হরিদ্বার থেকে ধৃত বর্ধমানে পুলিশি হেফাজত থেকে পলাতক আসামি ইদ মহম্মদ

Souris  Dey

Souris Dey

ফোকাস বেঙ্গল ডেস্ক, পূর্ব বর্ধমান: আউসগ্রামের ছোঁড়া ফাঁড়ি থেকে চিকিৎসা করাতে নিয়ে আসার পথে গত ১৫জুলাই বর্ধমানের কেশবগঞ্জ চটি এলাকা থেকে পুলিশি হেফাজত থেকে পালিয়ে গিয়েছিল আসামী। তারপর জেলার সব থানায় এমনকি ভিন রাজ্যেও পলাতক আসামীর ছবি পাঠিয়ে আসামিকে ধরার জন্য জোরদার তল্লাশি শুরু করেছিল পূর্ব বর্ধমান জেলা পুলিশ। অবশেষে ১২দিন পর সেই পলাতক আসামিকে বর্ধমান জেলা পুলিশের একটি বিশেষ টিম গ্রেপ্তার করল উত্তরাখন্ডের হরিদ্বার জেলার ভগবানপুর থানার ফতেপুর এলাকা থেকে।

বিজ্ঞাপন

জেলা পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গতকাল ইদ মহম্মদ নামে সেই পলাতক আসামিকে গ্রেপ্তারের পর বৃহস্পতিবার ধৃতকে নিজেদের হেফাজতে নিতে চেয়ে হরিদ্বার জেলা আদালতে পেশ করা হয়। আগামীকাল ট্রানজিট রিমান্ডে ধৃতকে পূর্ব বর্ধমান ফিরিয়ে আনা হচ্ছে বলে জানা গেছে।পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, বাড়িতে চুরির ঘটনায় আউশগ্রাম থানা ৬ জুলাই গ্রেপ্তার করেছিল ইদ মহম্মদ নামে এক যুবক কে। গ্রেপ্তারের পরে আদালতে তুলে নিজেদের হেফাজতে নিয়েছিল আউশগ্রাম থানা। পরে ছোঁড়া ফাঁড়ির পুলিশ অন্য একটি চুরির ঘটনায় ইদ মোহম্মদ কে নিজেদের হেফাজতে নেয়। পুলিশি হেফাজতে থাকার সময়ে খাওয়া দাওয়া বন্ধ করে অসুস্থ হয়ে পড়ে ধৃত। ১৫ জুলাই ধৃতকে নিয়ে পুলিশ বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য নিয়ে আসার সময় পুলিশের অসাবধানতার সুযোগ নিয়ে বর্ধমান থানার কেশবগঞ্জ চটি এলাকা থেকে পালিয়ে যায় মুর্শিদাবাদের বেলডাঙ্গার মাঠ পাড়ার বাসিন্দা ইদ মহম্মদ।

এই ঘটনার পর থেকেই পুলিশ নানাভাবে খোঁজ চালাতে থাকে ইদ মহম্মদের। রাজ্য ও রাজ্যের বাইরের বিভিন্ন থানায় পলাতক আসামির ছবি পাঠিয়ে তদন্ত শুরু করে বর্ধমান জেলা পুলিশ। জেলা পুলিশ সুপার এর নির্দেশে এই কেসের তদন্তকারী একটি দল ইদ মহম্মদের খোঁজে তার মুর্শিদাবাদের বাড়িতেও নজর রাখতে শুরু করে। সূত্র মারফৎ জানা গেছে, আসামির পরিবারের লোকেদের সঙ্গে জিজ্ঞাসাবাদ করে ইদ মহম্মদের বর্তমান লোকেশন ট্র্যাক করে তদন্তকারী পুলিশ আধিকারিকরা। আর সেই সূত্র ধরেই গত ২৬তারিখ উত্তরাখন্ডের হরিদ্বারের উদ্দেশ্যে রওনা দেয় বর্ধমান জেলা পুলিশের একটি টিম।

২৭তারিখ বিকেলে হরিদ্বারের ভগবানপুর থানার সহযোগিতায় ফতেপুর এলাকা থেকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে ইদ মহম্মদ কে। পুলিশের কাছে আগাম খবর ছিল এলাকায় রাজমিস্ত্রীর কাজ করার নামে আত্মগোপন করে রয়েছে ইদ মহম্মদ। পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছলে পালানোরও চেষ্টা করেছিল পলাতক ইদ মহম্মদ। কিন্তু ভগবানপুর থানা ও জেলা পুলিশের বিশেষ দলের পুলিশ আধিকারিকরা আগে থেকেই এমনটা করতে পারে ভেবেই আগাম প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছিল। চারদিকে পুলিশ কর্মীদের মোতায়েন করে রেখেছিল। ফলে সহজেই ধরা পড়ে যায় ইদ মহম্মদ।

জেলা পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, পলাতক আসামির খোঁজে নির্দিষ্ট প্ল্যানিং করে এগোনো হয়েছিল। পলাতক আসামির বাড়িতে গিয়ে পরিবারের লোকেদের সঙ্গে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছিল। যাবতীয় তথ্য সংগ্রহ করার পর এবং পাশাপাশি সোর্সের দেওয়া তথ্যের উপরে ভিত্তি করে জেলা পুলিশের স্পেশাল অপারেশন গ্রুপের একটি দল হরিদ্বারের ফতেপুর এলাকায় অভিযান চালিয়ে এই পলাতক আসামি ইদ মহম্মদ কে গ্রেপ্তার করেছে। এটা জেলা পুলিশের সাফল্য বলেই মনে করছেন আধিকারিকরা।

পুলিশ জানিয়েছে, ধৃতকে ট্রানজিট রিমান্ডে বর্ধমানে নিয়ে এসে দেশ জুড়ে বাড়িতে চুরি চক্রের পুরো নেটওয়ার্ক কে খুঁজে বের করার চেষ্টা করা হবে। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, মুর্শিদাবাদ জেলার বেলডাঙ্গার মাঠ পাড়া এলাকায় বেশ কয়েকজন রয়েছে যারা সারা ভারত জুড়ে এই ধরণের চুরি ছিনতাইয়ের কাজ করে। এই পুরো দলটিকে যাতে গ্রেপ্তার করা যায় সে বিষয়ে পূর্ব বর্ধমান জেলা পুলিশ সুপার কামনাশীষ সেন বলেন,” মুর্শিদাবাদ সহ লাগোয়া জেলার পুলিশ সুপারদের সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছেন। কারণ এই গ্যাংয়ের দুষ্কৃতীরাই দেশের বিভিন্ন রাজ্যে ছোট বড় চুরির ঘটনার সঙ্গে যুক্ত থাকে বলে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ধৃতের কাছে জানা গেছে।” 

আরো পড়ুন