---Advertisement---

বিধায়ক ও চেয়ারম্যানের ক্ষোভের মুখে বর্ধমান শহরের বেসরকারি স্বাস্থ্য পরিষেবা, মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকের দপ্তর ঘেরাওয়ের হুঁশিয়ারি বিধায়কের

Souris Dey

Published

ফোকাস বেঙ্গল ডেস্ক,বর্ধমান: বর্ধমান শহরে বেসরকারি স্বাস্থ্য পরিষেবার হাল নিয়ে একরাশ ক্ষোভ আর অভিযোগ উঠে এলো খোদ বর্ধমান দক্ষিণ বিধানসভার বিধায়ক খোকন দাস ও বর্ধমান পৌরসভার পৌরপতি পরেশ চন্দ্র সরকারের বক্তব্যে। বুধবার শহরের গোদা এলাকায় একটি অনুষ্ঠান বাড়িতে প্রোগ্রেসিভ নার্সিংহোম ও হাসপাতাল এসোসিয়েশনের ৮ম বার্ষিক সম্মেলনে বক্তব্য রাখতে গিয়ে পরেশ চন্দ্র সরকার বর্ধমান শহরের একাধিক নার্সিংহোমের বেআব্রু চেহারা নিয়ে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেন।

বিজ্ঞাপন

এমনকি মঞ্চে উপবিষ্ট জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকের সামনেই তিনি প্রশ্ন তোলেন, ’কিভাবে এইসব নার্সিংহোম গুলো লাইসেন্স পেয়ে যাচ্ছে? নিচে গাড়ি সরানোর গ্যারেজ কিংবা খাবারের দোকান আর তার ওপরে নার্সিংহোম চলছে! নার্সিংহোম চালানোর জন্য যেসমস্ত নিয়ম কানুন মেনে চলতে হয় তার বেশিরভাগই অনেক নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষ মানছে না। যেখানে সেখানে, যেকোনো বিল্ডিংয়ে চালু হয়ে যাচ্ছে নার্সিংহোম। কিভাবে এরা লাইসেন্স পেয়ে যাচ্ছে? পুরসভা কে সারাবছর নার্সিংহোমের আবর্জনা পরিষ্কার করতে হয়। এবার নার্সিংহোম গুলো থেকে পুরসভা ট্যাক্স আদায় করবে।

স্বাস্থ্য পরিষেবা দেওয়ার জায়গায় গরীব মানুষদের থেকেও অনেকে হাজার হাজার টাকা মুনাফা করছে। অনেক জায়গায় বেআইনি ভাবে রোগী ভর্তি করারও অভিযোগ আসে আমাদের কাছে। এইসব দেখার কাজ সংগঠনের। তার বদলে অন্য কোন সংগঠন কি করছে এইসব আলোচনা আমার পছন্দ নয়। মানুষ কিভাবে উপযুক্ত স্বাস্থ্য পরিষেবা পাবে, পরিকঠামো কিভাবে আরো উন্নত করা যাবে, এইসব দেখার জন্যই সংগঠনের প্রয়োজন হয়। এই সংগঠন আশাকরি এইসমস্ত বিষয়ে নজর দেবে।’

অন্যদিকে বিধায়ক খোকন দাস বক্তব্য রাখতে গিয়ে শহরের নার্সিংহোম গুলির বেহাল পরিকাঠামো নিয়ে তাঁর ক্ষোভ উগরে দেন। এমনকি অবিলম্বে নার্সিংহোম গুলোর পরিকাঠামো ঠিক করার বিষয়ে যদি দ্রুত পদক্ষেপ না করা হয় তাহলে তিনি খোদ জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকের অফিস ঘেরাও করবেন বলেও এদিন হুঁশিয়ারি দেন। উল্লেখ্য এদিন মঞ্চে বিধায়ক বক্তব্য রাখার সময় উপস্থিত ছিলেন খোদ মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক জয়রাম হেমব্রম। বিধায়ক বলেন,’ কিছুদিন আগেই আমার শারীরিক অসুস্থতার কারণে চিকিৎসার প্রয়োজনে প্রায় একমাস বর্ধমানের বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে বেড়িয়েছি। কেউ কিছুই বলতে পারেনি। শেষে অন্য রাজ্যে গিয়ে চিকিৎসা করিয়ে আসতে হয়েছে। এখানে নবাবহাট থেকে স্টেশন কিংবা বিরহাটা থেকে উল্লাস ও খোষবাগান এলাকায় অগুনতি প্রাইভেট হাসপাতাল ও নার্সিংহোম চলছে।

See also  ট্রেনের সামনে ঝাঁপ দিয়ে আত্মঘাতী যুবক

কিন্তু আদৌ কি সাধারণ মানুষ সবজায়গায় স্বাস্থ্য পরিষেবার পরিকাঠামো পাচ্ছে? আমাদের কাছে অনেকেই ফোন করে নানান অভিযোগ জানায়। অনেকে সহযোগিতা করে, আবার অনেকের কাছে সেইটুকুও পাওয়া যায়না। উল্লাসের কাছে একটি বেসরকারি নার্সিংহোম হয়েছে, সে আবার রোগীদের থেকে লক্ষ লক্ষ টাকা চিকিৎসা বাবদ নেয় বলে শুনেছি। যেদিন সুযোগ পাবো সেদিন এই বিষয়ে কি করতে হয় বুঝিয়ে দেবো। আসলে মানুষকে সঠিক স্বাস্থ্য পরিষেবা দিয়ে অর্থ উপার্জনের পরিবর্তে কিছু নার্সিংহোম মালিক অন্যায় ভাবে রোগীদের থেকে টাকা রোজগার করছে। আমি এইসব নিয়ে এখন থেকে নজর রাখবো।’

এসোসিয়েশনের সভাপতি শেখ আলহাজউদ্দিন  বলেন,’ বর্ধমান শহরে অনেক বহু পুরোনো নার্সিংহোম রয়েছে। গত কয়েকবছরে বেশ কিছু নতুন নার্সিংহোম তৈরিও হয়েছে। আমরা সংগঠনের পক্ষ থেকে সঠিক স্বাস্থ্য পরিষেবা দেওয়ার ব্যাপারে প্রত্যেককে জানিয়ে দিয়েছি। বিক্ষিপ্ত দু একটি ঘটনা ছাড়া তেমন কোনো অভিযোগ বেসরকারি নার্সিংহোম কিংবা হাসপাতাল গুলোর বিরুদ্ধে ওঠেনি। স্বাস্থ্য দপ্তরের আধিকারিকেরা আমাদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখেন। তবে পরিকাঠামোগত ভাবে সব নার্সিংহোমের অবস্থা এক নয়। ধীরে ধীরে সবাই উন্নত করার চেষ্টা করছে। কিছু অসাধু নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষকে আমরা আমাদের সংগঠন থেকে বের করে দিয়েছি। কোন নার্সিংহোমের  ব্যাপারে ভবিষ্যতেও যদি কোনো রকম বেআইনি কাজের সঙ্গে যুক্ত থাকার প্রমাণ পাওয়া যায়, তাকেও আমরা সংগঠন থেকে বের করে দেবো।’

জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক জয়রাম হেমব্রম বলেন,’ বেসরকারি নার্সিংহোম কিংবা হাসপাতালের বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ আসলে আমার তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণ করি। কোনো নার্সিংহোমের লাইসেন্স দেওয়ার আগে দপ্তরের অফিসারেরা এনকয়েরি করে রিপোর্ট জমা দেয়। সবদিক খতিয়ে দেখে তবেই লাইসেন্স ইস্যু করা হয়। বর্ধমানের ক্ষেত্রে বহু নার্সিংহোম পুরোনো। কিছু নতুন হয়েছে। এটা ঠিক যে হয়তো সবাই সব নিয়ম মেনে নার্সিংহোম চালাচ্ছে না। তবে এটাও ঠিক যে সেদিক দিয়ে দেখতে গেলে ’ঠগ বাছতে গাঁ উজাড় হয়ে যেতে পারে।’ জনস্বাস্থ্য পরিষেবার মাপকাঠি বজায় রেখে প্রশাসনিক নজরদারির মধ্যেই এই ব্যবস্থা পরিচালনা করা হয়। তবে যেসমস্ত অভিযোগ সামনে আছে সেগুলো নিয়ে খুব শীঘ্রই আলোচনা করে পদক্ষেপ করা হবে।’ এদিন সম্মেলনে উপস্থিত হয়েছিলেন রাজ্যের প্রায় ১৬টি জেলার ১১২ জন নার্সিংহোম মালিক।

See also  সংগঠিত খুনের ঘটনার ১৩বছর পর ৯ জন অভিযুক্তের যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের নির্দেশ বর্ধমান আদালতের
শেয়ার করুন 🤝🏻

Join WhatsApp

Join Now
---Advertisement---