ফোকাস বেঙ্গল ডেস্ক,নদীয়া: বৃক্ষের সমাদর করে প্রাচীন ভারতের শাস্ত্রকারেরা বলছেন, ‘এক বৃক্ষে দশ পুত্র সমাচরেৎ’। অর্থাৎ এক বৃক্ষ দশ পুত্রের সমতুল্য। বলেছেন, যে ব্যক্তি পথের ধারে, জলাশয়ের ধারে গাছ লাগাবে তার স্বর্গবাস নিশ্চিত, যতদিন সেই রোপিত বৃক্ষ ফল ও ছায়া দান করবে (পদ্মপুরাণ)। বৃক্ষের গুরুত্ব উপলব্ধি করেই মানুষ প্রাচীনকাল থেকে বৃক্ষ পূজা করে এসেছে। সেই বৃক্ষের গুরুত্ব উপলব্ধি করে আজ ৫ জুন, ‘বিশ্ব পরিবেশ দিবস’ উপলক্ষে নদিয়া জেলার জয়পুর গ্রামে ‘খামারিয়া বাড়ি’র কালী মন্দিরে প্রথমে বৃক্ষ পুজোর আয়োজন করা হয় ‘দেশের মাটি কল্যাণ মন্দির’-এর পক্ষ থেকে। ৫০ টি হিমসাগর, ৩০ টি আম্রপালি ও ২০ টি সবেদা গাছ অর্থাৎ মোট ১০০ টি গাছ গ্রামবাসীদের মধ্যে বিতরণ করা হয় ও গাছ লাগানো হয়।
এই বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি উপলক্ষে উপস্থিত ছিলেন বিভাস মোদক,পরিমল জোয়ারদার, পরিমল বিশ্বাস, গুরুদাস সন্যাসী, ভজিন বিশ্বাস, মোহন্ত শর্মা ও রবিন বিশ্বাস। শিক্ষক পরিমল বিশ্বাস বলেন, ‘গাছ আমাদের পরম বন্ধু।গাছ না থাকলে আমরা কেউ বাঁচতে পারবো না। বিশেষ করে ফলের গাছ কমে গেলে পশুপাখিরা না খেয়ে মারা যাবে। সেইজন্য জৈব বৈচিত্র্য রক্ষা করার জন্য গাছ লাগাতে হবে।’ শিক্ষক বিভাস মোদক বলেন, ‘প্রাচীনকাল থেকেই আমাদের দেশে গাছের পুজো করা হয়ে থাকে। আমাদের মুনি-ঋষিরা গাছের গুরুত্ব উপলব্ধি করেছিলেন। তাই গাছকে পুজো করা হত। বর্তমানে গাছকে পুজো না করে নির্বিচারে গাছ কাটা হচ্ছে, যার ফলে প্রচন্ড গরমে সবার নাভিশ্বাস উঠছে।’
গ্রামীণ চিকিৎসক পরিমল বিশ্বাস বলেন, ‘গাছ লাগানোর প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। বিশ্ব উষ্ণায়নকে রুখে দিতে পারে একমাত্র বৃক্ষরোপণ। আসুন আমরা সবাই মিলে গাছ লাগিয়ে এই বিশ্বকে সবুজ করে গড়ে তুলি।’ গ্রামীণ চিকিৎসক গুরুদাস সন্ন্যাসী বলেন, ‘আজ দেশের মাটি কল্যাণ মন্দির যে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচির আয়োজন করেছে তা ভীষণভাবে অনুপ্রেরণা মূলক। আমাদের সবার উচিত প্রতিটি গ্রামে ও শহরে এমন কর্মসূচির আয়োজন করা।’
আজকে ‘দেশের মাটি কল্যাণ মন্দির’-এর এই বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি সম্পর্কে মিলন খামারিয়া বলেন, ‘বিশ্ব উষ্ণায়ন আজ আমাদের সামনে অন্যতম সমস্যা হয়ে দেখা দিয়েছে। এই উষ্ণায়নকে রুখে দেবার একমাত্র উপায় প্রচুর পরিমাণে বৃক্ষরোপণ ও বৃক্ষছেদন বন্ধ করা। মানুষকে সচেতন করার মাধ্যমে ‘দেশের মাটি কল্যাণ মন্দির’ এই কাজ গুলো করে চলেছে।আগামী দিনে আরও বৃহত্তর কর্মসূচি আমরা গ্রহণ করবো। আগামী প্রজন্মের জন্য সুন্দর একটি পৃথিবী গড়ে দিতে চাই আমরা।’
আজকের অনুষ্ঠান শেষে মন্ত্রপূত গাছ মন্দিরে জমিতে রোপণ করা হয়। তারপর প্রত্যেক গ্রামবাসীর হাতে একটি করে গাছ তুলে দেওয়া হয় এবং মায়ের পুজোর প্রসাদ বিতরণ করা হয়।এই অনুষ্ঠানে সঙ্গীত পরিবেশন করেন ভজিন বিশ্বাস ও আবৃত্তি করেন অদ্রিজা মোদক এবং সভাপতিত্ব করেন রবিন বিশ্বাস।