ফোকাস বেঙ্গল ডেস্ক,বর্ধমান: গোটা মাঠ জুড়ে শুধুই নানান পদের খাবারের আয়োজন। কোন আইটেম টা ছেড়ে কোনটা খাবেন নির্বাচন করাই বিড়ম্বনার। তার মধ্যে খাবারের স্টল গুলোতে উপচে পড়ছে ভিড়। বাজার চলতি রেডি ফুডের স্টল যেমন লাগিয়েছেন অনেকেই, তেমনই নতুন নতুন রেসিপির হাতে গরম স্বাদ নিতে উৎসুক ক্রেতাদেরও অভাব নেই। মোটকথা সবমিলিয়ে এখন বর্ধমানের উৎসব ময়দান রীতিমত খাদ্যরসিক মানুষের ভিড়ে যেমন সরগরম, পাশাপাশি সুস্বাদু খাবারের গন্ধে ম ম করছে চারপাশ। গত ৯নভেম্বর থেকে বর্ধমান ফুডিস ক্লাবের উদ্যোগে উৎসব ময়দানে শুরু হয়েছে খাদ্য মেলা ‘ খাদ্যান্বেষন ‘ ২০২২। চলবে ১৩তারিখ অর্থাৎ রবিবার পর্যন্ত।
মেলার আয়জকরা জানিয়েছেন, বর্ধমান তথা রাজ্যের নানান প্রান্তের নামকরা রেস্টুরেন্ট, ফুড স্টল, ক্যাটারার মিলিয়ে প্রায় ৬০ টি স্টল রয়েছে এই মেলায়। কিন্তু এরইমধ্যে এই খাদ্যমেলায় আলাদাভাবে নজর কাড়ছে বর্ধমান কেন্দ্রীয় সংশোধনাগারের বিচারাধীন বন্দীদের দেওয়া খাবারের স্টল। মেলায় ঢুকে ঘুরতে ঘুরতে একটু পিছনের দিকে গেলেই চোখে পড়বে উদয়ন নামে এই স্টল। একশো টাকায় এই স্টলে পাওয়া যাচ্ছে ফুলপ্লেট চিকেন বিরিয়ানি। ষাট টাকায় চিকেন চাপ। প্যাকিং করে নিয়ে যাবারও ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।
সাদা পোষাকে পিছনে দাঁড়িয়ে থাকা বর্ধমান কেন্দ্রীয় সংশোধনাগারের সাব জেলার সত্যদীপ রায়, জেলার আব্দুল কালামরাও অনেক সময়েই ভিড় সামলাতে বাড়িয়ে দিচ্ছেন সাহায্যের হাত। সাদা পোষাকে স্টলের ভিতরে জনা চারেক ছেলে অনবরত ক্রেতাদের চাহিদা অনুযায়ী বিরিয়ানি আর চাপের প্যাকেট রেডি করে সরবরাহ করে চলেছেন। হটাৎ দেখে কারুর বোঝার উপায়ই নেই এরা আসলে বিভিন্ন অপরাধে সাজাপ্রাপ্ত বন্দী। আর এদের তৈরি বিরিয়ানি ই এখন খাদ্য মেলার একপ্রকার ‘ হট ফুড আইটেম’।
বর্ধমান কেন্দ্রীয় সংশোধনাগার সূত্রে জানা গেছে, বর্ধমান রেঞ্জের ডিআইজি থাকার সময়েই সাজাপ্রাপ্ত বন্দীদের সমাজের মূল স্রোতে ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে এই উদ্যোগটি নিয়েছিলেন নবীনচন্দ্র সাহা। বর্তমানে নবীনচন্দ্র সাহা দমদম রেঞ্জের ডিআইজির দায়িত্বে রয়েছেন। আগামীকাল শনিবার তিনি বর্ধমানের এই খাদ্য মেলায় আসছেন। এই উদয়ন স্টলে। তারই নেওয়া উদ্যোগের সফল রূপায়ণ দেখার জন্য।
রাজ্যের আইজি কারা রাজেশ কুমার যাদব বলেন, ‘ সাজাপ্রাপ্ত বন্দীদের সাজা শেষ হয়ে যাওয়ার পর সমাজের মূল স্রোতে ফিরিয়ে দিতে আমরা এই উদ্যোগ রাজ্যের বেশ কয়েকটি সংশোধনাগেরই ইতিমধ্যে নিয়েছি। মুলত সাজাপ্রাপ্ত বন্দিরা মেয়াদ শেষে নিজেদের যাতে অর্থনৈতিক ভাবে প্রতিষ্ঠিত করতে পারেন সেই লক্ষ্য নিয়েই আমরা এই উদ্যোগ নিয়েছি। পরিস্থিতির কারণে কোন অপরাধ করে ফেললেও তার ভিতরে যে নিজস্ব প্রতিভা রয়েছে সেটাই আমরা প্রকাশ করানো চেষ্টা করি। বর্ধমানের ফুড ফেস্টিবেলেও এমনই চার-পাঁচজন বন্দি রয়েছেন যারা খুব কম টাকায় সুস্বাদু খাবার তৈরি করে মানুষকে আনন্দ দিচ্ছেন। ডিআইজি আসছেন ওনাদের আরও উৎসাহিত করার জন্য।’