কুণাল চট্টোপাধ্যায়,জামালপুর: হুহু করে জলস্তর বাড়ছে দামোদরের। আর এরই মাঝে ভরা দামোদরের উপর দিয়ে রীতিমত জীবনের ঝুঁকি নিয়েই চলছে নৌকা পারাপার। সকাল ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত প্রায় ১০০বার দামোদরের এক পাড় থেকে আরেক পাড়ে যাত্রীরা কোনরকম সাবধানতা অবলম্বন না করেই যাতায়াত করছেন। মোটর সাইকেল, সাইকেল নিয়ে নৌকায় এপার ওপার হতে গিয়ে মাঝে মধ্যেই বিপত্তি ঘটছে। ফেরিঘাট কর্তৃপক্ষের কাছে লাইফ জ্যাকেট মজুদ থাকলেও যাত্রীরা সেই রক্ষাকবজ ব্যবহারের প্রয়োজন মনে করছেন না বলে অভিযোগ।
এদিকে যাত্রীদের কাছে সেতু বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর নৌকায় যাতায়াত কতটা নিরাপদ সে বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে অনেকেই রীতিমত আশঙ্কার কথা শুনিয়েছেন। কিন্তু লাইফ জ্যাকেট পড়ার ক্ষেত্রে এই যাত্রীদের মধ্যেই রয়েছে অনিহা। আর এই অবস্থায় যে কোনো সময় দুর্ঘটনার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে পূর্ব বর্ধমানের জামালপুরের অমরপুর ফেরি ঘাটে।
ফেরিঘাটের ম্যানেজার নিজামুদ্দিন মল্লিক জানিয়েছেন, ‘বর্ষার সময় প্রতিবছর কাঠের অস্থায়ী সেতুর পাটাতন খুলে ফেলার পর নৌকায় যাত্রী পরিবহন শুরু করা হয়। কয়েক হাজার মানুষ প্রতিদিন বিভিন্ন কাজে নদী পেরিয়ে জামালপুরে আসেন। এই এলাকায় এটাই মূল যোগাযোগ ব্যবস্থা। বিগত পাঁচ বছর ধরে আমরা লাইফ জ্যাকেট কিনে রেখেছি যাত্রীদের সুরক্ষার কথা ভেবে। কিন্তু নৌকায় ওঠার আগে সেই জ্যাকেট যাত্রীদের পড়তে বললে তাঁরা এড়িয়ে যাচ্ছেন। তবে নদীর জল বাড়লে নৌকায় যাত্রী তোলার ক্ষেত্রে আমরা সতর্ক থাকি। ৬থেকে ৭টির বেশি মোটর সাইকেল নৌকায় তোলা হয় না। যাত্রী সংখ্যাও দশ জনের মধ্যে রাখা হয়। তবে প্রশাসন যাত্রীদের উদ্দেশ্যে কিছু নির্দেশিকা জারি করলে যাত্রীরা আরো সচেতন হবেন বলে মনে করি।’
এদিকে যাত্রীদের অনেকেই জানিয়েছেন, নদীর এপার ওপার জলপথে মাত্র প্রায় এক কিলোমিটার। অনেককেই দিনে দু তিনবার আসা যাওয়া করতে হয়। এই সামান্য জলপথে যাওয়ার জন্য বারবার জ্যাকেট পড়ার ক্ষেত্রে সমস্যা হয়। যদিও এরই মধ্যে অনেক যাত্রী আবার জানিয়েছেন, ফেরিঘাটের নজরদারি তে স্থানীয় প্রশাসনের কোনো ভূমিকা নেই। কোন দুর্ঘটনা ঘটলে আপৎকালীন কোন ব্যবস্থা নেওয়ার মতো পরিকাঠামো নেই ফেরিঘাট কর্তৃপক্ষের। ফলে ঘোর বর্ষায় ভরা দামোদরের উপর দিয়ে নৌকায় যাতায়াত কার্যত বেশ ঝুঁকিপূর্ণ। কিন্তু উপায় নেই, স্কুল, কলেজ থেকে বাজার হাট, চিকিৎসা ও প্রশাসনিক নানান কাজে বাধ্য হয়েই অমরপুর, শিয়ালি, মাঠ শিয়ালি কোড়া সহ প্রায় ২৫টি গ্রামের মানুষকে এইসময় নৌকা করে নদী পেরিয়েই জামালপুর আসতে হয়।
যাত্রীদের অনেকে জানিয়েছেন, আগামী কয়েকমাস ফেরিঘাট চালু থাকার সময় বিপর্যয় মোকাবিলা দপ্তরের একটা টিম কে সর্বক্ষণ নজরদারির জন্য এখানে রাখা উচিত প্রশাসনের। পাশাপশি প্রত্যেক যাত্রীকে নদী পারাপারের আগে লাইফ জ্যাকেট পড়ে নৌকায় ওঠা বাধ্যতামূলক করা উচিত। বৃষ্টির সময় ফেরিঘাট বন্ধ রাখার বিষয়েও প্রশাসনের নির্দেশ জারি করা উচিত। নৌকায় নির্দিষ্ট সংখ্যক যাত্রী ও যান এর বেশি তোলার ক্ষেত্রেও নির্দেশ দেওয়া উচিত বলে জানিয়েছেন যাত্রীদের একাংশ। এদিকে রবিবার দুপুরে বৃষ্টি মাথায় করেই জামালপুরের বিধায়ক অলোক মাঝি সশরীরে পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে অমরপুর ফেরিঘাটে হাজির হয়। বিধায়ক জানিয়েছেন, ‘প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট আধিকারিক দের এই ফেরি পারাপারের বিষয়ে বেশ কিছু পদক্ষেপ নেওয়া কথা জানানো হয়েছে। সবটাই যাত্রী সুরক্ষার বিষয়ে। আমরা সর্বক্ষণ নজর রেখেছি যাতে কোনো প্রকার অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে সেইদিকে। ইতিমধ্যেই ফেরিঘাট বন্ধ রাখা হয়েছে।’