ফোকাস বেঙ্গল ডেস্ক,বর্ধমান: বর্ধমান শহরের একাধিক নার্সিংহোমের বেহাল পরিকাঠামো নিয়ে কিছুদিন আগেই সোচ্চার হয়েছিলেন খোদ বর্ধমান দক্ষিণের বিধায়ক খোকন দাস সহ বর্ধমান পুরসভার চেয়ারম্যান পরেশ সরকার। এমনকি জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য অধিকারিককেও শহরের নার্সিংহোম গুলোর স্বাস্থ্য পর্যালোচনা করে দেখার আবেদন জানিয়েছিলেন তাঁরা। কিন্তু তারপরেও কি আদৌ নার্সিংহোম গুলোর কর্তৃপক্ষ সজাগ হয়েছে! সোমবার সকালে বর্ধমানের ডাক্তারপাড়া বলে খ্যাত খোসবাগানের একটি নার্সিংহোমের ঘটনা কার্যত ফের নার্সিংহোমের বেহাল পরিস্থিতির কথাই চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিলো শহরবাসীকে।

নার্সিংহোমের দোতলায় আইসিইউ (intensive care uint) তে ভর্তি রোগী হাতে লাগানো সমস্ত চ্যানেল সহ অনায়াসে বিনা বাধায় নার্সিংহোম থেকে পালিয়ে গেলেন। এমনকি বাড়ির লোকেও টের পেলেন না। আরো অবাক হওয়ার মতো বিষয়, আইসিইউতে যে রোগী রবিবার রাতে ভর্তি হয়েছেন, তিনি সাত সকালে সকলের নজর এড়িয়ে নার্সিংহোম থেকে পালিয়ে হেঁটে সোজা চলে গেলেন প্রায় তিন কিলোমিটার দূরে তেলিপুকুর এলাকায়। সেখানে স্থানীয় কিছু ব্যবসাদার সেই ব্যক্তিকে দেখে সন্দেহ হওয়ায় দাঁড় করিয়ে জানতে চাইতেই সমস্ত বিষয়টি সামনে আসে। এরপরই রোগীর বাড়ির লোককে খবর দেওয়া হলে তারা ঘটনাস্থলে পৌঁছায়।
রবিবার রাত সাড়ে ১১টা নাগাদ বাঁকুড়া জেলার কোতোলপুর এলাকার বাসিন্দা মৃণালকান্তি বাগদি, বয়স ৫৬ বছর, তাকে বর্ধমানের খোসবাগান এলাকায় এক নম্বর পাকমারা গলির একটি নার্সিংহোমে ভর্তি করেন পরিবারের লোকজন। সাইকেল থেকে পড়ে গিয়ে মাথায় আঘাত লাগার কারণে প্রথমে স্থানীয় একটি নার্সিংহোমে দেখানোর পর মৃণাল বাবু কে বর্ধমান মেডিকেলে নিয়ে আসা হয়। কিন্তু মৃণাল বাবুর পরিবারের লোকেদের অভিযোগ, বর্ধমান মেডিকেলে নিউরো সার্জেন চিকিৎসক সেদিন না থাকায় কলকাতার এসএসকেএম হাসপাতালে রেফার করে দেওয়া হয়।
বাড়ির লোক মৃণাল বাবুকে নিয়ে কলকাতায় চিকিৎসার জন্য নিয়ে যান। কিন্তু বাড়ি থেকে অনেক দূরে চিকিৎসা করানোর ঝামেলা থাকায় সেখান থেকে ফের বর্ধমানে রোগী কে নিয়ে এসে খোসবাগানের এক নম্বর পাকমারা গলিতে একটি নার্সিংহোমে রবিবার রাতে ভর্তি করে দেন। রাতে নার্সিংহোমে কোনো বাড়ির লোক থাকতে পারবেন না বলে জানিয়ে দেয় কর্তৃপক্ষ। অন্যদিকে রোগীকে ভর্তি করে আইসিসিইউতে রেখে দেওয়া হয়। চিকিৎসক রোগীকে দেখে প্রেসক্রিপশনও লিখে দেন। সেইমত চিকিৎসাও চালু করে নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষ।
আর এরপরই সোমবার সকাল হতে না হতেই রোগীর পরিবারের সদস্যদের চোখ কপালে ওঠার জোগাড়! শহরের তেলিপুকুর এলাকা থেকে পরিবারের এক সদস্য কে কোনো একজন ফোন করে জানান যে মৃণালকান্তি বাগদি নামে এক অসুস্থ ব্যক্তি নার্সিংহোম থেকে পালিয়ে চলে এসেছেন। তারা ওই ব্যক্তিকে বসিয়ে রেখেছেন সেখানে। এরপর তড়িঘড়ি পরিবারের লোক তেলিপুকুর পৌঁছায় এবং সেখানে মৃণাল বাবুকে দেখতে পায়। খবর দেওয়া হয় বর্ধমান থানার পুলিশ কে। পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে মৃণালকান্তি বাগদি কে তার পরিবারের লোকজন সহ থানায় নিয়ে আসে। এরপর নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষ কে খবর দেওয়া হলে সেখান থেকে দুজন কর্মী থানায় পৌঁছে মৃণাল বাবু কে নিজেদের দায়িত্বে নার্সিংহোমে নিয়ে গিয়ে নিয়ম মেনে ডিসচার্জ করে।
যদিও বাঁকুড়া থেকে বর্ধমানে এসে কোর্ট এবং পুলিশ এর হয়রানি এড়াতে রোগীর বাড়ির লোকজন অভিযুক্ত নার্সিংহোমের বিরুদ্ধে চূড়ান্ত গাফিলতির বিষয়ে থানায় বা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকের দপ্তরে কোনো লিখিত অভিযোগ দায়ের করেনি। তবে তাদের অভিযোগ, নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষ নিজেদের দোষ ঢাকতে রীতিমত প্রেসক্রিপশন থেকে ডাক্তারের নাম সাদা কালী দিয়ে মুছে সেই জায়গায় আরএমও লিখে দিয়েছে। এছাড়াও আজ যদি রাস্তায় কোনো দুর্ঘটনা ঘটে যেতো তার দায়ভার কে নিতো সেই প্রশ্নও তুলেছেন মৃণাল বাবুর আত্মীয়রা। অন্যদিকে জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক জয়রাম হেমব্রম কে নার্সিংহোম থেকে রোগী পালানোর বিষয়ে এবং কেন রোগীর বাড়ির লোকজন কোন অভিযোগ করেননি সে বিষয়ে জানানোর পর তিনি জানিয়েছেন, ” বিশেষ প্রয়োজনে বর্ধমানের বাইরে আছি, ফিরে ঘটনার খোঁজ নেবো।”