বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের আউটডোরের অব্যবস্থায় ক্ষুদ্ধ রোগী ও পরিজনেরা

Souris  Dey

Souris Dey

ফোকাস বেঙ্গল ডেস্ক,পূর্ব বর্ধমান: বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের  আউটডোরের টিকিট কাউন্টার খুলছে ন’টায়।  চিকিৎসা নিতে আসা মানুষজন টিকিট কেটে যখন নির্দিষ্ট বিভাগে এন্ট্রি করাতে যাচ্ছেন, তখন দেখা যাচ্ছে সেখানে লোক নেই। এন্ট্রি করার দায়িত্বে থাকা লোক আসছেন বেলা দশটা নাগাদ। ফলে দূরদূরান্ত থেকে আসা রোগী এবং রোগীর পরিজনরা সমস্যায় পড়ছেন। অনেক সময় চিকিৎসকরা সঠিক সময়ে এসেও, টিকিট এন্ট্রি না হওয়ায় তারা চিকিৎসা শুরু করতে পারছেন না বলে অভিযোগ রোগীর পরিজনদের একাংশের। দীর্ঘদিন এই সমস্যা চলছে বলে রোগীদের অভিযোগ।

বিজ্ঞাপন

বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজে প্রতিদিন প্রচুর রোগী আসেন আউটডোরে দেখাতে। শুধু দুই বর্ধমান নয়, আশেপাশের বেশকয়েকটি জেলা থেকেই রোগীরা হাসপাতালে আসেন চিকিৎসা করাতে। জেলা লাগোয়া ভিনরাজ্য, যেমন বিহার, ঝাড়খন্ড থেকে অনেক জটিল রোগ নিয়ে বর্ধমান মেডিক্যালে আসে রোগীরা। নিয়ম অনুযায়ী সকাল ৯টা থেকে আউটডোর বিভাগের দোতলার কাউন্টার থেকে রোগীদের টিকিট দেওয়া হয়। ২ টাকার বিনিময়ে এই টিকিট করাতে হয় রোগীদের। কার্যত সকাল থেকেই এই টিকিটের জন্য লম্বা লাইন পড়ে যায়। তারপর সেই টিকিট হাতে পেলে রোগীরা যে বিভাগের চিকিৎসক দেখাবেন সেখানে যেতে হয়। সেখানে গিয়ে ওই বিভাগের খাতায় টিকিটটি এন্ট্রি করাতে হয়। টিকিটের উপর ওই বিভাগের স্ট্যাম্প মেরে নির্দিষ্ট নাম্বার দিলে তবেই ওই টিকিটে ডাক্তারবাবু রোগী জন্য প্রয়োজনীয় উপদেশ এবং ওষুধ লিখে দেবেন।

গোল বাঁধছে এখানেই। টিকিট কাউন্টার মোটামুটি সময়ে খুলে গেলেও, মেডিসিন সার্জারি, প্রসূতি বিভাগে এন্ট্রি করার কর্মীরা আসছেন দেরিতে। ফলে ঘণ্টার পর ঘন্টা রোগীকে অপেক্ষা করতে হচ্ছে। লাইন দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হচ্ছে। চাপ বাড়ছে চিকিৎসকদের উপরেও। কারণ, তাঁদেরও দেরিতে চিকিৎসা শুরু করতে হচ্ছে।রোগীদের অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরেই হাসপাতালে এই অব্যবস্থা চলছে। যা নিয়ে রীতিমত অশান্তি হচ্ছে আউটডোরে। হাসপাতালে থাকা পুলিশ কর্মীদের মাঝেমধ্যেই ছুটে গিয়ে রোগীর পরিজনদের ক্ষোভ সামাল দিতে হচ্ছে।

আমিনা বিবি, রফিকুল জামাদার, সুজয় মালিকদের মত রোগীরা বলেন, ‘টিকিট কাউন্টারে অনেকক্ষণ লাইন দিয়ে টিকিট পেয়ে, এন্ট্রি করানোর জন্য আবার লাইন। সেখানে আবার লোক সময়ে আসেন না, তারপর ডাক্তার দেখানোর লাইন। ডাক্তার দেখানো হলে আবার ওষুধ নেওয়ার লাইন। একদিন হাসপাতাল এলে সারাদিন কেটে যায়। কর্মীরা যদি সময়ে না আসেন, তাহলে আমাদের খুব সমস্যার মধ্যে পড়তে হয়।’ তাদের আরও অভিযোগ, এন্ট্রি করানোর কর্মীরা নির্ধারিত সময়ের আগেই প্রায়ই কাউন্টার বন্ধ করে চলে যান। ফলে দেরিতে আসা রোগীরা টিকিট করিয়েও, এন্ট্রি না হওয়ায় চিকিৎসা করাতে পারেননা। এই সমস্যা মেটানোর দাবি জানিয়েছেন তারা।

বর্ধমান মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের সুপার ডা: তাপস ঘোষ এই প্রসঙ্গে জানিয়েছেন, ‘ডাক্তার দেখানোর জন্য আউটডোরে রোগী বা রোগীর আত্মীয়দের দীর্ঘক্ষণ লাইন দিয়ে টিকিট করানোর জন্য অপেক্ষা করতে হচ্ছে বলে আমার কাছে কয়েকটি অভিযোগ এসেছিল। সেই অনুযায়ী আমরা ব্যবস্থা নিয়েছি। দুজন কর্মীকে অন্যত্র সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। আউটডোরের পরিষেবার বিষয়টি প্রতিদিন নজরে রাখা হচ্ছে। তবে আগের তুলনায় এখন বর্ধমান মেডিক্যালে রোগীর চাপ অনেক বেড়েছে। বিশেষ করে কোভিড পরবর্তী সময়ে আমরা যেভাবে উন্নতমানের চিকিৎসা পরিষেবা দিয়ে আসছি এতে রাজ্য তথা ভিন রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকেও মানুষ চিকিৎসার জন্য এখানে আসছেন। এতো বড় হাসপাতালে কখনো সখনো একটু সমস্যা তৈরি হয়, আমাদের নজরে এলেই পদক্ষেপ করা হয়।’

আরো পড়ুন