ফোকাস বেঙ্গল ডেস্ক,রায়না: টোটো তে করে রোগী নিয়ে বর্ধমান শহরে চিকিৎসা করতে আসার পথে তেলিপুকুর এলাকায় পঞ্চায়েতের টোটো আটকে চালক কে মারধর করার অভিযোগ উঠলো পুরসভার টোটো চালকদের বিরুদ্ধে। এই ঘটনার প্রতিবাদে রবিবার সকালে পাল্টা বর্ধমান পুর এলাকার টোটো কে রায়না বিধানসভার মাছখান্ডা, খালেরপুল এলাকায় আটকে দিলো পঞ্চায়েতের টোটো চালকরা। স্বাভাবিকভাবেই এই ঘটনায় এদিন সকালে উত্তেজনা ছড়ায় খালেরপুল এলাকায়। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে পঞ্চায়েতের টোটো চালকদের সঙ্গে কথা বলে সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দিলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়।
রায়নার মাছখান্ডার বাসিন্দা টোটো চালক শেখ আহমেদ আলী বলেন,’ রবিবার সকালে বর্ধমানে চিকিৎসার প্রয়োজনে ডাক্তার দেখাতে রোগী নিয়ে যাচ্ছিলাম। সদরঘাট ব্রিজ পেরিয়ে তেলিপুকুর এলাকায় পৌঁছনোর পর বর্ধমান পুরসভার কয়েকজন টোটো চালক আমার টোটো কে আটকে দেয়। আমি রোগীর প্রেসক্রিপশন দেখিয়ে ডাক্তার দেখাতে নিয়ে যাচ্ছি বলার পরেও তারা শোনেনা। উল্টে ওরা সবাই মিলে আমায় চড়, ঘুষি মেরে গাড়ি ঘুরিয়ে দেয়। আমি গতকালই শহরের পরিচিত কয়েকজনকে জিজ্ঞাসা করে তবেই এদিন টোটো নিয়ে শহরে যাচ্ছিলাম। আমায় ওরা বলেছিল, রোগী নিয়ে আসলে কেউ টোটো আটকাবে না। তারপরেও ওরা আমায় মারধর করলো। তাই আমরাও শহরের টোটো পঞ্চায়েতে ঢুকতে দেবো না বলেই ঠিক করেছি। এখন প্রশাসন কি করে সেটার জন্য আমরা অপেক্ষা করছি।’
মাছখান্ডার বাসিন্দা আরেক টোটো চালক শেখ আলম বলেন, ‘রায়না, খন্ডঘোষ এলাকার বহু মানুষকে প্রতিদিন খোসবাগান কিংবা বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসার প্রয়োজনে যাতায়াত করতে হয়। অনেককেই বাসের ভিড় এড়াতে পঞ্চায়েত এলাকার টোটো নিয়েই শহরে যেতে হয়। কিন্তু বর্ধমান দক্ষিণের বিধায়ক খোকন দাস ও বর্ধমান পুরসভা যে নিয়ম চালু করেছেন তাতে শহর লাগোয়া পঞ্চায়েতের টোটো শহরে ঢুকতে পারবে না। যদিও রোগী নিয়ে গেলে সেক্ষেত্রে ছাড় আছে বলেও জানানো হয়েছে। এরপরও শহরের কিছু টোটো চালক সেই নির্দেশ মানতে চাইছে না। মাত্র কয়েক কিলোমিটার রাস্তার জন্য অসুস্থ রোগী ও তাদের পরিজনদের মোটা টাকা খরচ করতে হচ্ছে এই টোটোর ঝামেলা এড়াতে। আর তাই আমরাও যারা পঞ্চায়েতে টোটো চালাই তারাও এবার বাধ্য হয়ে পুরসভার টোটো কে পঞ্চায়েতে ঢুকতে বাধা দিচ্ছি। আমরা চাই অবিলম্বে এই সমস্যার সুষ্ঠ মীমাংসা করুক প্রশাসন।’
এরই পাশাপাশি এদিন বর্ধমানের কাঞ্চননগরের বাসিন্দা জয়ন্তী বাগ টোটো নিয়ে রায়নার বাওড়ায় অসুস্থ বাবা কে নিয়ে আসতে এসেছিলেন। কিন্তু খালেরপুল এলাকায় তাদের টোটো আটকে দেওয়া হয়। জয়ন্তী দেবী বলেন,’ পুরসভার টোটো পঞ্চায়েতে কেন এসেছে, তার জন্য আমাদের টোটো আটকে দিয়েছে। প্রশাসন যদি এইসব ঝামেলা সামলাতে না পারে তাহলে আমাদের চারচাকা ভাড়া করার খরচ দিক। অসুস্থ বাবা বাসে করে আসতে পারবেন বলেই বর্ধমান থেকে টোটো রিসার্ভ করে যাচ্ছিলাম।’
পূর্ব বর্ধমান জেলা পুলিশের ডিএসপি ট্রাফিক ২ রাকেশ কুমার চৌধুরী বলেন, ‘ টোটো চালককে মারধরের বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখবো। তবে রোগী নিয়ে কোন টোটোর পঞ্চায়েত থেকে পুরসভা এলাকায় আসতে বাধা নেই। ইতিমধ্যেই জেলাশাসক, পুরসভা, পুলিশ, জন প্রতিনিধি যৌথভাবে পঞ্চায়েত ও পুর এলাকার টোটো চলাচলের বিষয়ে বেশ কিছু সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। আপাতত শহরের চার প্রান্তে চারটি পয়েন্ট ঠিক করা হয়েছে। পঞ্চায়েত এলাকার টোটো সেই পয়েন্টগুলো পর্যন্তই আসবে। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া পঞ্চায়েতের টোটো শহরে প্রবেশ করবে না। অন্যদিকে পুরসভার টোটো বিশেষ কারণ ছাড়া পঞ্চায়েত এলাকায় যেতে পারবে না। যদিও আমরা সংশ্লিষ্ট দপ্তর গুলোর সঙ্গে আবারও আলোচনা করবো।’