ফোকাস বেঙ্গল ডেস্ক,বর্ধমান: ৩০টি পুজো কমিটি নিয়ে প্রথমবার বর্ধমানে মা কার্নিভাল দেখতে কার্যত লক্ষাধিক মানুষের ভিড় উপচে পড়ল বিরহাটা থেকে গোলাপবাগ মোড় পর্যন্ত রাস্তার দু পাশে। পুরুলিয়ার ছৌনৃত্য, ডান্ডিয়া, কাঠি নৃত্য সহ রাজ্য সরকারের নানা প্রকল্পের থিম, এমনকি বাংলায় তৈরি রোবট কেও এদিন অংশগ্রহণকারী পুজোগুলোর শোভাযাত্রায় দেখতে পাওয়া গেছে। সাধারণ মানুষ এদিন বিকেল থেকেই মুখিয়ে ছিলেন প্রথমবার এই রংবেরংয়ের জমকালো কার্নিভাল দেখার জন্য। অন্যদিকে বর্ধমানের কার্নিভালের এবারে আকর্ষণ আরো বেড়ে গিয়েছিল মুম্বাইয়ের প্রখ্যাত অভিনেতা চাঙ্কী পাণ্ডের উপস্থিতিতে। এদিন মঞ্চ থেকেই চাঙ্কী পান্ড ঢাকের তালে নেচে দর্শকদের মন জয় করে নেন।
এদিন কার্নিভাল শুরুর পর পুজো কমিটিগুলো এক এক করে বিরহাটা থেকে কার্জন গেট হয়ে জিটি রোড ধরে ধীরে ধীরে পাঞ্জাবী পাড়ার দিকে এগিয়ে যায়। কার্জন গেটের মূল মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ, জেলাশাসক প্রিয়াঙ্কা সিংলা, বিধায়ক খোকন দাস, পুরসভার চেয়ারম্যান পরেশ চন্দ্র সরকার, ভাইস চেয়ারম্যান মৌসুমী দাস সহ অন্যান্য প্রশাসনিক আধিকারিক, কাউন্সিলার ও বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ গণ।
জেলার পুলিশ সুপার কামনাশীস সেন এদিন নিজে রাস্তায় নেমে আইনশৃঙ্খলার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের তদারকি করেন। একই সঙ্গে যানচলাচল নিয়ন্ত্রনেও কঠোর পদক্ষেপ নেয় পুলিশ। বেশ কয়েকটি অ্যাম্বুল্যান্স ও ডাক্তার দেখাতে বের হওয়া কয়েকটি গাড়িকে পুলিশ বিনা বাধায় পার করিয়ে দিয়েছে। পুলিশ সুপার কামনাশীস সেন বলেন, ‘জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে আমরা সমস্ত রকমের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করেছি, একই সঙ্গে সিসি ক্যামেরায় নজরদারি রাখা হয়েছে। যাতে কোথাও কোন সমস্যা হলে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া যায়। জরুরি পরিষেবার গাড়িগুলোকে দ্রুত যাতায়াতের ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে।’ জেলাশাসক প্রিয়াঙ্কা সিংলা বলেন, ‘আমরা ১ সেপ্টেম্বর থেকেই পুজোর শুরু করে দিয়েছি। আর কার্নিভালের মাধ্যমে এবারের পুজোর শেষ হবে। বাংলার সৃষ্টি ও কৃষ্টিকে এদিন বিভিন্ন পুজো কমিটি যেভাবে তুলে ধরছেন তাদের জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে আমরা ধন্যবাদ জানাই।’
এদিকে প্রথমবার কার্নিভালের আসরেই বেশ কিছু অসঙ্গতি নিয়ে সোচ্চার হয়েছেন শহরবাসীর একাংশ। অন্যদিকে কার্নিভালের মূল মঞ্চ থেকে বর্ধমান পুরসভা কে এই বিশাল কর্মকাণ্ডের কোন স্বীকৃতি ও সম্মান না জানানোয় ব্যাপক ক্ষোভ প্রকাশ করলেন খোদ চেয়ারম্যান পরেশ চন্দ্র সরকার। কার্নিভাল চলাকালীন মঞ্চ থেকেই এই ক্ষোভ উগড়ে দেন তিনি। কার্যত অপমানিত হয়ে সঞ্চালকের হাত থেকে মাইক্রোফোন কেড়ে নিয়ে জেলাশাসকের কাছে নিজের ক্ষোভ জানিয়ে মঞ্চ থেকে নেমে যান বর্ধমান পুরসভার পুরপ্রধান। এদিন মঞ্চে উপস্থিত সঞ্চালকের মাইক কেড়ে পরেশবাবুকে বলতে শোনা যায়, ‘আপনার এখানে ইয়ার্কি মারছেন। ফাজলামি হচ্ছে। পুরসভা এত কিছু করল, এত লক্ষ টাকা খরচ করল আর একবারও পুরসভার নাম নেবেন না আপনারা। কাদের ইন্ধনে এসব হচ্ছে আমি জানিনা।’
মঞ্চে বসে থাকা জেলাশাসক প্রিয়াঙ্কা সিংলা বিষয়টি দেখতে পেয়ে পুরপ্রধানের কাছে জানতেও চান কি সমস্যা হয়েছে। তার উত্তরে পরেশচন্দ্র সরকার বলেন, ‘কি হয়েছে বুঝতে পারছেন না। আপনার উপস্থিতিতে পুরকর্মীদের, পুরসভা কে অপমান করা হচ্ছে।’ এরপরেই অভিমানে মঞ্চ ছাড়েন পরেশবাবু। পরে সংবাদ মাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে বলেন, ‘খুবই ভালো অনুষ্ঠান হচ্ছে, সব কিছুই ঠিক আছে। তবে এই বয়সে এসে কোন অন্যায় দেখলে আর প্রতিবাদ না করে থাকতে পারিনা। পুরসভা কয়েকলক্ষ টাকা খরচ করেছে। এই দু মাস ধরে পুজো কে কেন্দ্র করে, কয়েকদিন ধরে কার্নিভাল কে কেন্দ্র করে যেভাবে আমাদের পুরকর্মীরা কাজ করেছেন সেখানে এত লক্ষ মানুষের সামনে একবারও কি তাঁদের সম্মান জানানো যেতো না? এইটুকু পাবার কি তাঁরা যোগ্য নয়? একবারও কি বর্ধমান পুরসভার নাম নেওয়া যেত না। সেই জায়গা থেকেই আমি আমার ক্ষোভের কথা জানিয়ে নেমে এসেছি।’ তবে এ বিষয়ে জেলাশাসকের কোনো প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।