ফোকাস বেঙ্গল ডেস্ক,পূর্ব বর্ধমান: এক ঐতিহাসিক সন্ধিক্ষণের সামনে দাঁড়িয়ে দক্ষিণ দামোদরের মানুষ। বাঁকুড়া-দামোদর রিভার রেলওয়ে যেটা বর্তমানে বাঁকুড়া থেকে মশাগ্রাম পর্যন্ত চলে, এবার সেই ট্রেন লাইন সরাসরি সংযুক্ত হচ্ছে বর্ধমান-হাওড়া কর্ড লাইনের সঙ্গে। এরফলে যাত্রীদের যেমন ট্রেন চেঞ্জ করার আর প্রয়োজন হবে না, অন্যদিকে মশাগ্রাম থেকে লাইন পার হয়ে অন্য ট্রেন ধরার ঝুঁকিও থাকবে না। এক ট্রেনেই বাঁকুড়া থেকে মশাগ্রাম হয়ে পৌঁছে যাওয়া যাবে হাওড়ায়। এত দিন মশাগ্রামে ট্রেন বদল করতে হত। এবার আরও সহজে এবং কম সময়ে রেলপথে হাওড়া থেকে বাঁকুড়া পৌঁছে যাওয়া যাবে। বাঁকুড়া থেকে হাওড়া ট্রেন চলাচল শুরু হলে এই এলাকার আর্থ-সামাজিক ব্যবস্থারও আমূল পরিবর্তন ঘটবে বলেই মনে করছেন ওয়াকিবহাল মহল থেকে দক্ষিণ দামোদর নিবাসী অধিকাংশ মানুষ।
সূত্রের খবর, কিছু দিন আগে বাঁকুড়া-মশাগ্রাম ট্রেন ইলেকট্রিফিকেশন হয়েছে। চালু হবে বাঁকুড়া-হাওড়া ট্রেন পথ। বিষ্ণুপুরের সাংসদ সৌমিত্র খান ইতিমধ্যে ঘোষণা করেছেন কয়েক দিনের মধ্যে কেন্দ্রীয় রেলওয়ে মন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব এই রেলের উদ্বোধন করবেন। এর ফলে বাঁকুড়া থেকে কলকাতার দূরত্ব কমে যাবে প্রায় দু’ঘণ্টা। অনেক গুরুত্বপূর্ণ ট্রেন এই লাইন দিয়ে যাতায়াত করবে। দুর্গাপুর-রানিগঞ্জ-আসানসোলের মতো খনি এলাকা দিয়ে একাধিক এক্সপ্রেস ট্রেন যাতায়াতের ফলে রেললাইনে ধ্বস নামার আশঙ্কা বাড়ছে। নতুন বাঁকুড়া – হাওড়া রেল লাইন চালু হয়ে গেল অনেক দূরপাল্লার ট্রেনই এই রুট দিয়ে তখন যাতায়াত করবে।
বর্তমানে এই রুটে ট্রেনের সংখ্যা আগের থেকে বাড়ানো হয়েছে। ফলে দক্ষিণ দামোদরের রায়না, খণ্ডঘোষ, মাধবডিহি, ইন্দাস, পাত্রসায়ের-সহ বাঁকুড়া এবং বর্ধমানের বিস্তীর্ণ এলাকার মানুষ এতে ব্যাপক উপকৃত হচ্ছেন। আর এরপর বাঁকুড়া থেকে সরাসরি হাওড়া যাবার ট্রেন চালু হলে আরো কম খরচে মানুষ কলকাতা পৌঁছতে পারবেন। এরফলে উপকৃত হবেন সমগ্র দক্ষিণ দামোদরবাসী। দক্ষিণ দামোদর এলাকার ছাত্র-ছাত্রীকে তখন বর্ধমান শহরে পড়াশোনা করতে যেতে ১০০ থেকে ১৫০ টাকা প্রতিদিন খরচ করতে হবে না। সেখানে এর থেকে অনেক কম খরচে হাওড়া হয়ে ছাত্র-ছাত্রীরা কলকাতা পৌঁছে যেতে পারবে। মোটকথা শিক্ষা, স্বাস্থ্য, ব্যবসা-বাণিজ্য সহ আর্থসামাজিক দিক থেকে এই এলাকার প্রভূত উন্নয়ন ঘটবে বলেই ধারণা সাধারণ মানুষের।
এদিকে সামনেই লোকসভা ভোট। তার আগে যুদ্ধকালীন তৎপরতায় বাঁকুড়া-দামোদর রিভার রেলওয়ে কে মশাগ্রামের সঙ্গে সংযুক্তকরণের কাজ চালাচ্ছে রেল মন্ত্রক। বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর পক্ষ থেকে কেন্দ্রীয় সরকারের এই উদ্যোগ কে ভোটের রাজনীতি বলেই কটাক্ষ করা হয়েছে। এক সময় কেন্দ্রীয় রেল মন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি এই লাইনের ছোট ট্রেন কে বড় ট্রেনের জন্য অনুমোদন করেছিলেন। যদিও সেটা পরে বন্ধ হয়ে যায়। এই বাঁকুড়ার দামোদর রিভার রেলওয়ের জন্য আরও একজনের বড় অবদান রয়েছে। প্রাক্তন রেলওয়ে স্ট্যান্ডিং কমিটির চেয়ারম্যান বাসুদেব আচারিয়ার, যিনি বর্তমানে প্রয়াত হয়েছেন। তবে অবশেষে যে এই রেল লাইন সরাসরি হাওড়ার পর্যন্ত বিস্তৃত হতে চলেছে তার ফলে উপকৃতই হবেন হাজার হাজার এলাকাবাসী বলেই সাধারণের মত। দক্ষিণ দামোদর এলাকার মানুষ এখন এই রেল লাইনের উদ্বোধনের অপেক্ষায় প্রহর গুনছেন।