স্বাস্থ্য

বর্ধমান মেডিক্যালে শিশু সার্জারিতে সাফল্য, দশ কেজি ওজনের শিশুর পেটে থেকে বেরোলো দেড় কেজির টিউমার

ফোকাস বেঙ্গল ডেস্ক,বর্ধমান: বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে শিশু সার্জারি বিভাগ চালু হওয়ার পরই শিশুর জটিল অস্ত্রোপচারে সাফল্য পেলেন চিকিৎসকরা। দশ কেজি ওজনের শিশুর পেট থেকে বের হল প্রায় দেড় কেজি ওজনের টিউমার। শিশুটির বয়স ২ বছর ১০ মাস। শিশুটির বাড়ি কালনার কালিনগরে। হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, ক্রমাগত পেট ফুলে যাওয়ার সমস্যা নিয়ে শিশুটিকে বর্ধমান মেডিক্যালে আনা হলে সেখানেই চিকিৎসকরা স্ক্যান করে রোগ নির্ণয় করেন। অস্ত্রোপচারের পর শিশুটি আপাতত সুস্থ আছে।

বর্ধমান মেডিক্যাল সুত্রে জানা গেছে, বিগত প্রায় ছয় মাস ধরে শিশুটি পেটের সমস্যায় ভুগছিল। তাঁর পেট ফুলে যাচ্ছিল। পেটের যন্ত্রণাও হচ্ছিল। কালনাতে চিকিৎসক কে দেখানোর পর শিশুটিকে বর্ধমান রেফার করা হয়। গত বুধবার শিশুকন্যাটিকে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজে আনা হয় চিকিৎসার জন্য। পেটে তরল কিছু জমেছে এই ভেবে শিশুটিকে আনা হয়। চিকিৎসকরা তাঁকে ভর্তি করার পরামর্শ দেন। ভর্তির পর শিশুটির সিটি স্ক্যান করা হয়। সিটি স্ক্যানেই ধরা পড়ে টিউমারের বিষয়টি। সারা পেট জুড়েই টিউমারের অস্তিত্ব পাওয়া যায়। সেটি পাকস্থলীর সঙ্গে বিপদজনক ভাবে জুড়ে ছিল। চিকিৎসকরা প্রায় সঙ্গে সঙ্গে অস্ত্রোপচার করার সিদ্ধান্ত নেয়।

মেডিক্যাল সূত্রে জানা গেছে, বেশ কিছু পরীক্ষা নিরীক্ষা পর শুক্রবার শিশুটির অস্ত্রোপচার হয়। চিকিৎসক অরিন্দম ঘোষের তত্বাবধানে এই অস্ত্রোপচার হয়। সঙ্গে ছিলেন চিকিৎসক ঋষিরাজ ব্রহ্ম এবং সুতপা কর্মকার। এনেস্থেশিয়া টিমে ছিলেন সৌমেন মন্ডল। প্রায় দেড় ঘন্টার অস্ত্রপচারের পেট থেকে এই বিশাল টিউমারটি বের করা হয়। আপাতত শিশুটি সুস্থ আছে। তাঁকে পেডিয়াট্রিক ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিট( PICU)তে পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে।

বর্ধমান হাসপাতাল সুত্রে জানা গেছে, মেডিক্যালে শিশুদের সার্জারির জন্য আলাদা বিভাগ পুরপুরি
শুরু হয় নি। এখনও কিছু কাজ বাকি রয়েছে। এই অবস্থায় এই ধরনের জটিল অস্ত্রোপচার বেশ ঝুঁকির ছিল। বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজের
সার্জারি বিভাগের চিকিৎসক অরিন্দম ঘোষ বলেন, ‘বড়দের ক্ষেত্রে এই রোগ দেখা গেলেও
বাচ্ছাদের জন্য এই রোগ বিরল। তিন বছরের শিশুর পেটের মধ্যে এত বড় টিউমারের অস্ত্রোপচার বেশ ঝুঁকি ছিল। সকলের সহযোগিতায় তা বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে সম্ভব হয়েছে। বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজে এই অস্ত্রোপচার হলেও শিশুদের ক্ষেত্রে এই অস্ত্রোপচার প্রথম বলেই দাবি তাঁর।

শিশুটির বাবা জসীম সেখ বলেন, কালনায় দেখানর পর মেয়েকে বর্ধমান নিয়ে যেতে বলে। দশদিন এখানে আছি। মেয়ের অস্ত্রোপচার হয়েছে। এখন মেয়ে ভাল আছে। চিকিৎসকরাই ওকে বাঁচিয়েছেন। বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ তথা শিশু বিশেষজ্ঞ কৌস্তভ নায়েক বলেন, ‘বাচ্ছার এবং এত বড় টিউমার অস্ত্রোপচার বেশ জটিল। চিকিৎসকরা ভাল কাজ করেছেন। শিশু সার্জারি বিভাগ এখনও সম্পূর্ন ভাবে চালু করা যায়নি, কাজ এখনও কিছু বাকি আছে। খুব শীঘ্রই এই কাজ শেষ করা হবে।’