্ব বর্ধমান জেলার মুখপাত্র প্রসেনজিৎ দাস বলেন, “তৃণমূল কংগ্রেস সোশ্যাল যিডিয়া ও আইটি সেলের ওইসব হোর্ডিংয়ে কোথাও শুভেন্দুর নাম লেখা নেই। ছবিও নেই। কিছু কথা লেখা আছে। বিজেপিই তো বলে দিচ্ছে যে কথা লেখা হয়েছে তা শুভেন্দুকে নিয়ে। আইটি সেল কিছু কথা লিখে সন্ধান চেয়েছিল। সেই সন্ধান বিজেপিই দিয়ে দিয়েছে।” পাশাপাশি, বিজেপির পাল্টা কুরুচিকর হোর্ডিং দেওয়ার বিষয়ে তৃণমূল মুখপাত্র বলেন, “ওরা মুখ্যমন্ত্রী, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিয়ে কুৎসা করতে বাকিটা কী রেখেছে। শুভেন্দু অধিকারী অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছোট্ট শিশুর জন্মদিন নিয়েও কুৎসা করেছে।”

সূত্রের খবর,  সম্প্রতি দেবাংশু ভট্টাচার্যকে তৃণমূল সোশ্যাল মিডিয়া ও আইটি সেলের রাজ্যের ইনচার্জ করেছে দল। আর তারপর এই হোর্ডিং পড়লো বর্ধমানে। সূত্রের খবর, কলকাতা থেকেই পাঠানো হয়েছে এই হোর্ডিং। প্রসঙ্গত ডিসেম্বর মাসের তিনটি তারিখ উল্লেখ করে কিছুদিন আগেই বিরোধী দলনেতা রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় নানান মন্তব্য করেছিলেন। আর তারপরেও রাজ্যের মানুষ সেই সব বক্তব্যের কার্যত কোন সারবত্তা খুঁজে পায়নি। তৃণমূলের দলীয় সূত্রে খবর, মানুষ কে নাকি ওরা এর আগেও বোকা মনে করেছিল। এবারেও সেই চেষ্টা চালিয়েছে। আর তাই আইটি সেল রাজ্যের বিরোধী দলনেতাকে টার্গেট করেই প্রচারে ঝাঁপাচ্ছে বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল।