সৌরীশ দে, গলসি: দু লক্ষ টাকা প্রতি মাসে না দিলে বালি খাদান চালানো যাবে না জানিয়ে রীতিমত হামলা চালানো হলো বৈধ বালি ঘাটের ইজারাদারের ম্যানেজার সহ কর্মীদের ওপর। মারধরের পাশপাশি একজনের নাক ফেটে রক্তাক্ত হয় বলে অভিযোগ। ঘটনাটি ঘটেছে সোমবার দুপুরে বাঁকুড়া জেলার পাত্রসায়র থানার অধীনে দামোদর নদের শালখাঁড়া মৌজায় আমতলা এলাকায়। হামলাকারীরা সকলেই পূর্ব বর্ধমানের গলসি থানার গোহোগ্রাম পঞ্চায়েতের গোপডাল, লক্ষীপুর এলাকার বাসিন্দা বলে অভিযোগকারী দেবাশীষ বোস জানিয়েছেন।
হামলাকারীদের মধ্যে উত্তম মন্ডল স্থানীয় পঞ্চায়েতের প্রাক্তন সদস্য বলে জানা গেছে। বাকিরা উত্তম মন্ডলের ঘনিষ্ট বলে সূত্রের খবর। হামলায় আক্রান্ত দেবাশীষ বোস ওই বালি ঘাটের ম্যানেজার বলে জানিয়েছেন। মঙ্গলবার পাত্রসায়র থানায় গতকালের সমস্ত ঘটনার বিষয় জানিয়ে হামলাকারী ১০জনের নামে লিখিত অভিযোগ জমা করেছেন আক্রান্ত ব্যক্তি। পাশাপাশি গলসি থানাতেও ঘটনার বিষয়ে গতকাল জানিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে দেবাশীষ বোস জানিয়েছেন। বালি খাদানে ঝামেলার খবর পেয়ে গলসি থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে।
জানা গেছে, সোমবার দুপুর দেড় টা নাগাদ জনা দশেক ব্যক্তি শালখাঁড়া মৌজায় বালি ঘাটে নেমে বালি খনন বন্ধ করার হুমকি দেয়। কারণ জানতে চাইলে তারা মারমুখী হয়ে ওঠে। ম্যানেজার কে খবর দেওয়া হলে দেবাশীষ বোস ঘটনাস্থলে পৌঁছলে তাকে রীতিমত ধাক্কা মারে ফেলে দেওয়া হয়। মারধর করা হয়। অভিযোগ, হামলাকারীরা দাবি করে প্রতি মাসে দু লক্ষ টাকা তাদের না দিলে বালি খনন করা যাবে না। কিন্তু এই দাবি মানতে না চাওয়ায় উত্তম মন্ডল সহ রাজ মন্ডল, পরেশ মন্ডল, অনন্ত মন্ডল, দিলীপ মন্ডল, সুনীল মন্ডল, অনুকূল রায়, তাপস ঘোষ, সঞ্জয় বিশ্বাস ও সুকুমার বিশ্বাস সকলে মিলে দেবাশীষ বোস ও তার কর্মীদের মারধর শুরু করে বলে অভিযোগ। এমনকি দেবাশীষ বোসের গলা টিপে ধরে মেরে ফেলার চেষ্টাও করে হামলাকারীরা বলে অভিযোগে জানিয়েছেন তিনি। এই ঘটনায় চাঞ্চল্য ছড়ায় এলাকায়।
জানা গেছে, উত্তম মন্ডল দীর্ঘদিন ধরেই দামোদর নদ থেকে বেআইনি ভাবে বালি চুরি করে পাচার করে আসছে। আর তার সঙ্গে বেশ কিছু লোকজন এই বালি পাচারের কাজে যুক্ত রয়েছে।কয়েকমাস আগেই গোহোগ্রাম এলাকার দামোদর নদ থেকে বেআইনি ভাবে বালি চুরি করে পাচারের খবর করেছিল ফোকাস বেঙ্গল। এই বালি চুরির সাথে স্থানীয় কিছু সিভিক ভলেন্টিয়ারও জড়িত রয়েছে বলে স্থানীয়দের অভিযোগ ছিলো। এরপরই গলসি থানার পুলিশ অভিযান চালিয়ে সেই বালি চুরি বন্ধে তৎপর হয়। বেশ কিছুদিন বেআইনি বালির কারবার বন্ধও হয়ে যায়।
কিন্তু অভিযোগ, ফের উত্তম মন্ডলের মদতে বেআইনিভাবে বালি চুরি চলছে নদী থেকে। আর এই বালি চুরি করতে গিয়ে বৈধ বালি ঘাটের এলাকায় ঢুকে পরাতেই তৈরি হয়েছে সমস্যা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয়দের একাংশের অভিযোগ, উত্তম মন্ডলের দাপটে ভয়ে এই এলাকায় সাধারণ মানুষ কোনো অভিযোগ করতে পারেন না। শাসক দলের মদত থাকায় এলাকায় বেপরোয়া নাকি তিনি। এবার সরকারি অনুমোদন প্রাপ্ত ইজারাদারের লোকজনের ওপর হামলা ও দুই লক্ষ টাকা তোলা আদায়ের অভিযোগ জমা পড়ার পর পুলিশ কি পদক্ষেপ নেয়, স্থানীয় মানুষ সেটা দেখার অপেক্ষায় রয়েছেন বলে সূত্রের খবর।