বিশ্ববিদ্যালয়ের অফিসে আসা বন্ধ করলেন অপমানিত উপাচার্য, ছাড়লেন নীল বাতির গাড়ি, সই করবেন না কোন ফাইলে

Souris  Dey

Souris Dey

ফোকাস বেঙ্গল ডেস্ক,বর্ধমান: বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ভদ্রভাবে অফিসে আসবেন, আবার ভদ্রভাবে অফিস থেকে বাড়ি যাবেন। এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু তার অফিসের গেটে তালা লাগানোর অধিকার কারুর নেই। সংবিধানেও বলা নেই। কিন্তু ১৩আগষ্ট চার পাঁচ জন ছাত্রের সঙ্গে প্রায় ৫০জন বহিরাগত বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের ঘরে ঢুকে, অফিসে ঢুকে তান্ডব চালিয়েছে। অজস্র, অকথ্য কথাবার্তা লিখে গেছে, আপনারা আসবেন, আমি একটা ভিডিও করে পাবলিকের মধ্যে ছড়াবো।” ১৫আগষ্ট দেশের ৭৮তম স্বাধীনতা দিবস উদযাপন উপলক্ষে বক্তব্য রাখতে গিয়ে এমনি বিস্ফোরক তথ্য তুলে ধরেন বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. গৌতম চন্দ্র।

বিজ্ঞাপন

 

তিনি বলেন, “দায়িত্ব ছিলনা কারুর? বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৫০জন গার্ড আছেন। প্রত্যেক মাসে আমি সই করি মাইনে হয় তাদের। আমাকে সুরক্ষা দেওয়ার দায়িত্ব কি তাদের ছিলোনা? যারা তাদের কে দেখেন তাদের কোন দরকার ছিলনা দেখার? রেজিস্ট্রার কেন ফোন করে পুলিশ ডাকলেন না? উপাচার্য কে সুরক্ষা দেওয়ার দায়িত্ব কি নেই বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কারুর? আমাকে কেন পিছন দিক দিয়ে পালিয়ে যেতে হলো?

কাগজে বেরিয়েছে ‘ পলাতক ভিসি ‘। সবার লজ্জা এটা। মনে থাকে যেন সবারই লজ্জা। ১৩তারিখ পর্যন্ত আমি কাজ করেছি। ১৪তারিখ আমি অফিস যাইনি। আর যাবোও না। যতদিন না ভদ্রভাবে উপাচার্যের অফিসে ঢুকতে পারবো, ভদ্রভাবে বেরিয়ে বাড়ি যেতে পারবো – ততদিন উপাচার্যের অফিসে ঢুকবো না। নীলবাতি লাগানো গাড়িতে আর চাপছি না। এই যে ভাঙ্গা বাংলো টাতে আমি থাকি উপাচার্যের সেখানে আমি ভাড়া দিয়ে থাকি। ভাইস চ্যান্সেলরের যে ভাতা সেটা আমি নিই না, প্রফেসরের মাইনে নি। কাজেই কোন ফাইলে আমি আর সই করবো না। যতদিন না আমি ভদ্রভাবে অফিসে যেতে পারব এবং অফিস থেকে বাড়ি ফিরতে পারবো। ”

তিনি আরো বলেন, ” স্বাধীনতা মানে স্বেচ্ছাচারিতা নয়, অরাজগতা নয়। বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ভদ্রভাবে অফিসে ঢুকবেন, ভদ্রভাবে অফিস থেকে বেরিয়ে যাবেন। তাঁর একটা পরিবার আছে। সংসার আছে। তাঁর গেটে তালা লাগানোর অধিকার কারুর নেই। সংবিধানেও বলা নেই। ঢোকবার সময় তালা লাগানো, বেরোবার সময় তালা লাগানো। আর মানে কি স্বাধীনতা? এই উৎশৃঙ্খলতার সংবিধানে কোথায় অধিকার দেওয়া রয়েছে? আমরা যারা এই বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরি করি, মাইনে পাই, সেই মাইনে টা গরিবের পয়সায় পাই। যে মাইনটা পাই সেটা যথেষ্ট পাই। অথচ আমাদের পেট ভরেনা। সেই গরিবের টাকা তছরুপ করি। স্বাধীনতা মানে স্বেচ্ছাচারিতা নয়, উৎশৃঙ্খলতা নয়, অরাজগতা নয়। আসলে স্বাধীনতার মানেটাই আমরা এখনো ঠিকমত বুঝিনি। আমরা বুঝেছি স্বাধীনতা মানে যা খুশি তাই করা যায়। কিন্তু সেটা যে নয় সেটাই এখনও বুঝতে হবে আমাদের। ”

উপাচার্য গৌতম চন্দ্র স্বাধীনতা দিবসের বক্তব্যে আরো বলেন, ” দেশ কে স্বাধীন করতে হাজার হাজার মানুষ শহীদ হয়েছেন। আমরা জানি দেশের প্রথম শহীদ মঙ্গল পান্ডে। সিপাই বিদ্রোহের সময় তিনি শহীদ হয়েছিলেন। কিন্তু প্রকৃত অর্থে স্বাধীনতা আন্দোলনের প্রথম শহীদ ক্ষুদিরাম। তাহলে আজ আধুনিক ভারতবর্ষের যে গেটওয়ে অর্থাৎ নিউ দিল্লির যে এয়ারপোর্ট সেই এয়ারপোর্টের নাম কেন শহীদ ক্ষুদিরাম ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্ট হবে না? দেশের জন্য প্রাণ দিলেন ক্ষুদিরাম আর যারা দেশের গদিতে বসে উপভোগ করলেন তাদের নামে কেন এয়ারপোর্ট হবে। পৃথিবীর বেশিরভাগ লোক দিল্লির এই এয়ারপোর্টের নাম টা জানে, তাহলে তারা ক্ষুদিরামের নামটা জানুক। যদি প্রয়োজন হয় আমরা সবাই মিলে এই অর্জি সাক্ষর করে দেশের প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠাতে পারি। “

আরো পড়ুন