অপহৃত, হারিয়ে যাওয়া শিশুদের উদ্ধারের কাজে চালু পোর্টাল ব্যবহারে জোর আরপিএফের

Souris  Dey

Souris Dey

সৌরীশ দে,বর্ধমান: অপহৃত, পাচার হয়ে যাওয়া কিংবা হারিয়ে যাওয়া শিশুদের উদ্ধার করে তাদের পরিজনদের হাতে তুলে দিতে ২০২২ সালের অক্টোবর মাসে ভারতীয় রেল ‘ট্র্যাক চাইল্ড পোর্টাল ৩.০’ চালু করেছিল। কিন্তু সেটির ব্যবহারিক প্রয়োগ সেইভাবে চালু ছিল না। এবার গোটা দেশ জুড়ে এই পোর্টালের কার্যকারিতা শুরু করা হল। রেল সূত্রে জানা গেছে, অনেক সময়ই রেল স্টেশন কিংবা সংলগ্ন এলাকা থেকে কোন শিশু কে উদ্ধারের পর তার বিবরণ পেতে আরপিএফ কে বেগ পেতে হয়। এই পোর্টাল পুরোদমে চালু হওয়ায় শিশুর ছবি সহ তথ্য এখন আপলোড করে দেওয়া যাবে। ফলে শিশুটির পরিবারের লোকজন দ্রুত তাদের সন্তান কে যেমন খুঁজে পেতে পারবেন, পাশাপাশি শিশুটির বিস্তারিত বিবরণ পেয়ে যাবে রেলওয়ে প্রটেকশন ফোর্সের অফিসারেরা।

বিজ্ঞাপন

রেলের নিরাপত্তা ও যাত্রী সুরক্ষায় নিয়োজিত রয়েছে রেল সুরক্ষা বাহিনী (Railway protection force)। রেলের অধীনে যেকোন জায়গায় যেকোন ধরনের অপরাধ রুখতে, নারী ও শিশু পাচার প্রতিরোধে, বন্য প্রাণী পাচার রোধে এবং নিঃস্ব শিশুদের পুনর্বাসনে আরপিএফ সর্বক্ষণ সজাগ ও সতর্ক রয়েছে। রেলওয়ে চত্বর থেকে উদ্ধার হওয়া, হারিয়ে যাওয়া, বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া, পালিয়ে আসা, নিখোঁজ, অপহৃত, পাচার হওয়া শিশুদের উদ্ধার করে তাদের পরিজনের কাছে পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে ভারতীয় রেল এই পোর্টাল চালু করে। এই ধরনের শিশুদের পরিবার এবং আত্মীয়দের সন্ধান করার জন্য ভারতীয় রেলওয়ের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে ( https://indianrailways.gov.in) এই পোর্টাল চালু করা হয়। যেটি সারা দেশের সমস্ত রেল স্টেশন ও রেল দপ্তরের সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে।

বর্ধমান আরপিএফ সূত্রে জানা গেছে, উদ্ধার হওয়া শিশুদের স্বার্থে ও কল্যাণে তাদের তথ্য ও বিশদ বিবরণ এখন নিয়মিত ‘ ট্র্যাক চাইল্ড পোর্টাল ৩.০’ – নামে এই ওয়েবসাইটে আপলোড করা হচ্ছে। ফলে হারিয়ে যাওয়া শিশুদের পরিজনরা যেমন তাদের সন্তানদের ফিরে পেতে সুবিধা পাবেন, অন্যদিকে উদ্ধার হওয়া শিশুদের আসল নাম, ঠিকানা জানতেও আরপিএফ এর সুবিধা হবে। জানা গেছে, ইতিমধ্যে চলতি বছরে ভিন রাজ্যের তিনটি শিশু কে বর্ধমান রেল স্টেশন ও সংলগ্ন এলাকা থেকে উদ্ধার করেছে আরপিএফ। প্রতিটি শিশুকেই বর্ধমান চাইল্ড লাইনের হেফাজতে হস্তান্তর করা হয়েছে। 

এদের মধ্যে ৭জানুয়ারি বর্ধমান শহরের গুডস শেড রোড এলাকায় লক্ষ্যহীনভাবে ও ভীত অবস্থায় একটি ৮বছরের ছেলেকে ঘুরে বেড়াতে দেখে স্থানীয় এক বাসিন্দা শিশুটিকে উদ্ধার করে বর্ধমান আরপিএফ পোস্টে নিয়ে আসে। সেখানে শিশুটি কে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ জানতে পারে তার বাড়ি ঝাড়খণ্ডের ধানবাদ জেলার মাঠকুটিয়া, পাঞ্জাবি মহল্লা এলাকায়। বাড়ি থেকে পালিয়ে আসে সে। এরপর যাবতীয় নিয়ম মেনে শিশুটিকে চাইল্ড লাইনের হাতে তুলে দেয় আরপিএফ।

ওপর একটি ঘটনায় জানা গেছে, মুম্বাইয়ের ধারাভি এলাকার বাড়ি থেকে বেরিয়ে হারিয়ে গিয়ে ট্রেনে উঠে বর্ধমান চলে আসে আরবাজ আনসারী নামে ১৪বছরের এক বালক। ৯জানুয়ারি থেকে মিসিং ছিল সে। ধারাভি পুলিশ বর্ধমান আরপিএফের সঙ্গে যোগাযোগ করে ছেলেটির ছবি দিয়ে খোঁজ করার জন্য বলে। গত ১৪জানুয়ারি বর্ধমান রেল স্টেশনে রুটিন অভিযান চালানোর সময় ৩নং প্ল্যাটফর্মে একটি ছেলেকে সন্দেহজনক ভাবে ঘুরতে দেখে আরপিএফের অফিসার ছেলেটিকে উদ্ধার করে নিয়ে আসে। পড়ে চাইল্ড লাইনের হাতে তুলে দেওয়া হয়।

আরো একটি শিশু কে জানুয়ারি মাসে উদ্ধার করে চাইল্ড লাইনের হাতে তুলে দিয়েছে বর্ধমান আরপিএফ। এক্ষেত্রে আরপিএফ সূত্রে জানা গেছে, ঝাড়খণ্ডের সরাইখেলা এলাকার বাসিন্দা অমিত করোয়ার নামে ৭বছরের শিশুটি বাড়িতে বাবা মায়ের সঙ্গে ঝগড়া করে বাড়ি থেকে পালিয়ে আসে। গত ২৫ জানুয়ারি বর্ধমান রেল স্টেশনের ৮নং প্ল্যাটফর্ম থেকে সন্দেহজনক ভাবে ঘোরাঘুরি করতে দেখে আরপিএফ শিশুটিকে উদ্ধার করে।

আরপিএফের বর্ধমান পোস্ট সূত্রে জানা গেছে, আরপিএফ সারাবছর ধরেই গোটা রেলওয়ে এলাকায় অপরাধ দমনে এবং পাচার রুখতে ২৪ঘণ্টা সজাগ থাকে। ফলে যে কোন ধরনের সন্দেহজনক কিছু নজরে এলেই দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়ে থাকে। আর এই কারণেই দেশের অন্যতম সুরক্ষিত রেল স্টেশনের মধ্যে এই রেল স্টেশন রয়েছে। ২০২২সালে মোট ১৮ টি শিশু কে বর্ধমান রেল স্টেশন এলাকা থেকে উদ্ধার করেছিল আরপিএফ। তাদের মধ্যে ১২টি বালক এবং ৬টি মেয়ে ছিল।

আরো পড়ুন