ফোকাস বেঙ্গল ডেস্ক,রায়না: অসুস্থ হয়ে মারা যাওয়ার তথ্য তুলে ধরে মৃতের দেহ দাহ করতে শ্মশাণে নিয়ে যাওয়ার পর মৃতের স্ত্রীর ফোনের কল রেকর্ডিং সামনে আসতেই মৃত্যুর কারণ নিয়ে রীতিমত রহস্য দানা বেঁধেছে। সোমবার গভীর রাতে রহস্যজনক এই ঘটনাটি ঘটেছে পূর্ব বর্ধমানের মাধবডিহি থানার সুবলদহ গ্রামে। মৃতের নাম প্রশান্ত ধোক (৪২)। মৃতের পরিবারের সদস্য ও প্রতিবেশীদের অভিযোগ, প্রশান্ত কে জলের সঙ্গে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে, শ্বাসরোধ করে মেরে ফেলেছে তার স্ত্রী ঝুমা ধোক(৩৪)। আর এই পূর্ব পরিকল্পিত খুনের পিছনে রয়েছে ঝুমার সঙ্গে বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্কে জড়িত সঙ্গী শেখ শামীম।জানা গেছে শেখ শামীমের বাড়ি জামালপুর থানার জ্যোৎদক্ষিণ গ্রামে। সে পেশায় রাজমিস্ত্রি।
মঙ্গলবার সুবলদহ গ্রামে প্রশান্ত ধোকের মৃত্যুর পর উত্তেজনা তৈরি হলে মাধবডিহি থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে মৃতের স্ত্রী কে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায়। মৃত প্রশান্ত ধোকের দাদা তাপস ধোক এদিন সন্ধ্যায় লিখিত অভিযোগ থানায় জমা করা করেছেন বলে পুলিশ জানিয়েছে। ঘটনার বিষয় খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।
প্রশান্ত ধোকের দাদা গদাই ধোক বলেন,” আমরা রাজমিস্ত্রির কাজ করি। সেই সূত্রে শামীমের আসা যাওয়া ছিল ভাইয়ের বাড়িতে। প্রথমে আমার ভাইয়ের বউয়ের সঙ্গে শামীমের অবৈধ সম্পর্কের বিষয়টা ভাই জানতে পারেনি। বিষয়টি জানতে পেরে তিন চার দিন আগে এই নিয়ে ঘরে অশান্তি হয় ঝুমার সঙ্গে প্রশান্তর। গতকাল আলাদা ঘরেই শুয়েছিল দুজনে। ঝুমার ফোনে ফোন করে প্রশান্ত কে মারার পরিকল্পনা করেছিল শামীম।
শামীম নিজে ঘটনাস্থলে আসেনি। রাতে দুজনকে পাঠিয়েছিল গ্রামে। ঝুমার ফোনের কল রেকর্ডিং থেকে পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে, প্রশান্তকে মারার জন্য ফোনের অপর প্রান্ত থেকে কিভাবে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এমনকি রাতে প্রশান্ত যতবার জল খেতে চেয়েছে, ঝুমা জলের সঙ্গে ঘুমের বড়ি মিশিয়ে খাইয়েছে। এরপরও মৃত্যু নিশ্চিত করতে মুখে কাপড় চাপা দিয়ে শ্বাসরোধ করে মেরে দিয়েছে ঝুমা। আমরা ঝুমার কঠোর শাস্তি দাবি করছি।’
এদিকে মঙ্গলবার সকালে মৃত প্রশান্ত ধোকের দেহ দাহ করে দেওয়া হয়। শ্মশাণে মৃতদেহ নিয়ে যাওয়ার পর মৃতের ছেলের কাছে যে ফোন ছিল (এই ফোন থেকেই গতকাল রাত্রে কথা বলেছিল ঝুমা ধোক ) সেই ফোনের কল রেকর্ডিং প্রতিবেশীরা ঘেঁটে দেখতেই প্রশান্তর মৃত্যুর পিছনে যে তার স্ত্রীর হাত রয়েছে সেব্যাপারে একপ্রকার নিশ্চিত হয়। এরপরই ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে এলাকায়। খবর দেওয়া হয় পুলিশকে।
গ্রামে উত্তেজনা থাকায় পুলিশ প্রশান্ত ধোকের স্ত্রী ঝুমা ধোক কে থানায় নিয়ে যায়। তবে অসুস্থতার কারণে প্রশান্ত ধোকের মৃত্যু হয়েছে বলে তড়িঘড়ি মৃতদেহ দাহ করে দেওয়ায় এবং পরিবারের পক্ষ থেকে থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের না হওয়ায় শুধু মাত্র কল রেকর্ডিং এর ওপর ভিত্তি করে এই রহস্য মৃত্যুর সমাধান কিভাবে হবে, পুলিশি তদন্তই বা কোন দিকে যাবে তা সময় বলবে বলেই মত প্রকাশ করেছেন গ্রামবাসীদের একাংশ।
অন্যদিকে মহকুমা পুলিশ আধিকারিক সুপ্রভাত চক্রবর্তী বলেন, ‘গ্রামের লোকের দাবি সুবলদহ গ্রামে প্রশান্ত ধোকের মৃত্যুর পিছনে রহস্য আছে। কিন্তু তার দেহ পুড়িয়ে দেওয়ায় ময়নাতদন্ত করা যায়নি। ফলে মৃত্যুর সঠিক কারণ পুলিশ জানতে পারছেনা। তবুও পুলিশ গোটা বিষয়টি তদন্ত করে দেখছে। অডিওর সত্যতা রয়েছে কিনা সেটাও দেখা হচ্ছে। আপাতত মৃতের স্ত্রীকে আটক করা হয়েছে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য।’