মঙ্গলকোট ব্লকের অজয় নদ জুড়ে বেআইনি বালি খাদের রমরমা, কোটি টাকা রাজস্ব লুটের অভিযোগ দায়ের জেলাশাসক ও পুলিশ সুপারের কাছে

Souris  Dey

Souris Dey

ফোকাস বেঙ্গল ডেস্ক,কাটোয়া: অজয় নদ জুড়ে সন্ধ্যা ৬ টা থেকে রাত ২ টা পর্যন্ত অবাধে বালি চুরি করে পাচার করছে বালি মাফিয়ারা। মঙ্গলবার এই মর্মে মঙ্গলকোট ব্লকের মাজিগ্রাম অঞ্চলের কোয়ারপুর, মালিয়ারা মৌজার কিছু বাসিন্দা পূর্ব বর্ধমান জেলার জেলাশাসক, পুলিশ সুপার সহ অতিরিক্ত জেলাশাসক (ভূমি ও ভূমি রাজস্ব আধিকারিক), এসডিএলআরও, কাটোয়া, এসডিও কাটোয়া, মঙ্গলকোট ভূমি রাজস্ব আধিকারিক ও মঙ্গলকোট থানার আইসি কে লিখিত অভিযোগ জানিয়েছেন।

বিজ্ঞাপন

 

অভিযোগকারী দের অভিযোগ, অজয় নদের বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে এক শ্রেণীর সমাজবিরোধী বেপরোয়াভাবে বালি লুট করেছে। কোয়ারপুর ও মালিয়ারা মৌজায় অজয় নদী থেকে অবৈধভাবে বালি উত্তোলন করছে কিছু সমাজবিরোধী। যদিও এই মৌজায় কোন সরকারি ইজারাদারই নেই। ফলে কোটি কোটি টাকার রাজস্ব ক্ষতির মুখে পড়ছে রাজ্য সরকার। প্রশাসনের কাছে অভিযোগকারীরা আবেদন জানিয়েছেন, যাতে ওই অবৈধ খাদানগুলি থেকে অবিলম্বে বালি উত্তোলন বন্ধ হয় তার যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করার। নাহলে তারা উপরমহল পর্যন্ত যেতে বাধ্য হবেন। অভিযোগকারীরা আরো জানিয়েছেন, ওই বালি খাদান যে সমস্ত সমাজবিরোধীরা নিয়ন্ত্রণ করছে, তারা আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে এলাকার বাসিন্দাদেরকে ভয় দেখাচ্ছে। এলাকাকে উত্তপ্ত করছে এবং বাসিন্দাদের হুমকি দিচ্ছে মারার।

স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশের অভিযোগ, কেবলমাত্র কোয়ারপুর বা মালিয়ারা মৌজাই নয়, মঙ্গলকোট ব্লকের লাকুড়িয়া অঞ্চলের সাগিরা থেকে মাঝিগ্রাম গ্রামপঞ্চায়েতের কেওড়সা পর্যন্ত অজয় নদের ধারে প্রায় ১০টি অবৈধ বালি ঘাট চলছে। প্রতিদিন এই ঘাটগুলো থেকে গড়ে প্রায় দেড়শোর ওপরে বালির গাড়ি বালি নিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছে। এদের বেশিরভাগ গাড়ি ওভারলোড বালি নিয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ। জানা গেছে, এই বালি চলে যাচ্ছে নতুনহাট থেকে কাটোয়া, বর্ধমান, নবদ্বীপ, কৃষ্ণনগর, কলকাতা, মালদা, ফারাক্কা, উত্তর দিনাজপুর রুট হয়ে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে। এমনকি রাজ্যের বাইরেও পাচার করা হচ্ছে এই বালি।

কোন বৈধ চালান ছাড়াই এই সমস্ত বালির গাড়ি অদৃশ্য জাদুবলে জেলার সীমানা পেরিয়ে পৌঁছে যাচ্ছে নানান প্রান্তে। আর এখানেই উঠে আসছে বালি মাফিয়াদের সঙ্গে প্রশাসনের একাংশের ‘সেটিং‘ তত্ত্ব। স্থানীয়দের একাংশের দাবি, মঙ্গলকোট ব্লকে যারা অবৈধ বালির কারবার চালাচ্ছে তারা আসলে ‘ কাঠের পুতুল ‘, এই বেআইনি বালি কারবারের সঙ্গে শাসকদলের কিছু প্রভাবশালী নেতৃত্ব, স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনের একাংশ ও এলাকার কিছু মাতব্বর ব্যক্তি জড়িত রয়েছে। তাদেরই প্রভাবে গোটা অজয় নদ জুড়ে দিনের পর দিন এইভাবে অবৈধ বালির কারবার চলতে থাকছে বলে অভিযোগ।

নদী থেকে বালি তোলার জন্য একদিকে যখন সরকারের ঘরে কোটি কোটি টাকা জমা করে টেন্ডার প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বৈধভাবে অনুমোদন পাওয়া বালি কারবারিরা প্রশাসনিক জটিলতায় ব্যবসা করতে পারছেন না, তখন এক শ্রেণীর বালি মাফিয়ারা নাকি স্থানীয় শাসক দলের নেতাদের, এমনকি পুলিশ প্রশাসনের সঙ্গে বেআইনি বোঝাপড়ার মাধ্যমে রমরমিয়ে অবৈধভাবে নদী থেকে বালি চুরি করে পাচার করার কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। আর এরফলে খোদ সরকারেরই কোটি কোটি টাকার রাজস্ব লুট হয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ।

যদিও প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট দপ্তরের আধিকারিক দের এই বিষয়ে একটাই বক্তব্য, অভিযোগ পেলেই তারা ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। এমনকি বালির অবৈধ কারবার বন্ধে নিয়মিত অভিযানও চালানো হচ্ছে। বেআইনি বালির গাড়ি থেকে জরিমানাও আদায় করা হচ্ছে। কিন্তু বাস্তব চিত্রটা সম্পূর্ন ভিন্ন বলেই দাবি ওয়াকিবহাল মহলের। সূত্রের খবর বেআইনিভাবে বালি পরিবহনের জন্য চারটে বালির গাড়ি ধরা পড়লেও চারশো গাড়ি বেরিয়ে যাচ্ছে এলাকা থেকে। স্থানীয়দের একটা বড় অংশের অভিযোগ, মঙ্গলকোট ব্লকের অজয় নদের বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে একাধিক অবৈধ বালি ঘাট থেকে প্রতিদিন শ’য়ে শ’য়ে বালি ভর্তি ট্রাক, ডাম্পার জেলার বিভিন্ন রাস্তা দিয়ে রাজ্যের নানান প্রান্তে পাচার করে দেওয়া হচ্ছে কোন জাদুবলে? প্রশাসন কেনো এই বেআইনি কারবার বন্ধ করতে পারছে না? তাদের অভিযোগ, সর্ষের মধ্যেই ভুত লুকিয়ে থাকলে কারুর কিছুই করার নেই।

মঙ্গলকোট ভূমি রাজস্ব দপ্তরের এক আধিকারিক জানিয়েছেন, অবৈধ বালি ঘাট গুলোতে নিয়মিত অভিযান চালানো হয়। অনিয়ম ধরা পড়লে আইনানুগ ব্যাবস্থা গ্রহন করা হয়। ইতিমধ্যেই ব্লকের তিনটি বেআইনি বালি খাদানের বিরুদ্ধে এফআইআর করা হয়েছে। এই ধরনের অভিযান ও পদক্ষেপ নিয়মিত নেওয়া হয়।

ক্রমশ…

আরো পড়ুন