বিলুপ্তির পথে বর্ধমানের ইতিহাস! সংস্কারের অভাবে ধ্বংসপ্রায় আজগুবি বাবার মসজিদ

Souris  Dey

Souris Dey

ফোকাস বেঙ্গল ডেস্ক,বর্ধমান: বর্ধমান শহরের একেবারে পশ্চিমপ্রান্তে কাঞ্চননগর এলাকা। এক সময় প্রাচীন জনপদ বর্ধমানের এই কাঞ্চননগরই ছিল মূল শহর। পরবর্তীতে দামোদরের ফি বছর বন্যার কারণে ওই এলকার মানুষ ধীরে ধীরে সরে আসেন শহরের পূর্ব দিকে। সেই সময় কাঞ্চননগরকে নতুন করে সাজিয়েছিলেন বর্ধমানের জমিদার কীর্তিচাঁদ রাই (১৭০২-৪০)। সম্প্রতি বর্ধমান উন্নয়ন সংস্থা, পৌরসভা ও প্রাক্তন কাউন্সিলার তথা বর্তমানে বর্ধমান দক্ষিণের বিধায়ক খোকন দাসের উদ্যোগে এই এলাকাকে সুন্দর করে সাজিয়ে তোলা হয়েছে। ঝাঁ চকচকে রাস্তাঘাট,পরিপাটি করে সাজানো রাস্তার দুধার, পর্যাপ্ত আলো, সুদৃশ্য তোরণ ইত্যাদিতে দৃষ্টিনন্দন করে তোলা হয়েছে গোটা এলাকাটি। তবু স্থানীয় ও শহরবাসীর একাংশ ক্ষোভ প্রকাশ করে জানিয়েছেন, ‘এ যেন প্রদীপের তলাতেই অন্ধকার!’ শত শত বছরের ইতিহাস বহনকারী এই এলাকায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা নানান ঐতিহাসিক স্থাপত্য ও নিদর্শন কে উপযুক্তভাবে রক্ষণাবেক্ষণ করার কোনো উদ্যোগ আজ আর দেখা যাচ্ছে না। ফলে অচিরেই ধ্বংস হয়ে অবলুপ্তির পথে যেতে বসেছে বর্ধমানের অনেক ইতিহাস।

বিজ্ঞাপন

কাঞ্চননগরেরই খরগেশ্বরতলা এলাকায় রয়েছে আজগুবি পিরের থান। এখানে রয়েছে একটি ছোট্ট মসজিদ। বর্ধমান শহরে যত ঐতিহাসিক প্রাচীন মুসলিম স্থাপত্য আছে তার মধ্যে সবথেকে ছোট এই মসজিদ। মসজিদটি অন্তত পক্ষে ২০০ থেকে ২৫০ বছরের সুপুরাতন। এই মসজিদের আয়তন দৈর্ঘ্য প্রস্থে মাত্র ১০ ফুট বাই ১০ ফুট। ইমাম দাঁড়ানোর পর মাত্র পাঁচ জন ব্যক্তি মসজিদের ভিতরে নামাজ পড়তে পারতেন। জানা যায়, এই মসজিদটি আজগুবি পির বাবার ব্যক্তিগত মসজিদ ছিল। আজগুবি বাবা ছিলেন এক পির সাহেব। কথিত আছে তিনি বিভিন্ন রকম আজগুবি কেরামতি দেখাতে পারতেন, তাই তাকে সাধারণ মানুষ আজগুবি বাবা বলে সম্বোধন করতেন। শোনা যায়, এই পির বাবা প্রায় ১৫০ বছর বেঁচে ছিলেন। দেশের স্বাধীনতার সময় তিনি বেঁচে ছিলেন। যেহেতু কাঞ্চননগরে মুসলিম বসতি খুব একটা ছিল না, তাই এই ছোট্ট মসজিদেই নামাজের কাজ চলে যেতো।

স্বাধীনতার পর এই এলাকায় বাংলাদেশের মানুষের বসতি গড়ে ওঠে। সেই সময় যে অল্প সংখক মুসলিম এখানে বসবাস করতেন তারা মুসলিম অধ্যুষিত শহরের বাহির সর্বমঙ্গলা পাড়া ও লস্কর দীঘি এলাকায় উঠে যান। ফলে এই মসজিদ দেখাশোনা করার আর কেউই থাকে না। মসজিদের পাশেই ঈদগাহ অবস্থিত, বর্তমানে ওই ঈদগাহ্তে অমুসলিম মানুষেরা ধূপ ধুনো ও মাটির ঘোড়া দিয়ে থাকেন। নাম তাই পিরতলা। পরিতক্ত ঈদ ময়দানের যা আয়তন তাতে তিনশোর মতো মানুষ নামাজ পড়তে পারবে। মসজিদটি একটি গম্বুজ, চারটে মিনার ও তিন দরজার সমন্বয়ে তৈরি হয়েছিল। দীর্ঘদিনের অযত্নে মসজিদের প্লাস্টার খসে পড়ে গেছে, দেয়াল ভাঙছে, দরজা নেই। জঙ্গলে পুরো এলাকাটা ভরে গেছে।

মসজিদটির গঠনপ্রণালী দেখলেই বোঝা যায় যায় বেশ প্রাচীন, মসজিদটি খিলেনের উপরে আজও দাঁড়িয়ে আছে। চারিদিকে ঝোপঝাড় জঙ্গলে ভর্তি, বটগাছ গোটা মসজিদকে আলিঙ্গন করে দাঁড়িয়ে আছে, না হলে আরো আগেই এটি ভেঙে পড়তো বলে জানিয়েছেন ইতিহাসবিদেরা। মসজিদের গম্বুজের উচ্চতা প্রায় ৩৫ ফুট। একসময় অনেক দূর থেকে এই মসজিদ কে দেখা যেতো। বর্তমানে মসজিদ ও ঈদগাহর পুরো এলাকাটি ওয়াকফ সম্পত্তি। বর্ধমান হেরিটেজ এসোসিয়েশন এর সাধারণ সম্পাদক সর্বজিৎ যশ বলেন, ” এই মন্দিরটি বর্ধমান শহরের ইতিহাসের অঙ্গ। এটির বিশেষ কিছু বৈশিষ্ট্যও রয়েছে। এই ধরনের স্থাপত্য কে সংরক্ষণ করে তার রক্ষণাবেক্ষণ করা জরুরি। বর্ধমান পৌরসভার উদ্যোগে আজগুবি তলার সংরক্ষণ ও রক্ষণবেক্ষণের ব্যবস্থা করা উচিত, তাহলেই রক্ষা পাবে বর্ধমানের ইতিহাস ও ঐতিহ্য।”

আরো পড়ুন