ক্রাইম

বড়শুল – বাড়িতে ৫বছরের সন্তান, ট্রেন দুর্ঘটনায় স্বামী কে হারিয়ে নিথর স্ত্রী

ফোকাস বেঙ্গল ডেস্ক,পূর্ব বর্ধমান: উড়িষ্যার বালেশ্বরে ভয়াবহ ট্রেন দুর্ঘটনার পর সময় যত এগোচ্ছে ততই লাফিয়ে বাড়ছে মৃত-আহতের সংখ্যা। চারিদিকে শুধু কান্না, মৃত্যু, হাহাকার। উদ্ধারকারী দলের সাথেই স্থানীয় মানুষও ঝাঁপিয়ে পড়েছেন আর্ত, জখম যাত্রীদের সহায়তায়। শেষ পাওয়া খবর অনুযায়ী ২৪০ জনের মৃত্যু হয়েছে, আহত ৩০০ রও অধিক। রক্ত দিয়ে মরণাপন্ন মানুষগুলোকে বাঁচাতে স্বেচ্ছায় লাইন দিয়েছেন অজস্র স্থানীয় মানুষ।

ওই অভিশপ্ত ট্রেনেই ছিলেন পূর্ব বর্ধমান জেলার বড়শুল গ্রামের সফিক কাজী (২৫)। পেটের তাগিদে রাজমিস্ত্রির জোগাড়ের কাজে যাচ্ছিলেন তার এক সঙ্গীকে নিয়ে ওই ট্রেনে চেপেই। গতকাল বিকেলেও শেষ ভিডিও কলে কথা হয়েছিল স্ত্রীর সঙ্গে, তারপর সবশেষ। জানা গেছে মাথায় আঘাত লেগেই মৃত্যু হয়েছে তার। বাড়িতে পাঁচ বছরের একটি সন্তান রয়েছে। কি হবে ওই সন্তানের ভবিষ্যৎ? কেইবা বড় করবে তাকে? বাকরুদ্ধ স্ত্রীর এইসব প্রশ্নের সামনে কার্যত নিরুত্তর পরিবার ও পাড়া প্রতিবেশীরাও।

যদিও যাঁরা দুর্ঘটনায় মারা গিয়েছেন তাঁদের পরিবারকে ১০ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণের ঘোষণা করেছেন রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব। শনিবার দেহ আনার জন্য বাড়ি থেকে রওনা দিয়েছেন শফিকের বাড়ির লোকজন। কিন্তু ঠিক কীভাবে ঘটল এই ভয়াবহ দুর্ঘটনা? রেল সূত্রে পাওয়া শেষ খবর, প্রথমে হাওড়া – যশবন্তপুর এক্সপ্রেসে ধাক্কা মারে গতিতে যাওয়া শালিমার-চেন্নাই করমণ্ডল এক্সপ্রেস। দুই ট্রেনের সংঘর্ষের পরে করমণ্ডলের একাধিক কামরা পাশের লাইনে দাঁড়ানো মালগাড়ির ওপর গিয়ে পড়ে। কার্যত দেশলাইয়ের বাক্সের মতো উল্টে যায় একের পর এক ১৫ টি কামরা। মালগাড়ির ওপরে উঠে যায় করমণ্ডলের ইঞ্জিন। বালেশ্বরের বাহানাগা বাজার স্টেশনের কাছে ঘটে দুর্ঘটনা টি। প্রবল আওয়াজ শুনে ছুটে আসেন স্থানীয়রা। তাঁরাই প্রথমে উদ্ধারকাজে হাত লাগান। পরে একে একে সেখানে পৌঁছয় বিভিন্ন উদ্ধারকারী দল। আহতদের উদ্ধার করে পাঠানো শুরু হয় বিভিন্ন হাসপাতালে।

চারিদিকে রক্ত, মৃত্যু, হাহাকার, শয়ে শয়ে মৃত্যুর আশঙ্কায় থাকা প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেন, ট্রেনযাত্রীদের গ্যাস কাটারের সাহায্যে বিভিন্ন ট্রেনের কামরা কেটে বের করে আনা হয় আহতদের। প্রত্যক্ষদর্শীদের বক্তব্য, কারোর মাথা ফেটেছে তো কারোর হাত কেটে ঝুলছে, আবার খানিক এগোলেই দেখা গিয়েছে মৃতদেহের সারি। সবমিলিয়ে মৃত্যুমিছিলের মাঝে যেন জলজ্ব্যান্ত নরক হয়ে উঠেছিল গোটা এলাকা। আর কামরাগুলো থেকে শুধু ভেসে আসছে আর্তদের আর্তনাদ। প্রাথমিকভাবে রেল কর্মীদের চূড়ান্ত গাফিলতির ফলেই এই দুর্ঘটনা বলে মনে করছে বিশেষজ্ঞরা, এছড়াও LHB কামরা ছিল না করমণ্ডল এক্সপ্রেসের! ইন্ডিয়ান রেলওয়ে উচ্চপর্যায়ের তদন্ত শুরু করেছে বলে জানা গিয়েছে।