ফোকাস বেঙ্গল ডেস্ক,মেমারি: ছ’চাকা ডাম্পারের ডালার উচ্চতা ছাপিয়ে আরো উঁচু হয়ে আছে বালি। কোন গাড়ির ওপর ট্রিপল দিয়ে ঢাকা, তো কোনটার পুরো খোলা। এইভাবেই শয়ে শয়ে বিভিন্ন কোম্পানির ( SRL, Rahul Raj, Warish, MKE, Sona ইত্যাদি) নাম লেখা বালির ডাম্পার দামোদরের বিভিন্ন ঘাট থেকে বালি নিয়ে সকাল, বিকেল থেকে রাতভর প্রায় বিনা বাধায় যাতায়াত করছে পাল্লা রোডের রাস্তা দিয়ে। যে কেউ দেখলেই বুঝতে পারবে নদীর বালি ঘাট থেকে বালি ওভারলোড করেই রাস্তায় উঠছে এইসব বালির গাড়ি।
পূর্ব বর্ধমানের মেমারি থানার অন্তর্গত পাল্লা ও চাঁচাই পয়েন্ট এলাকার দামোদর নদ থেকে এইভাবেই নাকি ওভারলোড করে বালি নিয়ে ব্যবসা করার রেওয়াজ! তবে বেশিরভাগ গাড়িকেই পাল্লা রোড হয়ে ১৯নং জাতীয় সড়কে ওঠার মাঝে বেলুটের পাশে আমবাগানের কাছে একবার দাঁড়াতে হয়। না, এখানে কোন টোল ঘর নেই, তবে বালির গাড়ি থেকে ‘সিস্টেম ট্যাক্স’ আদায়ের জন্য রাস্তার পাশে আমবাগানে দাঁড়িয়ে থাকে অজ্ঞাত পরিচয় এক বাইক আরোহী। গাড়ি এলেই উনি বাগান থেকে রাস্তায় উঠে আসেন, ডাম্পারের চালক ‘নিয়ম’ মেনে গাড়ির গতি আস্তে করে দাঁড়িয়ে নির্দিষ্ট ‘দক্ষিণা’ ধরিয়ে ফের সামনের দিকে এগিয়ে যায়। কে পাচ্ছে এই দক্ষিণা সেটা নাকি কেউ জানেনা! তবে এটাই নাকি এই রাস্তার অলিখিত ‘সিস্টেম’।
মেমারি ১ ব্লক ভূমি ও ভূমি রাজস্ব আধিকারিক বিশ্বজিৎ দাস বলেন,’ আমরা নিয়মিত অভিযান চালাই ওভারলোড বালির গাড়ির বিরুদ্ধে। চালান ছাড়া কিংবা ওভারলোড করে বালি পরিবহন করছে এমন গাড়িগুলোকে কে জরিমানা করার পাশাপাশি নিয়ম মেনে লক করা দেওয়া হয়। কিন্তু এতবড় এলাকায় মাত্র ৭জন অফিসার নিয়ে প্রতিদিন একই জায়গায় নজরদারি চালানো সম্ভব হয়না। রোটেশনে গোটা এলাকার বিভিন্ন জায়গায় অভিযান করা হয়। তবে পাল্লা রোডের রাস্তায় ওভারলোড বালির গাড়ি যাতায়াতের বিরুদ্ধে অভিযোগ যদি থাকে নজরদারি বাড়ানো হবে।’
এদিকে স্থানীয় এলাকার একাধিক বাসিন্দা অভিযোগ করেছেন, এই এলাকার বালির এই অবৈধ কারবারের পিছনে স্থানীয় শাসক দলের এক নেতার মদত রয়েছে। এমনকি পাল্লা ও চাঁচাই এলাকার বৈধ ও অবৈধ প্রায় সমস্ত বালির ঘাটের অংশীদারও রয়েছেন ওই নেতা। বেলুটের কাছে মূল সড়কের ধারেই রয়েছে বালির স্টক। যদিও স্থানীয় এলাকাবাসীদের একাংশ জানিয়েছেন, ওই নেতার এক্তিয়ার নদী ও নদী ঘাটের মধ্যেই নাকি সীমিত। ঘাট থেকে বালি নিয়ে রাস্তায় গাড়ি উঠলেই ‘সিস্টেম’ চলে যায় বিভিন্ন ডাম্পার কোম্পানির সঙ্গে প্রশাসনের অদৃশ্য সেটিং(!) তত্ত্বে। ফলে একাধিক জনবহুল গ্রাম পরিবেষ্টিত পাল্লা রোড এলাকার মূল রাস্তার নিরাপত্তা নিয়ে ঘোর আশঙ্কায় রয়েছেন স্থানীয় এলাকার বাসিন্দারা।
ডাম্পার কোম্পানির এক কর্তা কে (নাম জানা যায়নি) এইভাবে অতিরিক্ত বালি নিয়ে পরিবহনের বিষয়ে ফোন করে জানতে চাওয়া হলে অজ্ঞাত পরিচয় সেই ব্যক্তি এই বিষয়ে সাংবাদিকের সঙ্গে কথা বলতে চায়নি। ঘুরিয়ে ওই ব্যক্তি সাংবাদিকের পরিচয়পত্র হোয়াটস আপে পাঠাতে বলেন। বরং সেই ব্যক্তি সাংবাদিককেই প্রশ্ন করেন, বালি ওভারলোড করে গাড়ি যাচ্ছে সাংবাদিক কিভাবে সেটা জেনে গেল। পাল্টা সাংবাদিক ওই ব্যক্তিকে প্রশ্ন করেন, গাড়ির ডালার উচ্চতা ছাড়িয়ে যে উদ্বৃত্ত বালি সাদা চোখে দেখা যাচ্ছে সেটা কি অতিরিক্ত নয়? ওই ব্যক্তি এরপরই ক্ষিপ্ত হয়ে জানান, তিনি সাংবাদিকের পরিচয় যাচাই করে তবেই নাকি কথা বলেন। এরপর ফোন কেটে দেয়।
দলুইবাজার ২ গ্রাম পঞ্চায়েতের উপ প্রধান গৌতম রায় কে চাঁচাই পয়েন্ট ও পাল্লা এলাকার দামোদরের একাধিক বালি ঘাট থেকে প্রতিদিন যে শয়ে শয়ে অতিরিক্ত বালি বোঝাই ডাম্পার, ট্রাক্টর পাল্লা রোড ও চাঁচাই গ্রামের রাস্তা দিয়ে যাতায়াত করছে সে বিষয়ে পঞ্চায়েতের ভূমিকা কি জানতে চাওয়া হলে তিনি জানান, ‘এই বিষয়ে সংশ্লিষ্ট দপ্তর কে বহুবার জানানো হয়েছে। এক্ষেত্রে পঞ্চায়েতের কোনো ভূমিকাই নেই। পঞ্চায়েত সমিতি থেকে টোল আদায়ের ব্যবস্থা রয়েছে। এমনকি জেলাশাসকের নির্দেশ রয়েছে বালির গাড়ি যাতায়াতের জন্য রাস্তার যে ক্ষতি হবে তার মেরামতের খরচের ৪০শতাংশ টাকা বালি ঘাট মালিকদের দিতে হবে। কিন্তু বাস্তবে এইসব কিছুই হয়না। বালির গাড়ি থেকে জল রাস্তায় পরে রাস্তার ক্ষতি হচ্ছে। পুলিশ, এম ভি আই থেকে ভূমি রাজস্ব দপ্তরের আধিকারিকেরা প্রায়ই অভিযান চালায় এইসমস্ত অনিয়মের বিরুদ্ধে। জরিমানা থেকে অ্যারেস্ট সবই হয়। তবু আবার সব একইভাবে চলতে থাকে।’
পরবর্তী কিস্তি শীঘ্রই…