তন্ময় চট্টোপাধ্যায়,বর্ধমান: ১৪জুলাই ২০২৩, শ্রী হরিকোটার সতীশ ধাওয়ান স্পেস সেন্টার থেকে দুপুর দুটো ৩৫ মিনিট নাগাদ যাত্রা শুরু করে চন্দ্রযান-৩। আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া এবং চীনের পরে ভারত বিশ্বে চতুর্থ দেশ হিসেবে চাঁদের মাটি স্পর্শ করল। চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে অবতরণের দিক থেকে দেখলে ভারতই বিশ্বের প্রথম দেশ হিসাবে এই কৃতিত্ব অর্জন করল। ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বর মাসে চন্দ্রযান-২ এর ব্যর্থতা থেকে শিক্ষা নিয়ে ইসরো নতুনভাবে সমস্ত পরিকল্পনা সাজাতে থাকে। সফ্ট ল্যান্ডিং এর বিষয়ে পর্যাপ্ত পরীক্ষা-নিরীক্ষা এ বছরের মার্চ মাসের মধ্যেই সমাপ্ত করা হয় । অবতরণের সময় নির্দিষ্ট স্থান থেকে ল্যান্ডার বিক্রম যদি সরেও যায়, যোগাযোগ যাতে বিচ্ছিন্ন না হয় সেই ব্যবস্থা এবার ইসরো করে রেখেছিল।
ভারতীয় রকেটের ‘বাহুবলী’ LVM-3 এর সাহায্যে সফল উৎক্ষেপণ ঘটে চন্দ্রযান-৩ এর। উৎক্ষেপণের সময় রকেটের ওজন ছিল প্রায় ৬৪২ টন যাতে কঠিন ও তরল জ্বালানির পরিমাণ ৫৫৩ টনের বেশি। যাত্রা শুরুর ১৬ মিনিটের মধ্যেই ১৭৩ কিলোমিটার উচ্চতার পেরিজি অবস্থানে পৌঁছায়। ডিম্বাকৃতি কক্ষপথের এটিই সর্বনিম্ন উচ্চতা, সর্বাধিক উচ্চতা ছিল ৪১ হাজার ৭৬২ কিলোমিটার। এরপর ধাপে ধাপে মোট পাঁচবার কক্ষপথ পরিবর্তন করে চন্দ্রযান-৩।
এবারে চন্দ্রযান-৩ এর জন্য আলাদা কোন অরবিটার পাঠানোর প্রয়োজন হয়নি এ কারণেই। ২০১৯ এ পাঠানো এই অরবিটার সম্পূর্ণ ভাবে সচল রয়েছে এবং ক্রমাগত চন্দ্রপৃষ্ঠের ছবি তুলে বিক্রমের নিরাপদ অবতরণ ক্ষেত্র চিহ্নিত করতে সাহায্য করেছে। চন্দ্রযান-৩ এর মোট ওজন ৩৯০০ কেজি এর মধ্যে প্রপালশন মডিউলটির ওজন ২১৪৮ কেজি। রোভার(২৬ কেজি) সহ বিক্রমের ওজন ১৭৫২ কেজি। আজ বিকেল পাঁচটা কুড়ি মিনিট থেকে সমস্ত ভারতবাসীর চোখ ছিল টিভির পর্দায় বা অনলাইন স্ট্রিমিং-এ। বিভিন্ন জায়গায় পূজা পাঠ, নামাজ, প্রার্থনা শুরু হয়ে যায় সকাল থেকেই। প্রধানমন্ত্রী আফ্রিকা থেকে নজর রেখেছিলেন সমগ্র অভিযানের দিকে।
চাঁদের দক্ষিণ মেরু থেকে ৩০০ কিলোমিটার দূরে ৭০ ডিগ্রী দ্রাঘিমাংশে অবতরণ করেছে ভারতের চন্দ্রযান। শেষ কুড়ি মিনিট রুদ্ধশ্বাস উত্তেজনায় সমাপ্ত হয় এই অভিযান। চাঁদের উপরে ২৪কিলোমিটার উচ্চতা থেকে ধাপে ধাপে গতিবেগ কমিয়ে পাখির পালকের মতো বিক্রমকে নামিয়ে আনাটাই এই অভিযানের সর্বাপেক্ষা কঠিন কাজ ছিল। এই কঠিন কাজটি করতে গিয়েই তিনদিন আগে রাশিয়া ব্যর্থ হয়। তাদের প্রেরিত লুনা-২৫ সবেগে আছড়ে পড়ে বিনষ্ট হয়ে যায়। রাশিয়ার এই অভিযান সফল হলে ভারত চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে পৌঁছানোর দিক থেকে দ্বিতীয় স্থানে চলে যেত। ভারতীয় সময় ৬টা ৪ মিনিটে বিক্রমের সফল অবতরণ ঘটে। এখন অপেক্ষা রোভার প্রজ্ঞানের জন্য। আগামী ১৪ দিন ধরে চাঁদের বুকে চলবে তার নানান পরীক্ষা। ভারতের মহাকাশ চর্চার ইতিহাসে সোনালী দিন হয়ে রইল ২৩ আগস্ট।