---Advertisement---

বর্ধমানের পীরপুকুর এলাকায় রহস্যজনকভাবে মৃত্যু মা ও দুই মেয়ের, তদন্তে পুলিশ

Souris Dey

Published

ফোকাস বেঙ্গল ডেস্ক,বর্ধমান: সন্ধ্যাবেলাতেও মা ও দুই মেয়ে মিলে একসঙ্গে বসে টিভিতে সিরিয়াল দেখেছেন। পরের দিন সকালে পুলিশ বাড়ির দরজা ভেঙে বাড়ির দোতলার ডাইনিং থেকে তিনজনের নিথর দেহ উদ্ধার করে নিয়ে যায়। রহস্যজনক ও মর্মান্তিক এই ঘটনায় বৃহস্পতিবার সকালে ব্যাপক আলোড়ন পড়ে যায় বর্ধমান শহরের পীরপুকুর এলাকায়। পুলিশ সূত্রে জানা গেছে মৃতরা হলেন, মা মৃণালিনী চৌধুরী(৭০), বড় মেয়ে বন্দিতা চৌধুরী(৪০) ও ছোট মেয়ে শঙ্খমিতা চৌধুরী (৩৩)।

বিজ্ঞাপন

ডিএসপি ট্র্যাফিক ২ রাকেশ কুমার চৌধুরী বলেন,’ বৃহস্পতিবার সকালে শহরের পীরপুকুর এলাকায় একটি বাড়ি থেকে সম্পর্কে মা ও দুই মেয়ের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। আমরা এই ঘটনার তদন্ত শুরু করেছি। কি কারণে এই ঘটনা, তার সব ধরনের সম্ভাবনা মাথায় রেখেই তদন্ত করছি। বাড়িটি সিল করে দেওয়া হয়েছে। বাড়ির দোতলায় যে অংশে মৃতদেহগুলো পাওয়া গিয়েছে সেখান থেকে একটি কীটনাশক জাতীয় তরল পদার্থের শিশি উদ্ধার করা হয়েছে। পরীক্ষার জন্য ল্যাবরেটরি তে পাঠানো হচ্ছে সেটি। তদন্তের প্রয়োজনে ফরেনসিক দপ্তরে জানানো হয়েছে। খুব শীঘ্রই ফরেনসিক টিম এই ঘটনার তদন্তে আসবে। মৃতদের পরিবারের লোকেদের সঙ্গে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। প্রাথমিকভাবে আত্মহত্যার ঘটনা বলে অনুমান করা হলেও তদন্তের স্বার্থে সবদিক খতিয়ে দেখা হচ্ছে। যদিও ময়না তদন্তের রিপোর্ট পাওয়া গেলে মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে আরও পরিষ্কার হওয়া যাবে। এই মুহূর্তে বাড়িটিকে নজরদারির মধ্যে রাখা হয়েছে।’

এদিকে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, এই বাড়িতে দীর্ঘদিন ধরে আয়ার কাজ করতেন কালনা গেটের বাসিন্দা পলি ওরফে রূপলি হাজরা। মুলত তিনি মৃণালীনি চৌধুরীর ছিয়াশি বছরের বৃদ্ধ মা প্রতিভারাণী মন্ডল কে দেখাশুনা করতেন। তিনিও এই বাড়িতেই তাঁর মেয়ে ও দুই নাতনির সঙ্গে থাকতেন। সারাদিন থাকতেন পলি। রাতে বাড়ি চলে যেতেন। এদিন সকালে তিনি প্রতিদিনের মতন কাজে এসে বারবার বেল বাজিয়ে কোন সাড়াশব্দ না পেয়ে প্রতিবেশীদের খবর দেন। এরপরে এলাকার লোকেরা পুলিশে খবর দেয়। পুলিশ এসে বাড়ির দরজা ভেঙে উপরে উঠে দেহগুলি উদ্ধার করে।

এদিকে শহরের সম্ভ্রান্ত পরিবার বলেই পরিচিত পরিবারের একসঙ্গে তিন মহিলার রহস্য মৃত্যুকে কেন্দ্র করে চাঞ্চল্য ছড়ায় এলাকা জুড়ে। স্থানীয় ও পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে চৌধুরী পরিবারের আর্থিক পরিস্থিতি এতটাই ভালোছিল যা অনেকেরই ইর্ষার কারণ হতে পারে। মঙ্গলকোটের ভাল্যগ্রাম, কলকাতার ২টি জায়গায় বাড়ি, একটি ফ্যাক্টারি ও সোনারপুরে বাড়ি ও জমি ছিল। এছাড়াও শেয়ার বাজারে ও মিউচাল ফান্ডেও প্রচুর টাকা বিনিয়োগ ছিল এদের। এহেন আর্থিকভাবে স্বচ্ছল পরিবারের সদস্যদের এইভাবে মৃত্যুর কারণ নিয়ে রীতিমত ধ্বন্দে পুলিশ। ঘটনার তদন্তে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কল্যাণ সিংহরায়, ডিএসপি ট্রাফিক ২ রাকেশ চৌধুরী, বর্ধমান থানার আইসি সুখময় চৌধুরী সহ অনান্য পুলিশ আধিকারিকরা দীর্ঘ সময় এলাকা ঘুরে দেখেন। কথা বলেন প্রতিবেশীদের সঙ্গেও।

এদিকে সম্ভ্রান্ত পরিবার পাশাপাশি বিশাল সম্পত্তির মালিক মা ও দুই মেয়ের মৃত্যু ঘিরে উঠছে একাধিক প্রশ্ন। করোনার সময়ে ২০২১ সালে মারা যান মৃণালীনি দেবীর স্বামী বিমল চৌধুরী। চৌধুরী পরিবারের নিকট আত্মীয় সন্টু মল্লিক বলেন, ‘বিমলের মৃত্যুর পর থেকে ওদের মধ্যে একটা অবসাদ তৈরী হয়েছিল। শঙ্খমিতা টিসিএসে চাকরি করতো। বিয়েও করেছিল দুই বোনে। বড় মেয়ের আগেই ডির্ভোস হয়ে গিয়েছিল। ছোট মেয়ের বিয়ে রেজিস্ট্রীও হয়নি, ডির্ভোসও হয়নি। হঠাৎই চাকরিটাও ছেড়ে দিয়ে চলে এলো। সব মিলিয়ে সকলের মধ্যেই একটা অবসাদ তৈরি হয়েছিল। কে কি করল, নাকি  সবাই মিলে পরিকল্পনা করেই এই পথ বেছে নিলো – কিছুই বুঝতে পারছিনা। কলকাতায় কার্বন ফ্যাক্টারির বিশাল জায়গা, দুটো বাড়ি এছাড়াও প্রচুর জমি, মিউচাল ফান্ডে বিনিয়োগ ছিল। এখন এসব কি হবে কে জানে। পুলিশ তদন্ত করে দেখুক।’

শেয়ার করুন 🤝🏻

Join WhatsApp

Join Now
---Advertisement---