আজ থেকে শুরু হচ্ছে নবরাত্রি, মাহাত্ম্য জানতে পড়ুন

Souris  Dey

Souris Dey

ফোকাস প্রতিবেদন: আজ থেকে শুরু হচ্ছে নবরাত্রি। নবরাত্রি অর্থাৎ এমন নয়টি রাত্রি যে নয় রাত্রিতে মা দুর্গা নয় টি বিশেষ বিশেষ রূপে আবির্ভূতা হন। মহালয়ার পর থেকেই শুরু হয় এই নব রাত্রি। এই নবরাত্রীর শেষ পাঁচটি দিনই বাঙালিরা দুর্গা পুজোয় মহাসাড়ম্বরে পালন করেন, পঞ্চমী, ষষ্ঠী, সপ্তমী অষ্টমী ও নবমী হিসেবে। মায়ের এই নয়টি রূপ আসলে সাধনার নয়টি স্তর। তিনি এক এক করে উন্নীত হন এক এক স্তরে এবং এক এক স্তরে এক এক রূপে এক এক অনুভূতি অনুভূত হয় আর সেই রূপেরই তখন প্রকাশ ঘটে।

বিজ্ঞাপন

দেবী দুর্গার ৯ দিনের এই নয় স্বরূপের কথাই আজকে বলবো।

এই নব রাত্রির প্রথম দিনের দেবীর রূপ হলো শৈল পুত্রী, দ্বিতীয় দিনে দেবীর রূপ ব্রহ্মচারিণী, তৃতীয় দিনে দেবীর রূপ হলো চন্দ্রঘন্টা, চতুর্থ দিনে দেবীর রূপ হলো কুষ্মান্ডা, পঞ্চম দিনে দেবীর রূপ হলো স্কন্দমাতা, ষষ্ঠ দিনে দেবীর রূপ হলো কাত্যায়নী, সপ্তম দিনে কালরাত্রি রূপে দেবী পূজিতা হন। অষ্টম দিনে দেবীর মহাগৌরী রূপ আর নবম দিনে দেবী সিদ্ধিদাত্রী রূপে আর্বিভূতা হন। এইবছর অর্থাৎ ২০২২ সালে ২৬ শে সেপ্টেম্বর থেকে ৫ ই অক্টোবর পর্যন্ত নবরাত্রির সময় পর্ব।

নবদুর্গার এই নয় রূপের মাহাত্ম্য আবার নয় রকম।

১। শৈলপুত্রী – দেবী দুর্গার প্রথম রূপ হলো শৈল পুত্রী। শৈল অর্থাৎ পাহাড়। দেবী এই রূপে পর্বতরাজ হিমালয়ের কন্যা। যেহেতু এইরূপে দেবী কন্যার রূপ সেই কারণে এই রূপটি হল দেবীর পরম করুণাময়ী ও মমতাময়ী রূপ। এমনটা মনে করা হয় যে ভক্তিভরে দুর্গার এই রূপের পুজো করলে সুখ ও সিদ্ধি লাভ করা যায়।

২। ব্রহ্মচারিণী – দেবী দুর্গার দ্বিতীয় রূপ এটি। নাম শুনেই বোঝা যাচ্ছে যে, এটি দেবী দুর্গার ব্রহ্মচারিনী রূপ। এইরূপ দেবী তখন ধারণ করেছিলেন যখন তিনি দেবাদিদেব মহাদেবকে স্বামী রূপে পাওয়ার জন্য কঠোর তপস্যায় ব্রতী হয়ে ছিলেন। এই রূপকে আবার তপশ্চারিনীও বলা হয়। যদি কেউ এই রূপে দেবীর পুজো করে তাহলে সে যশ, সিদ্ধি ও সর্বকার্যে বিজয় লাভ করতে পারবে।

৩। চন্দ্রঘন্টা – এই রূপে দেবী সিংহ বাহিনী। দেবীর এই রূপের পুজো যে ভক্ত করে তার মনের মধ্যে থাকা সমস্ত কষ্ট শেষ হয়ে যায়। দেবী চন্দ্র ঘন্টার পূজো করলে ব্যক্তি মনে শক্তি পায়। এছাড়া এই রূপের পুজো করলে কোন ব্যক্তি বীরত্ব লাভ করতে পারে।

৪। কুষ্মান্ডা – দেবী দুর্গার চতুর্থ রূপ হলো কুষ্মান্ডা। দেবীর এই রূপের উপাসনা করলে আয়ু,যশ, বল ও আরোগ্য লাভ হয়। এছাড়া এই রূপের পুজো করলে যাবতীয় রোগের থেকে ব্যক্তি আরোগ্য লাভ করে।

৫। স্কন্দমাতা – স্কন্দ মাতা অর্থাৎ স্কন্দের(কার্তিকের আরেক নাম)মাতা। অর্থাৎ এ মাতৃময়ী রূপ। এই রূপে দেবী ভক্তদের মনোবাঞ্ছা পূর্ণ করেন। এই রূপে দেবীর মোক্ষ প্রাপ্তি ও সহজ হয়ে যায়।

৬। কাত্যায়নী – দেবীর এই রূপ উমা, হেমাবতী ও ঈশ্বরী নামেও প্রচলিত। মহর্ষি কাত্যায়নের পুত্রী বলা হয় দেবী দুর্গাকে সেই থেকেই দেবীর এই নাম। এমনটা মনে করা হয় যে দেবীর এই ষষ্ঠ রূপের পূজা করলে অবিবাহিতা নারীদের ভালো বিবাহ হয়।

৭। কাল রাত্রি – দেবী দুর্গার সপ্তম রূপ কালরাত্রি। এই রূপে দেবী দুর্গা অসুরের নাশ করেন। দেবী দুর্গার এই রোগ সর্বদায় অশুভ শক্তিকে বিনাশ করে শুভ শক্তিকে রক্ষা করে, ভক্ত কি এইরূপে দেবী শুভ ক্ষয় প্রদান করেন তাই এইরূপকে কালরাত্রি ও বলা হয়।

৮। মহা গৌরী – দেবী দুর্গার অষ্টম রূপ এটি। এইরূপে তিনি দেবাদিদেব মহাদেবের অর্ধাঙ্গিনী। এইরূপে তিনি ভক্তদের মনবাঞ্ছা পূর্ণ করেন এবং হৃদয়ের কষ্ট দূর করেন। প্রচলিত ধারণা অনুযায়ী এই দিন দেবীকে যদি চুনরি দেওয়া হয় তাহলে সেই ভক্ত সৌভাগ্য লাভ করেন।

৯। সিদ্ধিদাত্রী – দেবী দুর্গার নবম রূপ হলো সিদ্ধিদাত্রী। এই রূপের পূজা করলে সমস্ত আটকে যাওয়া কাজ পূর্ণ হয়ে যায় এবং সকল কাজের সিদ্ধি লাভ হয়।

জ্যোতিষ মতে নবরাত্রির ন’‌দিন দুর্গা সপ্তসতীর পাঠ নিয়মপূর্বক করলে বাড়িতে ইতিবাচক শক্তির বসবাস করে আর ব্যক্তির সব মনোস্কামনা পূর্ণ করার আশীর্বাদ পাওয়া যায়।

( এই সমস্ত তথ্য সবই জ্যোতিষ শাস্ত্রের উপর নির্ভরশীল )

আরো পড়ুন