ফোকাস বেঙ্গল ডেস্ক, খন্ডঘোষ: মাছ চাষের মাধ্যমে এবার নারীদের স্বাবলম্বী করে তুলতে অভিনব উদ্যোগ গ্রহণ করলেন বিশ্বজুড়ে মৎস্য গবেষণায় সাড়া ফেলে দেওয়া রাষ্ট্রপতি পুরস্কার প্রাপ্ত ডঃ রিনা চক্রবর্তী। পূর্ব বর্ধমান জেলার খণ্ডঘোষ ব্লকের শাঁকারী গ্রামের ভূমিকন্যা ডঃ রিনা চক্রবর্তী। গত ৩ মার্চ নয়া দিল্লিতে এক বিশেষ অনুষ্ঠানে প্রাণিবিদ্যা শাখার মৎস্য বিজ্ঞান এর ওপর সার্বিক গবেষণার জন্য রাষ্ট্রপতি দৌপ্রদী মুর্মূ এই বিশেষ সম্মান প্রদান করেন রিনা চক্রবর্তী কে। পুরস্কার বিতরণ মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর হাত থেকে কৃষি বিজ্ঞানী হিসেবে সম্মানিত হওয়া রিনা চক্রবর্তীর দাদা ডঃ দিলীপ চক্রবর্তী, কেন্দ্রীয় শিক্ষামন্ত্রী ধর্মেন্দ্র প্রধান, আর এক কেন্দ্রীয় শিক্ষা মন্ত্রী সুকান্ত মজুমদার, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০০ জন ভাইস চ্যান্সেলর সহ বিশিষ্টজনেরা।

রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদীর মুর্মুর হাত থেকে সম্মানিত হওয়ার পর ডঃ রিনা চক্রবর্তী জানান, ’ভগবান এবং আমার বাবা-মায়ের আশীর্বাদ ছিল বলেই আজ এই জায়গায় আসতে পেরেছি। কাজ শুধুমাত্র আমি একা করি না, সবাই করেন। বাবা-মা প্রায় বলতেন তুই নিজের পায়ে দাঁড়া। আমি যখন পড়াশোনা করেছি তখন পশ্চিমবাংলা এত আপডেট ছিল না। রীতিমত লড়াই করেই আজকের এই বিশেষ পাওনা। তাই আমি প্রত্যেক মহিলাদের বলব, আপনারাও স্ট্রাগেল করুন। নিজেদের পায়ে দাঁড়ান। সামনেই জাতীয় নারী দিবস, তাই ভারতবর্ষ সহ বিশ্বের প্রতিটি নারীকে বলবো শপথ নিন, যে আমরা নিজের পায়ে দাঁড়াবোই। আগামী শুক্রবার অর্থাৎ ৭ মার্চ দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্তর্জাতিক নারী দিবসে আমাকে সম্মানিত করবে বিভিন্ন শিক্ষা সংস্থা।’
রিনা দেবী বলেন, ’১৪ বিঘা জমি কিনেছি নিজের টাকায়। নারীরা মাছ চাষ করে কিভাবে নিজের পায়ে দাঁড়াবে তার জন্যই রিসার্চ সেন্টার তৈরি করব ওই জমির ওপর। কয়েক মাসের মধ্যেই শুরু হয়ে যাবে রিসার্চ সেন্টারের কাজ।’ প্রফেসর রিনা চক্রবর্তীর দাদা ডঃ দিলীপ চক্রবর্তী বলেন, ’মাধ্যমিক পর্যন্ত গ্রামের স্কুলেই অর্থাৎ শাঁকারি অবৈতনিক প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং শাঁকারি উচ্চ বিদ্যালয় পড়াশোনা করেছে রিনা। সেই সময় মেয়েরা স্কুলমুখী হতো কম। মাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়েছে ১৯৬৭ সালে। তারপর বর্ধমানের রাজ কলেজ, বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়, পরে কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রাণিবিদ্যা শাখার মৎস্য বিজ্ঞান নিয়ে পড়াশোনা। তারপরই দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ে মৎস্য বিজ্ঞান শাখার বিভাগীয় প্রধান। আমি এবং আমার বোন দুজনেই চাষী পরিবারের ছেলে মেয়ে। আমার বাবা প্রশান্ত চক্রবর্তী একজন চাষী পরিবারেরই ছেলে ছিলেন। বোন এখনো অবিবাহিত। আচার্য প্রফুল্ল চন্দ্রের ভাবাদেশেই এখনো পথ চলে।’ দিলীপ চক্রবর্তী আরো বলেন, ’নারী শিক্ষার অগ্রদূত হয়েই রিনা পথ চলুক। আর ওর দেখানো পথে শিক্ষিত ও স্বাবলম্বী হোক দেশ বিদেশের নারীরা।’