ফোকাস বেঙ্গল ডেস্ক, গলসি: বেআইনিভাবে বালি মজুদের অভিযোগে শনিবার সরজমিনে অভিযান চালাল গলসি ২ ব্লকের ভূমি ও রাজস্ব দফতর এবং পুলিশ প্রশাসন। সূত্রের খবর, বাঁকুড়া জেলার পাত্রসায়ার থানার শালখারা মৌজার দামোদর নদ থেকে বালি তুলে গলসির গোহগ্রাম পঞ্চায়েতের বাঁশতলা এলাকায় বেআইনি ভাবে মজুদ করেছিল এক ইজারাদার। কয়েক মাস আগেই প্রশাসন এই মজুদ বালিকে অবৈধ ঘোষণা করে। এদিনের অভিযানে প্রশাসনের মূল লক্ষ্য ছিল, অবৈধ মজুদের পাশাপাশি নতুন করে কোনো বেআইনি বালির স্টক আছে কি না, তা খতিয়ে দেখা। প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, সমস্ত তথ্য যাচাই করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

অন্যদিকে, শনিবার সকালে দামোদর নদের শিকারপুর ঘাট থেকে ট্রাক্টারে করে বালি নিয়ে যাওয়ার সময় পুলিশ চারটি বেআইনি বালি বোঝাই ট্রাক্টর আটক করে। পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ট্রাক্টরগুলোর বিরুদ্ধে নির্দিষ্ট ধারায় মামলা রুজু করা হয়েছে। সম্প্রতি শিল্লা পারাজ রোডের তিনটি বেআইনি ওয়েব্রিজ বন্ধ করে দেওয়ার পর, প্রশাসনের এই ধারাবাহিক পদক্ষেপে গলসি জুড়ে বেআইনি বালি কারবারিদের মধ্যে চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, এই ধরনের অভিযান আগামীতেও চলবে।
প্রসঙ্গত, গলসি থানা এলাকায় দামোদর নদ থেকে বেআইনি বালি পাচার এবং অবৈধ ওয়েব্রিজ পরিচালনার অভিযোগ দীর্ঘদিনের। এলাকায় একশ্রেণীর বালি মাফিয়াদের দৌরাত্ম্যের অভিযোগ উঠছিল। তারা শুধু অবৈধভাবে বালি পাচার করছিল না, পাশাপাশি নদীর স্বাভাবিক গতিপথ এবং ভৌগোলিক পরিবর্তন ঘটিয়ে পরিবেশের উপরও বিরূপ প্রভাব ফেলছিল। এই পরিস্থিতিতে গলসি থানার ওসি উত্তল সামন্তের নেতৃত্বে একটি বিশেষ টিম গঠন করা হয়। এই টিম বেআইনি বালি কারবারিদের বিরুদ্ধে জোরদার অভিযান শুরু করেছে। পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, সাম্প্রতিক বেশ কয়েকটি অভিযানে একাধিক মামলা রুজু করা হয়েছে। এই মামলাগুলিতে প্রায় ৩০ এর অধীক গাড়ি এবং ১০ -১৫ টি অবৈধ ট্রাক্টর বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। এছাড়াও প্রায় ২০টির ওপর অতিরিক্ত বালি বোঝাই গাড়ি চিহ্নিত করে মোটর ভেহিকেলস ইন্সপেক্টরের (MVI) কাছে পাঠানো হয়েছে।
শুধু তাই নয়, গলসি ১ ব্লকের তিনটি অবৈধ ওয়েব্রিজের বিরুদ্ধেও কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে পুলিশ। বেআইনিভাবে ওয়ে থব্রিজ পরিচালনা এবং বালি মজুত করার অভিযোগে ভূমি ও ভূমি সংস্কার আধিকারিক (BL & LRO)-এর সাথে যৌথ অভিযান চালিয়ে ওয়েব্রিজগুলি সিল করে দেওয়া হয়েছে এবং বিপুল পরিমাণ বালি বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। একইসাথে, ওয়েব্রিজ মালিকদের বিরুদ্ধেও আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। যদিও এখনো চোরাগোপ্তা বালি চুরি সম্পূর্ন ভাবে বন্ধ করা যায়নি।
গলসি থানার পুলিশের এই সক্রিয় পদক্ষেপের ফলে এলাকায় বেআইনি বালি কারবারিদের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দারা পুলিশের এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন এবং আশা প্রকাশ করেছেন যে ভবিষ্যতে এই ধরনের কার্যকলাপ সম্পূর্ণরূপে বন্ধ করা সম্ভব হবে। পুলিশ জানিয়েছে, বেআইনি বালি কারবারের বিরুদ্ধে তাদের অভিযান অব্যাহত থাকবে এবং কোনো রকম অবৈধ কার্যকলাপ বরদাস্ত করা হবে না।