ক্রাইম

ইদিলপুর থেকে কখনও বিনা চালানে, কখনও ভিন জেলার চালানে চলছে দেদার বালি পাচার, উদাসীন প্রশাসন

ফোকাস বেঙ্গল ডেস্ক,বর্ধমান: বর্ষা পরবর্তী নদী থেকে বালি উত্তোলন শুরু হতে আরো কয়েকদিন দেরি আছে। প্রশাসনের জারি করা নির্দেশে এই মুহূর্তে নদী থেকে বালি তোলা নিষিদ্ধ। তারপরেও চোরাগোপ্তা কিছু অসাধু বালি কারবারি রাতের অন্ধকারে পুলিশ ও ভূমি দপ্তরের নিয়মিত নজরদারির গাফিলতি ও উদাসীনতা কে কাজে লাগিয়ে দামোদরের বিভিন্ন জায়গা থেকে বালি চুরি করে পাচার করছে বলে অভিযোগ উঠে আসছে। মঙ্গলবার সকালে বর্ধমান থানার পুলিশ শহরের তেজগঞ্জ এলাকা থেকে বেআইনি ভাবে বালি নিয়ে যাওয়ার অভিযোগে চারটি ট্রাক্টর আটক করেছে। পাশাপশি এক ট্রাক্টর মালিক সহ দুজন চালককেও গ্রেপ্তার করে বর্ধমান আদালতে পাঠিয়েছে। পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ট্রাক্টর গুলো বেলকাসের দিক থেকে বালি নিয়ে আসছিলো। বালি পরিবহনের কোনো সঠিক কাগজ দেখাতে না পারায় পুলিশ ট্রাক্টর সহ চালকদের আটক করে।

এদিকে এলাকাবাসীদের একাংশ পুলিশেরই ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলছে। তাদের অভিযোগ, ইদিলপুর এলাকার একটি বালি ঘাট থেকে প্রতিদিন একাধিক ১০চাকা, ১২চাকা, ১৬চাকা ডাম্পার বালি লোড করে কোনোটা বিনা চালানে, আবার কোন গাড়ি খন্ডঘোষ, বীরভূমের চালান ব্যবহার করে বালি নিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছে। এইসব গাড়ির বেশিরভাগকেই ওভারলোড করে বালি নিয়ে যেতে দেখা যাচ্ছে। কিন্তু পুলিশ বা ভূমি দপ্তরের কাউকেই এই বেআইনি কারবার বন্ধে কোনরকম পদক্ষেপ করতে দেখা যাচ্ছে না বলে অভিযোগ। স্থানীয়দের একাংশের অভিযোগ, এলাকার এক প্রভাবশালী বালি কারবারির সঙ্গে পুলিশ ও প্রশাসনের একাংশের গোপন সমঝোতা থাকার কারণেই দিনের পর দিন বেআইনি ভাবে বালির কারবার চললেও অভিযানের কোন নামগন্ধ থাকে না। এমনকি সেই বালি কারবারির সঙ্গে শাসক দলের প্রভাবশালী নেতাদের ঘনিষ্ট যোগাযোগ থাকার সুযোগকে কাজে লাগিয়ে বেআইনি কারবার চালিয়ে যাচ্ছে বেপরোয়া ভাবে বলে অভিযোগ অনেকের।

রীতিমত বীরভূম জেলার নানুরের চালান দিয়ে বর্ধমানের ইদিলপুর থেকে মজুদ বালি গাড়িতে লোড করে বেরিয়ে যাচ্ছে অনায়াসে। একইভাবে খন্ডঘোষের শালুন এলাকার একটি বালি খাদের চালানও ব্যবহার করা হচ্ছে ইদিলপুরের বালি বিক্রির জন্য। এরপরেও বিনা চালানের বালির গাড়ি তো রয়েছেই। সেগুলোর বেশিরভাগ ওভারলোড বালি নিয়ে বেরোচ্ছে প্রতিদিন। সকাল থেকে ঘাটে লোড করে দাঁড়িয়ে থাকার পর, বিকেলের পর থেকে ওইসমস্ত বালি বোঝাই ডাম্পার ইদিলপুর বাঁধের রাস্তা ধরে আঞ্জিরবাগান হয়ে জাতীয় সড়কে উঠে যাচ্ছে।

স্থানীয়দের অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন, লক্ষ লক্ষ টাকার রাজস্ব চুরি করে একদিকে ফাঁক করে দিচ্ছে কিছু প্রভাবশালী বালি কারবারিরা, আর পুলিশ ‘কোটা ‘পূরণ করার জন্য মাঝে মধ্যে দু চারটে বালির ট্রাক্টর ধরে সাধু সাজার কাজ করছে? আসলে এইসবই ‘ আই ওয়াশ ‘ করার পদ্ধতি, রাঘব বোয়ালদের আড়াল করতেই মাঝে মধ্যে এইরকম দু চারটে ট্রাক্টর ধরা হয় থাকে। এদিকে সারা বছরই এই এলাকায় বালি চুরি করে কারবার চালিয়ে যায় কিছু স্থানীয় বালি মাফিয়া। আসলে বালি চুরি করাটা এই এলাকার একটা শিল্প! জেলা ভূমি রাজস্ব দপ্তর থেকে ব্লক ভূমি আধিকারিক ও পুলিশ এর নিয়মিত নজরদারির অনিহা, গাফিলতির কারণেই সরকারের কোটি কোটি টাকা প্রতিবছর লুঠ হয়ে যাচ্ছে এই এলাকা থেকে বলে স্থানীয় এলাকাবাসীদের অধিকাংশের অভিযোগ।

ক্রমশ…….

Recent Posts