festival

দশমীতে দেবীর বিসর্জন হয় না, হয় কাঠামোর বিসর্জন – সনাতন ধর্ম কি বলছে জানুন

ফোকাস প্রতিবেদন: মা দুর্গার পুজো শেষ। বিজয়া হয়ে গেল। বিজয়া‌ দশমীর দিন দেবী দুর্গার বিসর্জন হয়। কেউ কেউ কয়েকদিন পরেও কাঠামোর বিসর্জন করেন। এই বিসর্জনের বিষয়টি রীতিমত আবেগপ্রবণ একটি মুহূর্তের সৃষ্টি করে। ষষ্ঠীর দিন যে দেবীর আবাহন হয় বোধনের মধ্যে দিয়ে, দেবীর কাঠামোর মধ্যে দেবীকে জাগ্রত করা হয়, এরপর সপ্তমী, অষ্টমী, নবমীতে নানাবিধ রীতির মাধ্যমে দেবীর পূজা করা হয়। প্রতিদিন সন্ধ্যা আরতি করা হয় এরপর দশমীর দিন দেবীর বিসর্জন দেওয়া হয়। আবার একটা বছরের প্রতীক্ষায় দিন গোনা শুরু হয়। কিন্তু এই বিসর্জন নিয়ে বহু মানুষের মনে বহু প্রশ্ন থাকে।

সনাতন ধর্মে যে দেবীর পূজা করা হয়, যে দেবীর উদ্দেশ্যে পুষ্প নিবেদন করা হয়, যে দেবীর উদ্দেশ্যে মন্ত্রোচ্চারিত হয় এবং সর্বোপরি যে দেবীর কাছে আমাদের মনের যাবতীয় ইচ্ছা এবং প্রার্থনা কে জ্ঞাপন করা হয়, সেই দেবীকেই কিনা দশমীর দিন বিসর্জন দেওয়া হয়। এই বিষয়টি নিয়ে অনেকের মনের মধ্যেই অনেক প্রশ্ন রয়েছে। বিশেষত সনাতন ধর্মের বাইরে যে সমস্ত মানুষজন রয়েছেন তারা এই বিষয় নিয়ে প্রায়ই প্রশ্ন করে থাকেন যে ষষ্ঠী থেকে নবমী অবধি যে দেবী প্রতিমার এত মহাসমারোহে পূজা করি আমরা, দশমীর দিন সেই দেবী প্রতিমা কে কোন না কোন জলাশয়ে বিসর্জন দিই কী করে?

তবে কি দেবী প্রতিমার প্রতি আমাদের এই বিগত চার দিনের আবেগ সবটাই লোকদেখানো? না, আসলে আমাদের সনাতন ধর্মের মধ্যেই আছে এই প্রশ্নের উত্তর। সনাতন ধর্মে বলা হয় মানুষের দেহ থেকে শুরু করে এই বিশ্বপ্রকৃতির সমস্ত কিছুই পঞ্চ ভূত অর্থাৎ পঞ্চ উপাদান থেকে তৈরি। এই পঞ্চ ভূত হল আকাশ, বায়ু, অগ্নি,মাটি, জল। এই পঞ্চ ভূত থেকে বিশ্ব প্রকৃতির সমস্ত কিছু সৃষ্টি হয় এবং অন্তিমে সমস্ত কিছু এই পঞ্চভূতেই মিশে যায়। উদাহরণস্বরূপ আমাদের দেহের কথা বলা হয়। আমাদের দেহ এই পঞ্চ ভূত থেকেই সৃষ্টি হয় এবং মৃত্যুর পর যখন এই দেহ আগুনে পুড়ে যায় তখন তা পঞ্চভূতেই বিলীন হয়।

ভগবান শ্রীকৃষ্ণ‌ও গীতায় এই কথাই বলেছেন। দেবী প্রতিমার ক্ষেত্রে যখন তা কাঠের কাঠামো থাকে তখন তা প্রাণহীন অবস্থায় থাকে, এই প্রাণ প্রতিষ্ঠার জন্যই প্রথমে তার বোধন করে তাকে জাগ্রত করা হয়। অর্থাৎ কাঠের কাঠামোর মধ্যে প্রাণ প্রতিষ্ঠার পূর্বে বা দেবীকে জাগ্রত করার পূর্বে পর্যন্ত তা কাঠের কাঠামোই থাকে তা দেবী হয় না। এরপর দেবীকে জাগ্রত করবার পর ষষ্ঠী থেকে নবমী পর্যন্ত দেবীর পূজা করা হয়। আর দশমীর আরতি শেষে দেবীকে পুরোহিত মন্ত্রের মাধ্যমে মান্ত্রিক বিদায় জানান। বলেন, হে দেবী আপনি আপনার যথাস্থানে ফিরে যান এবং আগামী বছর আবার আপনি যথা সময়ে এই মর্ত্যলোকে আসবেন।

পুরোহিতের এই মন্ত্রের মান্ত্রিক বিদায়ের মধ্য দিয়েই প্রকৃতপক্ষে দেবীর বিসর্জন হয়ে যায়‌। এরপর দেবী প্রতিমা পুনরায় পূর্বের ন্যায় প্রাণহীন কাঠামোতে পরিণত হয়। আর মানুষজন সেই প্রাণহীন কাঠামোকেই নদীতে বিসর্জন করে, যাতে তা পঞ্চভূতে মিলিয়ে যায়।তাই দেবীর বিসর্জন হয় না , বিসর্জন হয় প্রানহীন কাঠামোর, যে কাঠামো থেকে দেবীর বিদায় অনেক পূর্বেই পুরোহিতের মন্ত্রের মাধ্যমে হয়ে থাকে।

তথ্য সংগৃহীত – ইন্টারনেট

Recent Posts