ইচ্ছে করলেই পাঁচ মিনিটে নিশ্চিহ্ন করে দিতে পারতাম সিপিএম কে, মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ ছিলনা তাই – খোকন দাস

Souris  Dey

Souris Dey

ফোকাস বেঙ্গল ডেস্ক,বর্ধমান: বামেদের আইন অমান্য কর্মসূচি কে কেন্দ্র করে রণক্ষেত্রের চেহারা নিয়েছিল বুধবার কার্জনগেট এলাকা। বামেদের তাণ্ডবে তছনছ হয়ে গিয়েছিল সরকারি সম্পত্তি থেকে খোদ বিধায়কের কার্যালয়। এমনকি পুলিশ কে মারধর, দোকানে লুঠপাট সহ সাধারণ মানুষের উপরে অত্যাচার চালিয়েছিল সিপিআইএমের হার্মাদরা। ঘটনায় পুলিশ রাত পর্যন্ত অভিযান চালিয়ে পুরুষ ও মহিলা সহ শতাধিক সিপিএম কর্মী সমর্থকদের আটক করে। বৃহস্পতিবার বর্ধমান আদালতে ৪৬ জন সিপিএমের নেতা কর্মীকে তোলা হয়। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে বাকিদের ব্যক্তিগত জামিনে থানা থেকেই ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

এদিন আদালতে ধৃতদের মধ্যে কোন মহিলা ছিলো না। এদিকে এদিন নতুন করে সিপিআইএম এর রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিমের নামে দুটি অভিযোগ হয়েছে। একটি পুলিশ ও অন্যটি তৃণমূল এর যুবনেতা নুরুল আলম করেছেন বলে আদালত সূত্রে জানা গেছে। এদিন বিচারক নূরুল আলমের অভিযোগকেও মূল মামলার সঙ্গে যুক্ত করার নির্দেশ দিয়েছেন। সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও সিপিএমের জেলা সম্পাদক মন্ডলীর সদস্য আভাস রায়চৌধুরী কে এদিন পুলিশ আদালতে পেশ করার সময় তিনি সংবাদ মাধ্যমের সামনে বলেন, ‘আমরা গরু, কয়লা বা বালি চুরি করে আদালতে আসিনি। লড়াইয়ের ময়দান থেকে পুলিশ অন্যায়ভাবে জোর করে আমাদের গ্রেপ্তার করেছে। এ লড়াই শুরু হলো। এ লড়াই আমাদের জারি থাকবে।’

এদিন আদালতের নির্দেশে ৩৪ জনের জেল হেফাজত ও ৭ জনের পুলিশি হেফাজত হয়েছে। এছাড়াও তিন জনকে ষাটের উপর বয়সের কারণে এবং দু জনকে ১৮বছর বয়সের জন্য জামিন দিয়ে দেওয়া হয়েছে। এদিন সকাল থেকেই আদালত চত্বরে ভিড় জমিয়েছিলেন অনেক সাধারণ মানুষ। তবে কোনরকম অশান্তি যাতে নতুন করে তৈরী না হয় তারজন্য ব্যাপক পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছিল। অন্যদিকে এদিন সকালে ভাঙচুর হওয়া নিজের বিধায়ক কার্যালয় সহ অনান্য জায়গা ঘুরে দেখেন বিধায়ক খোকন দাস। তিনি বলেন, ‘কাল আমি শহরের বাইরে ছিলাম। ইচ্ছা করলেই পাঁচ মিনিটে শেষ করে দিতে পারতাম সিপিএম এর গুন্ডামি। দ্বিতীয়বার মেরুদন্ড সোজা করে আর কোনো কর্মসূচি করার সাহস দেখাতো না। জেলায় ওদের রাজনৈতিক কোন চিহ্ন থাকত না। কিন্তু দলনেত্রী আর অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ফোন করে শান্ত থাকার নির্দেশ দিয়েছেন, তাই কিছু করতে পারছি না। ওদের ক্ষমতা থাকে তো এরপর আর একবার কোথাও এই মাতব্বরি করে দেখাক। তৃণমূল কংগ্রেস কি জিনিস বুঝে যাবে। ২০১১র আগে ৩৪ বছরে লাল সন্ত্রাস অনেক দেখেছে বর্ধমানের মানুষ, তবে আর দেখতে হবে না এটা লিখে রাখুন।’

এদিন বিকাল থেকেই শহরের একাধিক ওয়ার্ডে  প্রতিবাদ মিছিল করে তৃণমূল কংগ্রেস। ৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলার নুরুল আলম বলেন, ‘ আইন অমান্যের নামে যে ভাবে হার্মাদরা সাজানো বর্ধমান কে ভেঙেচুরে তছনছ করলো,সরকারি সম্পত্তি নষ্ট করে তাণ্ডব চালালো, লুঠতরাজ চালালো একটা রাজনৈতিক কর্মসূচি তে এসে, তার প্রতিবাদ আমরা মাঠে ময়দানে নেমে সামনা সামনি করবো রাজনৈতিকভাবে। একইভাবে আইনি পথেও এই কালপ্রিটদের সাজা দেওয়ার লড়াই চালিয়ে যাওয়ায় আন্দোলন করে যাবো। আমরা আবার এই কার্জন গেটেই বিশ্ব বাংলা লোগো লাগাবো। বর্ধমান শহর কে আবার সুন্দর করে সাজিয়ে তোলার কাজ করবো। কিন্তু সিপিআইএমের হার্মাদ দের এরপর রাস্তায় নেমে কোনো কর্মসূচি করতে গেলে দশবার ভাবতে হবে।

কারণ এরপর যদি শহরবাসীরা পাল্টা প্রতিরোধের পথ বেছে নেয় সেটা সামলানোর ক্ষমতা কিন্তু ওদের থাকবে না। রাজনৈতিকভাবে নিশ্চিহ্ন সিপিএম এখন পুরানো হার্মাদদের নিয়ে সন্ত্রাসের বাতাবরণ তৈরী করার চেষ্টা করছে। কিন্তু লাভ হবে না। ওরা একটা বিশ্ববাংলা ভাঙবে, আমরা হাজারটা তৈরী করবো। একজন তৃণমূল কর্মীর রক্তে একশোটা তৃণমূল কর্মী তৈরী হবে। লড়াইয়ের ময়দান টা সিপিএম তৈরী করল। এবার প্রয়োজনে লড়াই করেই বুঝে নেবো আমরা। আমাদের নেত্রী বদলা নয় বদলের স্লোগান তুলেছিলেন বলে আজও সিপিএমের নেতারা ঘুরে বেড়াতে পারছেন। কথা বলতে পারছেন। ফেসবুকে বিপ্লব না করে মাঠে নেমে প্রতিবাদ করে দেখাক একবার।’

অন্যদিকে জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে জানা গেছে, বুধবারের ঘটনার ক্ষয়ক্ষতির হিসেব তুলে তা জমা দেওয়া হচ্ছে জেলা প্রশাসন কে। জেলার পুলিশ সুপার কামনাশীস সেন বলেন, ‘আমরা সমস্ত ক্ষয়ক্ষতির তালিকা তৈরী করছি। এক-দুদিনের মধ্যেই এই হিসেব আমরা জমা দেব জেলা প্রশাসনের কাছে। তারা ক্ষতির মূল্য নির্ধারণ করবেন।’ সরকারি সম্পত্তি ভাঙচুর ও নষ্ট করার যে নতুন আইন তৈরী হয়েছে ধৃতদের বিরুদ্ধে সে ধারাতেও মামলা দায়ের করা হয়েছে।

সিপিএমের জেলা সম্পাদক সৈয়দ হোসেন বলেন, ‘ কোনো প্ররোচনা ছাড়াই আমাদের উপরে পুলিশ ইট ছুঁড়েছে, মারধর করেছে। আমরা আমাদের কমরেডদের জামিন নিয়ে ব্যস্ত থাকায় এদিন শহরে কোন মিটিং মিছিল করতে পারিনি। তবে ব্লক ও জেলার অন্যান্য এলাকায় এদিন আমাদের প্রতিবাদ কর্মসূচি পালিত হয়েছে।’ তৃণমূলের জেলা সভাপতি রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘মহ: সেলিমের নেতৃত্বে যেভাবে উস্কানি দিয়ে পুলিশ কে লক্ষ্য করে ইট ছোড়া হয়েছে, সরকারি সম্পত্তি ভাঙচুর করা হয়েছে তা পরিকল্পনামাফিক। তারপরেও আমাদের কর্মীরা শান্ত আছে শুধু দলনেত্রীর নির্দেশে। সিপিএম ৩৪ বছর ধরে যে সন্ত্রাস রাজ্য জুড়ে চালিয়েছে সেটা এখনও ভুলতে পারেনি। ওদের পায়ের তলায় এই রাজ্যেই কোন মাটি নেই। শুধুমাত্র অশান্তি পাকানোর জন্যই আবার ওরা পরিকল্পনা করে এসব করার চেষ্টা করছে। মানুষ বোকা নয়, লাভ কিছু হবে না।’

আরো পড়ুন