বিপুল পরিমাণ রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে বর্ধমানে ট্রেড লাইসেন্স ছাড়াই চলছে শতাধিক ব্যবসা, উদাসীন পৌর কর্তৃপক্ষ

Souris  Dey

Souris Dey

সৌরীশ দে,বর্ধমান: পুরসভার আয়ের অন্যতম উৎস ট্রেড লাইসেন্স বাবদ প্রায় কয়েক কোটি টাকা প্রতি বছর বকেয়া থেকে যাওয়ায় পুরসভা আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে – এই খবর প্রথম ফোকাস বেঙ্গল প্রকাশ করার পরই বর্ধমান পুরসভা রীতিমত নড়েচড়ে বসে। অতি সম্প্রতি ২০২৩ – ২৪ আর্থিক বর্ষের বাজেট পেশ করতে গিয়ে পুরসভার চেয়ারম্যান পরেশচন্দ্র সরকার সংবাদ মাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে বলেন,’ ট্রেড লাইসেন্স বাবদ বর্ধমান পুর এলাকায় যে বিপুল পরিমাণ অর্থ বকেয়া রয়েছে তার পুনরুদ্ধারে শীঘ্রই পুরসভা অভিযানে নামবে। এমনকি একাধিক সরকারি প্রতিষ্ঠান বছরের পর বছর ধরে যে লক্ষ লক্ষ টাকা কর বাবদ ( কোটির অংকেও বাকি আছে) বকেয়া রেখেছে, সেই সমস্ত প্রতিষ্ঠান কেও ‘লাল’ চিঠি ধরানো হয়েছে। এবার আইনি পদক্ষেপ করার বিষয়ে ভাবনাচিন্তা করা হচ্ছে।

বিজ্ঞাপন

ইতিমধ্যেই শহর জুড়ে মাইকিং করে এই বিষয়ে ব্যাপক প্রচার অভিযানও শুরু করেছে পুরসভা। মোট কথা সার্বিকভাবে বর্ধমান পুরসভা আগামী দিনে বকেয়া কর ও অনাদেয় ট্রেড লাইসেন্স বাবদ টাকা আদায়ে যে কড়া পদক্ষেপ নিতে চলেছে তার ইঙ্গিত খোদ পুরসভার চেয়ারম্যান ইতিমধ্যেই দিয়েছেন। কিন্তু বর্ধমান পুর এলাকার প্রতিটি ওয়ার্ড জুড়ে অলিতে গলিতে যেভাবে বিনা ট্রেড লাইসেন্সে শ’য়ে শ’য়ে প্রতিদিন যেকেউ, যে কোনো ধরনের ব্যবসা পুর আইন কে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে শুরু করে অনায়াসে বছরের পর বছর চালিয়ে আসছে সেই সমস্ত ব্যবসায়ীক প্রতিষ্ঠানের দিকেও নজর দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন শহরবাসী অনেকেই। তাদের অভিযোগ মুদিখানার থেকে জিমন্যাসিয়াম, এমনকি খাবারের দোকান খুলে বিনা ট্রেড লাইসেন্সেই ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে বহু মানুষ। ব্যক্তি মালিকানাধীন দোতলা, তিনতলা বাড়ির নিচে রীতিমত সাটার লাগিয়ে একাধিক দোকানে ব্যবসা চলছে। অনেকক্ষেত্রেই সেইসব দোকানের কোনো নামও নেই।

এই সমস্ত ব্যবসায়ীরা সারা বছর লক্ষাধিক টাকা রোজগার করলেও পুরসভার কোষাগারে কোন টাকাই আসে না বলে অভিযোগ। আর এই পরিস্থিতির জন্য প্রত্যক্ষভাবে পুরসভার গাফিলতি, উদাসীনতা ও পরিকল্পনার অভাব কেই দায়ী করেছেন শহরবাসীর একাংশ। অনেকেই অভিযোগ করেছেন, সারা শহরজুড়ে কয়েক হাজার নানান ধরনের ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান পাড়ায় পাড়ায় ব্যবসা করছে। পৌরসভা ইচ্ছা করলেই এই খাতে কয়েক কোটি টাকা রাজস্ব আদায় করতে পারে। শহরের একাধিক উন্নয়নমূলক কাজে সেই টাকা ব্যবহার করা যেতে পারে। কিন্তু পুরসভার এই ব্যাপারে কোনো ‘মনিটরিং’ ব্যবস্থা না থাকার সুযোগে যে কেউ, যেখানে খুশি ব্যবসা চালু করে দিচ্ছে।

উল্লেখ্য, পুর এলাকায় যেকোনো জায়গায় যেকোন ধরনের ব্যবসা শুরু করতে গেলে প্রতিষ্ঠানের ট্রেড লাইসেন্স প্রথমেই বাধ্যতামূলক। সেটা পাড়ার ভিতরে হোক কিংবা শহরের মূল ব্যবসায়িক স্থানে। ব্যবসা শুরু করতে হলে পুরসভার কাছে বৈধ অনুমোদন নিয়ে তবেই ব্যবসা করা যায়। কিন্তু এই জায়গায় বর্তমানে বর্ধমান শহরে কয়েক হাজার ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান ট্রেড লাইসেন্স না নিয়েই অনায়াসে, বিনা বাধায় ব্যবসা করে চলেছে বলেই অভিযোগ। আর ব্যবসায়ীদের এই মানসিকতার পিছনে কার্যত বর্ধমান পুরসভার গাফিলতি, উদাসীনতা এমনকি রাজনৈতিক সমীকরণের প্রসঙ্গও উঠে আসছে।

ফলে পুরনো ব্যবসায়ীদের ট্রেড লাইসেন্স বাবদ লক্ষাধিক টাকা বকেয়া আদায়ের পাশাপাশি পুর এলাকার প্রতিটি ওয়ার্ডে ট্রেড লাইসেন্স নেই এমন ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করার বিষয়ে যাতে ব্যবস্থা গ্রহণ করে এই ব্যাপারেও শহরবাসীর অনেকেই দাবি জানিয়েছেন। অনেকেই জানিয়েছেন, এই ব্যাপারে প্রতিটি কাউন্সিলরদের তাদের নিজের এলাকায় ব্যবসায়ীদের আদৌ ব্যবসা করার কোনো বৈধ অনুমতি আছে কিনা তা দেখার এবং না থাকলে সেই বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার ক্ষমতা পুরসভার দেওয়া উচিত। প্রয়োজনে সকলকে নিয়ে আলোচনা করে শহরের উন্নয়নের প্রয়োজনে পুরসভার এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত। সেক্ষেত্রে পুরসভার আয় বাড়লে প্রত্যক্ষভাবে শহরের উন্নয়নেই সেই অর্থ ব্যয় করতে পারবে পুরসভা বলে মত প্রকাশ করেছেন পুর কর্মীদের একাংশ। 

বর্ধমান পুরসভার চেয়ারম্যান পরেশচন্দ্র সরকার এই প্রসঙ্গে বলেন,’ ইতিমধ্যেই আমরা শহরের ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলোর ট্রেড লাইসেন্স সম্মন্ধীও বিষয় নিয়ে খোঁজ খবর নিতে শুরু করেছি। যাদের ট্রেড লাইসেন্স আছে অথচ প্রতিবছর রিনিউ করছেন না, তাদের তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। ব্যবসা করছেন অথচ ট্রেড লাইসেন্স নেই এই ধরনের ব্যবসায়ীদের অবিলম্বে ট্রেড লাইসেন্স করার জন্য প্রচার চালানো হচ্ছে। পুরসভা এই বিষয়ে ইতিমধ্যেই পদক্ষেপ নিতে শুরু করেছে।’

আরো পড়ুন