ক্রাইম

গলসির শিকারপুর, বৈধ চালান – পাচার হচ্ছে অবৈধ খাদানের বালি, নির্বিকার প্রশাসন

ফোকাস বেঙ্গল ডেস্ক,গলসি: বৈধ চালানে অবৈধ বালি খাদান থেকে দিনের পর দিন বালি তুলে পাচার করা হচ্ছে গলসির শিকারপুর এলাকার দামোদর নদ থেকে। এই কাজে যুক্ত রয়েছে কয়েকজন বৈধ বালিঘাট মালিক। এদের মধ্যে কয়েকজনের বৈধভাবে নদী থেকে বালি তোলার সরকারি অনুমোদন থাকলেও নদীর যে অংশ থেকে বালি তোলার অনুমতি আছে তার বাইরে বালি কেটে পাচার করা হচ্ছে বলে অভিযোগ। ফলে নদীর বেশিরভাগ জায়গায় মোটা ভালো বালি শেষ হয়ে যাচ্ছে। বাঁধের যত্র তত্র মেশিন ও ট্রাক্টর নামিয়ে ওই পাচার কাজে যুক্ত রয়েছেন স্থানীয় কিছু বালি মাফিয়া এমনই অভিযোগ স্থানীয়দের।

এলাকাবাসী তথা বিজেপির নেতা জয়দীপ চ্যাটার্জী বলেন, ‘শাসক দলের নেতা ও পুলিশের একাংশের মদতে এলাকার চোরা কারবারীরা শিকারপুর থেকে বালির লুট চালাচ্ছে। সব জেনেও পুলিশ প্রশাসন চুপচাপ দেখছে। রাত দিন পাচার হয়ে যাচ্ছে শয়ে শয়ে ওভার লোডের বালির ট্রাক। মাফিয়ারা অবৈধ ভাবে বালি কেটে ঘাট মালিকদের থেকে বৈধ চালান দিয়ে রমরমিয়ে চালাচ্ছেন ওই অবৈধ ব্যবসা। নদীর যেখান সেখান থেকে বালি কেটে নেওয়া হচ্ছে মেশিন নামিয়ে। বালি মাফিয়াদের ভয়ে স্থানীয় মানুষ কথা বলতে পারেন না। কারন ওই কারবারীরা সবই তৃণমূলের বড় মেজ সেজ নেতা। এতে সরকারের ক্ষতি হলেও কিছু করার নেই। পুলিশ ও বিএলআরও কে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। আমরা বিষয়টি নিয়ে জেলা ও রাজ্য নেতাদের ইতিমধ্যে জানিয়েছি, এবার আমাদের নেতা শুভেন্দু অধিকারীকে জানাবো।’

জানা গিয়েছে, প্রতিদিন শয়ে শয়ে ডাম্পার ওভারলোড করে শিকারপুর থেকে চৌমাথা হয়ে জাতীয় সড়কে উঠছে। তাছাড়াও জাতীয় সড়কের উড়া,  কুলগোড়িয়া হয়ে প্রতিদিন পাচার হচ্ছে কমবেশি চার পাঁচশো ট্রাক্টর বালি। ওভারলোড করে এই সমস্ত বালির গাড়ি যাতায়াত করলেও পুলিশ বা ভূমি ও ভূমি রাজস্ব দপ্তরের আধিকারিকরা কার্যত নির্বিকার বলে জানাতে পারে গেছে। আর এই অবৈধ বালির কারবার চলছে গলসি থানার শিকারপুর এলাকার দামোদর নদের একাধিক বালি ঘাট থেকে। ঘাট মালিকদের মদতেই স্থানীয় বালি মাফিয়াদের দৌরাত্ম্য বেড়ে গিয়েছে বলে জানা গেছে।

পূর্ব বর্ধমান জেলার ভূমি ও ভূমি রাজস্ব দপ্তরের আধিকারিক তথা অতিরিক্ত জেলাশাসক রিশীন ইসমাইল এই অভিযোগের প্রসঙ্গে জানিয়েছেন, ‘এই ধরনের কোন অভিযোগ আমার কাছে নেই। তবে সংবাদমাধ্যমের কাছে শুনে এব্যাপারে খোঁজখবর নেওয়া হবে। দপ্তরের স্থানীয় আধিকারিক কে এই বিষয়ে রিপোর্ট দেওয়ার জন্য বলা হয়েছে। তদন্ত শুরু করা হয়েছে।’

শিকারপুর এলাকার স্থানীয় গ্রামবাসীদের একাংশ সূত্রে জানা গেছে, এই এলাকায় তিনটি বৈধ বালি ঘাট রয়েছে। যদিও এদের মধ্যে দুটি বালি ঘাটের মালিক ভিন জেলার বাসিন্দা। একজনের বাড়ি গলসিতেই। তাদের মদতেই একদল বালি মাফিয়া নিজেদের ইচ্ছামত স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে সমঝোতা করে অবৈধভাবে দিনের পর দিন বেআইনি ভাবে নিজেদের ইচ্ছামতো জায়গা থেকে বালি কেটে পাচার করেছে।

স্থানীয়র বলছেন, নদীতে প্রধানত তিন ধরনের বালি পাওয়া যায়। সেইগুলো হল ধুস, গড় ও মোটা বালি। স্থানীয় মাফিয়ারা মোটা টাকা মুনাফা করতে নদীর যে অংশে তাদের বালি তোলার অনুমতি আছে তার বাইরে গিয়ে মোটা ভালো বালি কেটে পাচার করছে। স্বাভাবিকভাবেই এই বালি মাফিয়ারা বেপরোয়াভাবে নদী গর্ভের সম্পদ দিনে দিনে শেষ করে দিচ্ছে বলেই অভিযোগ। ওভারলোডের ফলে একদিকে যেমন সরকারের রাজস্ব ফাঁকি দিচ্ছে এই বালি ঘাটের মালিকরা, অন্যদিকে নিয়মবহির্ভূতভাবে দিনের পর দিন বালি তোলায় নদীর গতিপথের পরিবর্তন হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। এমন চললে দামদর নদীর বালি শেষ হয়ে মাটি বেড়িয়ে যাবার আশঙ্কা প্রবল বলে মনে করেছেন স্থানীয়রা। আর এর ফলে এলাকায় বন্যার আশঙ্কাও প্রবল হচ্ছে।

ছবি – ফাইল

Recent Posts