ক্রাইম

সরকারি কোন অনুমতিই নেই, নদীর গতিপথ আটকে তৈরি হচ্ছে সেতু, প্রশাসনিক হস্তক্ষেপের আশায় গ্রামবাসীরা

সৌরীশ দে, মেমারি: সেচ দপ্তর, ভূমি রাজস্ব দপ্তর কিংবা পঞ্চায়েত – কোন দপ্তরের বৈধ অনুমতি না নিয়েই আশ্চর্য্যজনক ভাবে দামোদরের একপার থেকে আরেক পাড়ে বালির গাড়ি চলাচলের জন্য কাঠের অস্থায়ী সেতু তৈরি করে ফেলেছে কিছু অসাধু বালি কারবারি। পূর্ব বর্ধমানের মেমারি ১-ব্লকের দলুইবাজার ২ পঞ্চায়েতের পাল্লা এলাকায় দামোদরের বুকে ৪নম্বর ঘাটের কাছে এই সেতু তৈরির কাজ চলছে বলে অভিযোগ। ইতিমধ্যেই দলুইবাজার ২গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান চুমকি মন্ডল এই অবৈধ সেতুর কাজ বন্ধের জন্য মেমারি ১ এর বিডিও, অতিরিক্ত জেলাশাসক (ভূমি ও ভূমি সংস্কার) এবং ব্লক ভূমি ও ভূমি রাজস্ব আধিকারিক কে চিঠি দিয়ে অবগত করেছেন বিষয়টি।

মেমারি ১ ব্লক ভূমি ও ভূমি রাজস্ব আধিকারিক বিশ্বজিৎ দাস জানিয়েছেন, ‘অভিযোগের ভিত্তিতে ইতিমধ্যেই পাল্লা ৪নং ঘাটের অস্থায়ী সেতুর বিষয়টি পরিদর্শন করা হয়েছে। গতবছর এটির অনুমতি ছিল। কিন্তু এবার এখনও কোন অনুমতি না থাকায় কাজ বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কাজ বন্ধ আছে। ‘ অন্যদিকে প্রধান চুমকি মন্ডল জানিয়েছেন, ‘পঞ্চায়েতের অনুমতি না নিয়েই কয়েকজন সেতু তৈরির কাজ করছিল। যেটা এইভাবে কেউই করতে পারেনা। বেআইনি ভাবে সেতু তৈরি ও বালি খননের কাজ বন্ধ করার জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তর গুলোকে চিঠি দিয়ে জানিয়েছি ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য। এখন কাজ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।’

স্থানীয় গ্রামবাসীদের অনেকের অভিযোগ, বালি তোলার জন্য পাল্লা ৪নং ঘাটের বৈধতা শেষ হয়ে গেছে। তারপরেও স্থানীয় কয়েকজন বালি কারবারি জোর করে অবৈধভাবে নদী থেকে বালি তুলছে। প্রতিদিন নদীতে নৌকা নামিয়ে বালি তুলে কয়েকশো ট্রাকটর বালি পাচার করে দিচ্ছে।এমনকি জামালপুরের বেড়ুগ্রাম অঞ্চলের ঘাটের চালান নিয়ে পাল্লা এলাকায় বেআইনি কারবার চালাচ্ছে বলে অভিযোগ। গ্রামবাসীদের একাংশের আরো অভিযোগ, স্থানীয় কিছু প্রভাশালী ব্যক্তি নিজেদের ক্ষমতা প্রদর্শন করে কোন অনুমতি না নিয়েই ওপার থেকে বালির গাড়ি এপার দিয়ে নিয়ে যাবার জন্য গত বছরের ব্রিজের পুরনো কাঠামোর উপরেই নদীর বুকে অস্থায়ী ব্রিজ তৈরি করার কাজ করছে।

অথচ প্রতিবছর বর্ষার আগে নদী বক্ষ থেকে সমস্ত অস্থায়ী কাঠামো তুলে নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয় জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে। কিন্তু পাল্লা ৪নং ঘাটের অস্থায়ী সেতুর নিচে থাকা শাল বল্লার কাঠামো যেমন ছিল তেমনি রয়ে গেছে বলে অভিযোগ। ফলে নদীর স্বাভাবিক গতিপথই বদলে দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন স্থানীয় এলাকাবাসীদের একাংশ।

আরো অভিযোগ, নদীর বুকে লাগানো গত বছরের পুরনো কাঠামোর উপরেই এবছর ফের বিনা অনুমতিতে তৈরি করা হচ্ছিল সেতু। স্থানীয় বালি ব্যবসায়ী গৌতম রায় এই প্রসঙ্গে জানিয়েছেন, ‘প্রতিবছরই আমাদের পারমিশন থাকে এই সেতু নির্মাণের। এবছরও আমরা কাজ শুরু করেছি। পঞ্চায়েত থেকে এখনও অনুমতি পায়নি। অন্যান্য দপ্তরের কাছেও অনুমতি চেয়ে আবেদন পত্র জমা করা আছে। সেতুর কাজ শেষ হবার আগেই অনুমতি চলে আসবে।’ গ্রামবাসীদের অনেকেই জানিয়েছেন, এ যেন বিনা প্ল্যান এ বাড়ি তৈরি করার পর অনুমতির জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরে অনুমতির আবেদন জানানোর মতো ব্যাপার। এখন দেখার বিষয়, মেমারি ১ব্লক প্রশাসন, ব্লক ভূমি দপ্তর ও পঞ্চায়েত এই অবৈধ কাজের বিরুদ্ধে কি ব্যবস্থা গ্রহণ করে – সেই দিকেই তাকিয়ে স্থানীয় বসবাসকারী বেশিরভাগ বাসিন্দারা।

Recent Posts