ফোকাস বেঙ্গল ডেস্ক,বর্ধমান: একের পর এক শাসক দলের নেতা থেকে বিরোধী দলের নেতাদের বিরুদ্ধে নামে, বেনামে পোস্টার সাঁটিয়ে বাজার গরম করার রাজনীতি নিয়ে তুমুল শোরগোল পড়েছে বর্ধমান শহরে। কিছুদিন আগেই রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর ব্যঙ্গচিত্র দিয়ে ‘ নিরুদ্দেশ সংবাদ ‘ শীর্ষক হোর্ডিং শহরের প্রাণকেন্দ্র কার্জন গেট চত্বর সহ শহরের একাধিক জায়গায় লাগানো হয়েছিল। সেই হোর্ডিং এর নিচে লেখা ছিল তৃণমূল কংগ্রেস সোস্যাল মিডিয়া ও আইটি সেল। তারও কিছুদিন আগে কোর্ট চত্বরে বর্ধমান পৌরসভার ৩৪নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর উমা সাই এর নামে নিখোঁজ পোস্টার সাঁটানো হয়েছিল। এছাড়াও এর আগে বিভিন্ন শহরের বিভিন্ন এলাকায় বিরোধী দলের নেতা নেত্রী সহ শাসক দলের নেতাদের বিরুদ্ধে নানান কুরুচিকর লেখা দিয়ে পোস্টার দেখা গিয়েছে।
কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এই সমস্ত পোস্টার দেওয়ার পিছনে কে বা কারা রয়েছে তা নিয়ে রাজনৈতিক মতবিরোধ থাকলেও নির্দিষ্ট করে জানা যেতো না এই কাজ কাদের। এবার বর্ধমান শহরের ৭ ও ৮ নম্বর ওয়ার্ডের একাধিক জায়গায় খোদ বর্ধমান দক্ষিণ কেন্দ্রের বিধায়ক খোকন দাস ও পূর্ব বর্ধমান জেলা তৃণমূলের যুব সভাপতি রাসবিহারী হালদার কে ‘ বালি মাফিয়া ‘ তকমা দিয়ে ছবি দেওয়া রঙিন পোস্টার দেওয়া কে ঘিরে তুমুল আলোড়ন ছড়িয়েছে। চাঞ্চল্যকর ভাবে এই পোষ্টারের নিচে বর্ধমান শহরের তিন তিনজন তৃণমূল নেতারও নাম উল্লেখ করা রয়েছে। আর এই ঘটনায় এবার পোস্টার রাজনীতি অন্য মাত্রা পেল বলেই মনে করছেন ওয়াকিবহাল মহল।
পোষ্টারের উপরে প্রথমেই লেখা রয়েছে, এই দুজন কে চিনেন? এরা বর্ধমানে বালি মাফিয়া। এর নিচে একদিকে বিধায়কের ও অন্যদিকে যুব সভাপতির ছবি দেওয়া রয়েছে। তার নিচে লেখা রয়েছে, বর্ধমানে মেলায় এত কোটি কোটি টাকা খরচ পাচ্ছে কোথায়? জবাব চাই বর্ধমান। কাকা ভাইপো হাত মিলিয়ে বর্ধমানে প্রমোটিং রাজ চালাচ্ছে পুরনো তৃণমূলীদের সরিয়ে। প্রতিবাদে, অরূপ দাস, আব্দুল রব, পাপু আহমেদ।
যদিও এই পোষ্টারের নিচে নাম লেখা নেতা অরূপ দাস, আব্দুল রব ও পাপু আহমেদ এই ঘটনাকে বিরোধীদলের নোংরা মানসিকতার রাজনীতি বলেই উল্লেখ করেছেন। তারা জানিয়েছেন, কে বা কারা এই পোস্টার মেরেছেন তাদের জানা নেই। এর সঙ্গে তাদের বিন্দুমাত্র সম্পর্ক নেই। তৃণমূল দলে এই ধরনের কালচার নেই। এইসব নোংরা রাজনীতি বিজেপি দলের লোকেদের মধ্যেই দেখা যায়। অন্যদিকে বিধায়ক খোকন দাস এই পোস্টার প্রসঙ্গে কার্যত বিরক্তি প্রকাশ করে কোনো মন্তব্য করতে চাননি। রাসবিহারী হালদার বলেন,’ এইসব ফালতু বিষয় নিয়ে কথা বলার প্রয়োজন মনে করিনা, আইনি পদক্ষেপ করা হচ্ছে। প্রশাসন ব্যবস্থা নেবে ‘।
অন্যদিকে বিজেপির সদর জেলার সহ সভাপতি শ্যামল রায় বলেন, ‘ এই দলটার এটাই চরিত্র। আমরা দীর্ঘদিন ধরেই তৃণমূলের নেতাদের দুর্নীতি নিয়ে বলে আসছি। এখন ওদের দলের লোকেরাই সেইসব প্রকাশ্যে নিয়ে আসছে। এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই। কয়েকমাস আগেও ওদের বিধায়ক ও বর্তমান জেলা যুব সভাপতি দুই মেরুতে অবস্থান করতেন। এখন এক হয়েছেন। তখন যারা তাদের অনুগামী ছিলেন এখন তারাই সমস্যায় পরছেন। আর সেই কারণে ভাগ বটরা নিয়ে হয়তো অশান্তি হচ্ছে, তাই দলের একটা অংশ এবার সত্যটা সামনে নিয়ে এসেছেন। সাধারণ মানুষ দেখুক এই দলটার চরিত্র।’
বিজেপির জেলা মুখপাত্র সৌম্যরাজ বন্দোপাধ্যায় বলেন,’ পোষ্টারের লেখায় কিছু ভুল নেই। আসলে এই দলটা নিচ থেকে উপর পর্যন্ত তোলাবাজি, ধান্দাবাজি, কাটমানি নিয়েই চলছে। এই পোস্টার তারই প্রতিফলন। সে বিধায়ক হোক বা দলনেত্রী। সাধারণ মানুষের সমস্যার কথা ভাবে কম, উল্টে মেলা, খেলা, উৎসব করার জন্য সাধারণ মানুষের টাকা নয়ছয় করছে। কদিন আগেও যারা একসঙ্গে মঞ্চ শেয়ার করতেন না তারাই আজকে এক জায়গায়। আর এই কারণেই ওদের দলের পুরনো নেতা, কর্মীরা ক্ষিপ্ত। স্বাভাবিকভাবেই সত্যগুলো সামনে চলে আসছে। মানুষ দেখুক, বুঝুক ‘।