বর্ষায় ঘাট বন্ধ, বালির দাম হতে চলেছে লাগামছাড়া, জেলা জুড়ে বালির অবৈধ মজুদের রমরমা

Souris  Dey

Souris Dey

ফোকাস বেঙ্গল ডেস্ক,বর্ধমান: পূর্ব বর্ধমান জেলা প্রশাসনের নির্দেশে বর্ষাকালীন নদী থেকে বালি তোলা নিষিদ্ধ হয়েছে গত ২৭জুন। এরই মাঝে পঞ্চায়েত নির্বাচন থাকায় মজুদ (stock) বালি সরবরাহও টানা বন্ধ রয়েছে প্রশাসনেরই নির্দেশে। স্বাভাবিকভাবেই এই সময়ে বালির চাহিদা একপ্রকার তুঙ্গে উঠেছে। জেলা ভূমি ও ভূমি রাজস্ব দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, সামনের সপ্তাহেই সম্ভবত এবছরের মজুদ (stock) বালি বিক্রি শুরুর নির্দেশ জারি হতে পারে। আর এই সুযোগকে কাজে লাগাতে ইতিমধ্যেই তৎপর হয়েছে দামোদর নদের গলসি, খন্ডঘোষ, বর্ধমানের সদরঘাট, রায়না, জামালপুর, বড়শুল, পাল্লারোড প্রভৃতি এলাকার বালি ব্যবসায়ীরা।

বিজ্ঞাপন

একাধিক বালি ব্যবসায়ী সূত্রে জানতে পারা গেছে, কিছুদিন আগেও যখন বালি ঘাটগুলো খোলা ছিল তখন যে বালির ৫০০ সিএফটির দাম ছিল (১২চাকা ডালা বডি)১৬ থেকে ১৭হাজার টাকা, সেই একই পরিমাণ বালির দাম হতে চলেছে ২৩ থেকে ২৫হাজার টাকা। এরপরেও টোল, চালান ও অন্যান্য আনুষাঙ্গিক খরচ মিলিয়ে এই দাম বেশ কিছুটা বাড়তে পারে বলেই মনে করছে মজুদকারী ব্যবসায়ীরা। অর্থাৎ মাস খানেক আগেও এক গাড়ি বালি যেখানে ৫০০০টাকায় পাওয়া যাচ্ছিল সেটাই এখন প্রায় দ্বিগুণ দামে কিনতে হবে গ্রাহককে বলেই মনে করছেন অনেকে। ফলে নির্মাণ শিল্পের সঙ্গে যুক্ত ঠিকাদার থেকে সাধারণ মানুষ আগামী কয়েকমাস (যতদিন না ফের নদী থেকে বালি তোলার নির্দেশ জারি করছে প্রশাসন ) যে রীতিমত সমস্যায় পড়তে চলেছে তা একপ্রকার স্বীকার করে নিয়েছে খোদ বালি মজুদকারি ব্যবসায়ীদের একাংশ।

যদিও বৈধ মজুদকারিদের পাশপাশি দামোদর নদের দু’পারে অসংখ্য অবৈধভাবে বালি মজুদ করা হয়েছে বলে বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দাদের সূত্রে জানা গেছে । সেই সমস্ত বেআইনি মজুদ নিয়ে প্রশাসনের কি ভূমিকা হবে সে ব্যাপারে এখনও কিছু জানা যায়নি। কে বা কারা, কিভাবে এইসব বেআইনি মজুদ করেছে তারও কোন সঠিক তথ্য নেই। তবে প্রশাসন সুত্রে জানা গেছে, বৈধ মজুদ ছাড়া কোথাও কেউ বালি মজুদ রাখলে তার বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হবে। অতীতেও অবৈধ মজুদ বাজেয়াপ্ত করে জরিমানা করা হয়েছে। এবারেও লাগাতার অভিযান চালানো হবে অবৈধ বালি মজুদের বিরুদ্ধে।

বিশেষ সূত্রে জানা গেছে, বৈধ বালি ঘাট মালিকদেরই একাংশ নদীর ধারে একাধিক পয়েন্টে বালি তুলে স্টক করে রেখেছে। যদিও সেইসব পয়েন্টে বালি স্টক করার কোনো অনুমতি ভূমি রাজস্ব দপ্তর থেকে কেউ নেয়নি।  পরবর্তীতে সেই মজুদ বালি কখনো চালান ছাড়া আবার কখনো তাদের বৈধ চালান দিয়ে বিক্রি করবে বলেও জনাতে পারা যাচ্ছে। ফলে সরকারি রাজস্ব ক্ষতির একটা সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।

এদিকে দীর্ঘদিন বালি ঘাট বন্ধ থাকায় বালির কারবারের সঙ্গে যুক্ত জেলার বিভিন্ন এলাকার কয়েক হাজার শ্রমিক প্রায় রোজগারহীন হয়ে পড়েছে। স্বাভাবিকভাবেই বালি ঘাট মালিক থেকে শ্রমিক সকলেই একপ্রকার মুখিয়ে আছে কবে থেকে মজুদ বালি সরবরাহ করার অনুমোদন দেবে প্রশাসন তার দিকে। জেলা ভূমি ও ভূমি রাজস্ব দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, সামনের সপ্তাহেই জেলায় স্টক বালি বিক্রির অনুমোদন দেবার ব্যাপারে তারা আশাবাদী। একই সঙ্গে গত বছরের যে সমস্ত অবৈধ বালির স্টক এর বিরুদ্ধে জরিমানা করা হয়েছিল, সেগুলোর মধ্যে যারা দেড় গুন জরিমানা ইতিমধ্যেই জমা করেছে সেই সমস্ত স্টক বালি বিক্রি করারও অনুমোদন দেওয়া হতে পারে। যদিও এরই মধ্যে হাইকোর্টে বালি ঘাট মালিকদের দায়ের করা বালির স্টক সংক্রান্ত একটি মামলার বিষয়ে নতুন করে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে বলে দপ্তর সুত্রে জানা গেছে। সেক্ষেত্রে অনেক জায়গার বাজেয়াপ্ত উদ্বৃত্ত মজুদ বালি এখনই বিক্রির অনুমতি দেওয়া হচ্ছে না।

তবে মজুদ বালি বিক্রির অনুমোদন দিলেই যে বালির সরবরাহ স্বাভাবিক হয়ে যাবে তেমনটা মনে করছেন না নির্মাণ শিল্পের সঙ্গে যুক্ত একাধিক ব্যবসায়ী। কারণ বালির দামে বিস্তর তফাৎ হবে এখন। ঘাট বন্ধ হওয়ার আগে যে দামে বালি পাওয়া যাচ্ছিল, এখন তার থেকে কম করে গাড়ি প্রতি প্রায় ৫ থেকে ১০হাজার টাকা বেশি দামে বালি বিক্রি হবে। ফলে চাহিদা থাকলেও বালি দাম যে আকাশছোঁয়া হবে সেটা অনেকেই অনুমান করছেন।

এদিকে বালির দাম বাড়ার পিছনে অবশ্য বালি ব্যবসায়ীদের নির্দিষ্ট যুক্তি রয়েছে। প্রতিবছরই বর্ষার সময় ঘাট বন্ধ হয়ে যাওয়ার আগে প্রশাসন থেকে আগামী কয়েকমাস যাতে বালির সরবরাহ ঠিক থাকে তার জন্য নির্দিষ্ট পরিমাণ বালি মজুদ করার অনুমতি দেয় বৈধ বালিঘাট কর্তৃপক্ষ কে। সেইমত যে জায়গায় বালি মজুদ করা হবে তার ‘ নো অবজেকশন ‘ কাগজ দাখিল সহ অন্যান্য নিয়ম মেনে জেলা ভূমি ও ভূমি রাজস্ব দপ্তরে আবেদন জানানো হয়। অনুমতি পাওয়ার পর নদী থেকে বালি তুলে বালি মজুদ করা হয়। এক্ষেত্রে বাড়তি প্রচুর টাকা খরচ হয় বালি ঘাট মালিকদের। ফলে বর্ষার সময় যখন বালি ঘাট বন্ধ থাকে সেইসময় বালি মজুদের জন্য ব্যয় করা খরচ তুলতে কিছুটা বেশি দামে বালি বিক্রি করতেই হয় প্রতিবছর।

পূর্ব বর্ধমানের খন্ডঘোষ ব্লকে ১৬থেকে ১৭টি বৈধ বালি মজুদ পয়েন্ট রয়েছে। কিন্তু সূত্রের খবর এর বাইরেও প্রায় ২০ থেকে ২৫টি জায়গায় অবৈধভাবে দামোদর থেকে বালি তুলে মজুদ করে রাখা হয়েছে। কে বা কারা এই বালি মজুদ করেছে তার কোন হদিস নেই। যদিও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, খন্ডঘোষ এলাকায় দামোদর নদ থেকে বালি তোলা, সরবরাহ ও মজুদের জন্য একটি সিন্ডিকেট রয়েছে। সেই সিন্ডিকেটের সঙ্গে নাকি যুক্ত রয়েছে একাধিক সরকারি অনুমোদিত বালিঘাট মালিক। স্থানীয়দের অভিযোগ, মূলত এই সিন্ডিকেটের মদতেই নাকি গোটা খন্ডঘোষ জুড়ে চলছে বালির বেআইনি কারবার। স্থানীয়দের একাংশের আরো অভিযোগ, প্রশাসন, পুলিশ ও স্থানীয় শাসক দলের নেতাদের একাংশের উদাসীনতায় খন্ডঘোষ ব্লক জুড়ে সারাবছর বালির এই বেআইনি কারবারের রমরমা চলছে। অভিযোগ, ক্ষতি হচ্ছে সরকারি রাজস্বের।             ক্রমশ…

ছবি – ফাইল

আরো পড়ুন