ক্রাইম

গৃহবধূ ও শিশুকন্যাকে খুনের ঘটনায় স্বামী ও শাশুড়ির যাবজ্জীবন

ফোকাস বেঙ্গল ডেস্ক,বর্ধমান: গৃহবধূ ও ১১ মাসের শিশুকন্যাকে খুনের মামলায় ১৪ বছর পর স্বামী ও শাশুড়ির যাবজ্জীবন সাজা ঘোষণা করল বর্ধমান আদালত। বুধবার বর্ধমানের জেলা জজ সুজয় সেনগুপ্ত এই সাজা শুনিয়েছেন। সাজাপ্রাপ্তদের নাম বরুণ দে ও মহামায়া দে। জানা গিয়েছে, হুগলির খানাকুল থানা এলাকার বাসিন্দা ময়না পালের সঙ্গে মাধবডিহি থানার একলক্ষী গ্রামের বাসিন্দা বরুণ দের বিয়ে হয়েছিল।

বিয়েতে পাত্রপক্ষের চাহিদামতো পণ দেওয়া হয়েছিল। বরুণের সোনার গয়না তৈরির দোকান ছিল। বিয়ের ৪-৫ মাস পর সে দোকান তুলে দেয়। তারপর থেকে সে স্ত্রীর উপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন শুরু করে। মাঝেমধ্যেই ময়নাকে শ্বশুরবাড়িতে মারধর করা হত। অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে তিনি ৪-৫ বার বাপের বাড়িতে চলে যান। কিন্তু, তাঁর এবং মেয়ের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে বাপেরবাড়ি থেকে তাঁকে শ্বশুরবাড়িতে ফিরিয়ে দেওয়া হয়। ২০১০ সালের ১৫ আগস্ট সকালে ময়নার বাপের বাড়িতে ফোন করে তিনি অসুস্থ বলে জানানো হয়।

খবর পেয়ে বাপেরবাড়ির লোকজন ময়নার শ্বশুরবাড়িতে আসেন। সেখানে তাঁরা দেখেন, বাড়ির সামনে কাঁঠাল গাছের নীচে ময়না ও তাঁর ১১ মাসের মেয়ের দগ্ধ দেহ পড়ে রয়েছে। মৃতদেহ দু’টির পাশেই একটি কেরোসিন তেলের বোতল, লাইটার ও দেশলাই পড়েছিল। ঘটনার দিনই ময়নার দাদা বাপ্পাদিত্য পাল মাধবডিহি থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। তার ভিত্তিতে বধূ নির্যাতন, খুন ও প্রমাণ লোপাটের ধারায় মামলা রুজু করে তদন্তে নামে পুলিশ। ঘটনার পরের দিন বরুণ ও তার মাকে গ্রেপ্তার করা হয়।

এরপর ২০১০ সালের ২৭ অক্টোবর অবসরকালীন বেঞ্চ থেকে তারা জামিন পায়। ঘটনায় বরুণের দাদা তরুণ দে-রও নাম জড়ায়। কিন্তু, তিনি মারা যাওয়ায় মামলা থেকে তাঁর নাম বাদ যায়। তদন্ত সম্পূর্ণ করে ২০১১ সালের ২৬ জানুয়ারি মাধবডিহি থানার সাব-ইনসপেক্টর শঙ্কর চন্দ্র দে বধূ নির্যাতন, খুন ও প্রমাণ লোপাটের ধারায় আদালতে চার্জশিট পেশ করেন। সরকারি আইনজীবী জানান, এই মামলায় ১০ জন সাক্ষ্য দেন। সাক্ষ্যদের বয়ানে অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে।

আদালত সূত্রে জানা গিয়েছে, দুজনের যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদন্ডের পাশাপাশি, দু’ জনকেই ৫ হাজার টাকা করে জরিমানা অনাদায়ে আরও ৬ মাস কারাবাসের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। গৃহবধূর উপর নির্যাতনের দায়ে দু’জনকে ৩ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড ও ২ হাজার টাকা আর্থিক জরিমানা করা হয়েছে। অন্যথায় আরও ৩ মাস কারাদণ্ড ভোগ করতে হবে দু’জনকে। দু’টি সাজা একসঙ্গে চলবে। তবে, তদন্ত চলাকালীন এবং বিচারপ্রক্রিয়া চলার সময় সাজার মেয়াদ থেকে বাদ যাবে। সাজাপ্রাপ্তরা রায় ঘোষণার ৩০ দিনের মধ্যে আপিল করতে পারবে। উচ্চ আদালতে আপিল করার সামর্থ না থাকলে তারা সংশোধনাগার কর্তৃপক্ষের মারফত হাইকোর্টের লিগ্যাল অ্যাড সেলে আবেদন করতে পারবেন বলে রায়ে জানিয়েছেন জেলা জজ। যদিও সাজা প্রাপ্তরা খুনের অভিযোগ মানতে নারাজ। তাদের দাবি, গৃহবধূ নিজেই মেয়েকে মেরে গায়ে আগুন লাগিয়ে আত্মঘাতী হয়েছে।