latest

বর্ধমানে আইন অমান্য কর্মসূচি কে সামনে রেখে তাণ্ডব চালালো বামেরা, পুলিশ কে আক্রমণ, গ্রেপ্তার বহু

ফোকাস বেঙ্গল ডেস্ক,বর্ধমান: বামেদের আইন অমান্য কর্মসূচি ঘিরে বুধবার বর্ধমানের কার্জন গেট চত্বর সংলগ্ন এলাকা কার্যত রণক্ষেত্রের চেহারা নিল। বড়নীলপুর মোড় এবং স্টেশনের দিক থেকে দুটি বামেদের মিছিল কার্জন গেট হয়ে এগিয়ে আসে জেলাশাসকের অফিসের দিকে। উত্তেজিত বাম নেতা,কর্মী,সমর্থকরা পুলিশের ত্রিস্তরিও ব্যারিকেড ভেঙে এগোনোর চেষ্টা করে। এই সময় পুলিশ এগোতে বাধা দেয় মিছিলকে। মিছিল থেকে এই সময় পুলিশকে আক্রমণ করে বাম সমর্থকরা। পুলিশ কে লক্ষ্য করে কার্জন গেটের দিক থেকে মুহুর্মুহু ইট বৃষ্টি শুরু হয়। ইটের আঘাতে রক্তাক্ত, গুরুতর জখম হয় একাধিক পুলিশ আধিকারিক থেকে সিভিক ভলেন্টিয়ার। এই সময় পাল্টা পুলিশও বিক্ষুব্ধ আন্দোলনকারীদের হটাতে লাঠি চার্জ শুরু করে।

তাতেও ইট বৃষ্টি বন্ধ না হওয়ায় পুলিশের তরফ থেকে জমায়েত কে ছত্রভঙ্গ করতে প্রথমে জল কামান ব্যবহার করা হয়। তাতে উত্তেজনা আরো বাড়ে। বামেরা কার্জন গেটের সামনে বর্ধমান দক্ষিণের বিধায়ক খোকন দাসের বিধায়ক সহায়তা কেন্দ্রে ব্যাপক ভাঙচুর চালায়। এমনকি অফিসের ভিতরে ঢুকে চেয়ার টেবিল থেকে মনীষীদের ছবি ভেঙে দেয় বাম কর্মীরা। অফিসের ভিতরে থাকা তৃণমূলের কর্মীদের কেও মারধর করা হয় বলে অভিযোগ। কার্জন গেটের সামনে ফুটপাথ বরাবর মুখ্যমন্ত্রীর বিভিন্ন প্রকল্পের প্রচারের জন্য সদ্য লাগানো গ্লোসাইন সমস্ত বোর্ড ভাঙচুর করে দেয় আন্দোলনরত বাম সমর্থকরা। রাস্তার সৌন্দর্যায়নে থাকা টব ছুঁড়ে ফেলে দেওয়া হয়। জিটি রোডের উপর সদ্য লাগানো ঘুর্নিয়মান বিশ্ববাংলা লোগো কে উপরে তুলে ফেলে বাম কর্মীরা। বিশ্ব বাংলা লোগোর উপর লাগিয়ে দেওয়া হয় সিপিআইএম এর পতাকা।

এই সময় বেশ কয়েকটি পুলিশের গাড়িতে ভাঙচুরও করা হয়। পরিস্থিতি সামাল দিতে একের পর এক কাঁদানে গ্যাসের শেল ফাটিয়ে জমায়েত কে ছত্রভঙ্গ করার চেষ্টা চালায় পুলিশ। পরিস্থিতি কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আসতেই বিশাল পুলিশ ও রাফ বাহিনী ব্যাপক ধরপাকড় শুরু করে। পুলিশ কে মারধর, সরকারি সম্পত্তি ভাঙচুর সহ আইন নিজেদের হাতে তুলে নেওয়ার ঘটনায় এদিন পুলিশ শতাধিক বাম নেতা, কর্মী, সমর্থক কে আটক করে। এদের মধ্যে সিপিআইএম এর কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য আভাস রায় চৌধুরীও রয়েছে।

প্রসঙ্গত বুধবার গোটা রাজ্যের পাশাপাশি বর্ধমানের বড়নীলপুর মোড়ে আইন অমান্য কর্মসূচির সভা ছিল সিপিএমের। এরপর কার্জন গেট পর্যন্ত মিছিল করার পরিকল্পনা ছিল তাদের। কর্মসূচির নেতৃত্বে ছিলেন সিপিএম রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম। এছাড়া ছিলেন সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য আভাস রায়চৌধুরী, পূর্ব বর্ধমান জেলা সম্পাদক সৈয়দ হোসেন, কৃষক সভার রাজ্য নেতা অমল হালদার-সহ অনেকেই।

সিপিএমের রাজ্য কমিটির সদস্য মহম্মদ সেলিম বলেন, সারা রাজ্য জুড়ে সিপিএমের ডাকে আইন অমান্য কর্মসূচি নেওয়া হয়েছিল। বর্ধমানে এই কর্মসূচিতে দুটি মিছিল করা হয়েছিল। একটি বর্ধমান স্টেশন থেকে শান্তিপূর্ণ মিছিল করে কার্জন গেটে পৌঁছায়। অন্যটি, বর্ধমানের নীলপুর এলাকা থেকে কার্জন গেট পৌঁছায়। কার্জন গেট এলাকায় মিছিল পৌঁছনো মাত্র পুলিশ সিপিএম কর্মীদের উপর কাঁদানে গ্যাস ছোড়ে। তারপরেই বিনা কারণে লাঠিচার্জ শুরু করে। শেষে জল কামান দিয়ে বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করার চেষ্টা করে। পুলিশের তরফে ক্রমাগত প্ররোচনার কারণেই বিক্ষোভকারীরা উত্তেজিত হয়ে পড়ে। আমাদের কর্মীরা শান্তিপূর্ভাবেই মিছিল করছিল। আইন অমান্য কর্মসূচিতে আইন অমান্যের আগেই পুলিশ কর্মীদের উপর আক্রমন করেছে।”

পুলিশের ভূমিকার সমালোচনা করে সিপিএম রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম বলেন, “গরু চোরদের ধরতে পারে না পুলিশ। মিছিলকারীদের লাঠিপেটা করে। পুলিশ শাসক দলের নেতাদের দুর্নীতি ঢাকতে তাদের পাহাড়া দিতে গিয়ে বিক্ষোভ বা আন্দোলন সামাল দিতে ভুলে গিয়েছে। পুলিশ আদালতের নির্দিষ্ট  নিয়ম মেনে এদিন বিক্ষোভকারীদের সামলাতে পারেনি। আমরা দলের পক্ষ থেকে কর্মীদের ফিরে আসার নির্দেশ দিয়েছিলেন। কর্মীরা যখন ফিরে আসছিলেন সেই সময় পুলিশ তাদের উপর ফের কাঁদানে গ্যাস ছোড়ে। পুলিশের অব্যবস্থার কারণেই এই বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।”

জেলা তৃণমূল সভাপতি রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ” তৃণমূল প্রতিরোধ‌ করলে ওরা‌ সামলাতে পারবে তো। সিপিএম ৩৪ বছর গুন্ডামি করেছে। সেই সংস্কৃতি ফিরিয়ে আনতে চাইছে। মহম্মদ সেলিমের নেতৃত্বে আইন অমান্য আন্দোলন গণতান্ত্রিকভাবে হওয়া উচিত ছিল।” সিপিএমের পূর্ব বর্ধমান জেলা কমিটির সম্পাদক সৈয়দ হোসেইন জানান, “এদিন আমাদের শান্তিপূর্ণ আইন অমান্য কর্মসূচিতে কার্জন গেট চত্বরে আমাদের ১২৫ জনের বেশি কর্মী-সমর্থক আহত হয়েছেন। এছাড়া অন্যান্য জায়গা থেকেও আহত হওয়ার খবর মিলছে। সব মিলিয়ে ৫০০ জনের বেশি কর্মী আহত হয়েছেন।” অন্যদিকে পুলিশ সূত্রে খবর, পুলিশের ৫টি গাড়ি ভাঙচুর করা হয়। বেশ কয়েকজন পুলিশ আধিকারিক, অফিসার সহ সিভিক বাম বিক্ষোভকারীদের দ্বারা আক্রান্ত হয়েছেন। তাঁদের অনেককেই বর্ধমান মেডিকেল চিকিৎসা করানো হয়েছে। আন্দোলনকারীরা ১টি জলকামান ভাঙচুর করেছে। কার্জন গেট চত্বরে সরকারি বহু সম্পত্তি ভেঙে নষ্ট করেছে। আটক ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে নির্দিষ্ট ধারায় মামলা করা হবে। পুলিশ কে মারধরের ঘটনায় যুক্ত আরো কিছু ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হবে। সিসি ক্যামেরার ফুটেজ খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

Recent Posts